আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি প্রতিনিধি:৬১ বছরে মাত্র ৭ টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)। সমাবর্তনের অপেক্ষায় আছে সাড়ে ৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমার্বতন না পাওয়া শিক্ষার্থীরা। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাবর্তন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে পাশকৃত শিক্ষার্থীদেরকে ৭ম সমাবর্তনে অন্তর্ভূক্ত না করায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থীদের মাঝে। সর্বশেষ সমাবর্তনে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্ত না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট হওয়া সত্ত্বেও তারা সমাবর্তন পাননি। এর পরেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরো নতুন ৭ টি ব্যাচ বের হলেও তাঁদের কেউ সমাবর্তন পাননি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৬১ বছরে বাকৃবিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৭ বার। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যান্সেলর ছিলেন আব্দুল মোনেম খানের নেতৃত্বে ১৯৬৮ সালের ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় বাকৃবির প্রথম সমাবর্তন। এর পর আবু সাঈদ চৌধুরীর নের্তৃত্বে ২য় সমাবর্তন হয় ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বেগম খালেদা জিয়ার নের্তৃত্বে ৩য় সমাবর্তন হয় ১৯৯৪ সালের ৫ জুন, শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে ৪র্থ সমাবর্তন হয় ১৯৯৭ সালের ২০ ডিসেম্বর, ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নের্তৃত্বে ৫ম সমাবর্তন হয় ২০০৩ সালের ০৫ ফেব্রুয়ারি, প্রয়াত চ্যান্সেলর মো.জিল্লুর রহমানের নের্তৃত্বে ২০১১ সালের ৮ মার্চ এবং সর্বশেষ সমাবর্তন হয় ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ৭ম সমাবর্তন।
কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহেদ হোসেন বলেন, 'দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবছরই সমাবর্তনের আয়োজন করে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর তো দূরের কথা বেশ কয়েক বছরেও একবার সমাবর্তন হয় না। দীর্ঘ ৬১ বছরের পথচলায় বাকৃবিতে মাত্র ৭ বার সমাবর্তন হয়েছে। এই ব্যর্থতা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। যথাযথ উদ্যোগ আর সদিচ্ছা থাকলে প্রতিবছরই সমাবর্তন আয়োজন করতে পারত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।'
ভেটেরিনারি অনুষদের ১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিমেল রায় বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবন শেষে সকল ছাত্র ছাত্রীদের একটি কাঙ্খিত অনুষ্ঠানের নাম সমাবর্তন। ২০১২ সালে ভর্তি হবার পর শুধুমাত্র একবার ২০১৬ সালে এটা হতে দেখেছিলাম। অন্যান্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন আয়োজন করলেও আমরা বারবার দেখেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব। বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হয়ে এটা আমাদের জন্য যেমনি কষ্টের তেমনি লজ্জার। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন অতি দ্রুত সমাবর্তন না পাওয়া সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সমাবর্তন আয়োজন করবে এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
সাজেদুল হক শৈবাল নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখের বিষয় ২০১৫ সালে অনার্স শেষ হওয়া ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্ররা যখন তৎকালীন উপাচার্য মহাদয়কে দাবি জানালাম আমাদের ২০১৬ সালের সমাবর্তনে যোগ করুন, তিনি আশ্বাস দিলেন ‘না বাবারা এটার রেজিস্ট্রেশন আগেই হয়ে গেছে, তোমরা ঝামেলা করো না, অতিসত্ত্বর তোমাদের জন্য কনভোকেশন আয়োজন করবো। এরপর গুণে গুণে ৭ বছর অতিবাহিত হলো, ক্যাম্পাসে বড় বড় নানা অনুষ্ঠান হলো কিন্তু সমাবর্তন করার সাহস বাকৃবি প্রশাসন দেখালেন না।’
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে একাত্বতা জানিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতার্কমীরাও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কৃষিবিদ খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে সমাবর্তন। বাকৃবির মতো একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে সনদপত্র গ্রহণ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের কাছে দাবী জানাচ্ছি অতিদ্রুত অষ্টম সমাবর্তন আয়োজন করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সমাবর্তন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করার পরও করোনার কারণে আমরা এটা নিয়ে আর এগোতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের এ দাবি দ্রুতই বাস্তবায়ন করা হবে।'