আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি প্রতিনিধি:বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত প্রায় সমানে সমান। কিন্তু ছাত্রদের জন্য জন্য ৯ টি হল থাকলেও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে মাত্র ৪ টি হল। প্রতিবছরই ছাত্রী ভর্তির পরিমাণ বাড়লেও নতুন করে হল স্থাপন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রীদের জন্য নতুন হল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেও তার বাস্তবায়ন না হওয়ায় সিট সংকট বর্তমানে চরমে পৌঁছেছে। গণরুমে থাকা ছাত্রীরা বলছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের একটাই দাবি, সেটা হলো একটি সিট।
ছাত্রীদের হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য গণরুমের ব্যবস্থা চালু আছে। এসব কক্ষে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে থাকেন। তাপসী রাবেয়া হলে ৪টা গণরুম তার মধ্যে ২টা ফাঁকা আর ২টাতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা থাকেন একক বিছানায়। যার প্রতিটি রুমে সিট ৩২ টি। আর ৩২ জনের রুমে ফ্যান রয়েছে মাত্র ৪ টি ও ওয়াশরুম, বাথরুম টয়লেট রয়েছে মাত্র ২ টি করে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৩টি গণরুম এ একটিতে ৮০ জন আর বাকি ২টি তে ২৫ জনের মত করে থাকেন। বেগম রোকেয়া হলে মোট গণরুম ১০ টি। এ হলের মেইন বিল্ডিং এ গণরুম ৬ টিতে সিট প্রায় ২০০ টি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ৩ টা করে ৬ টা ওয়াশরুম রয়েছে। নিচ তলায় গণরুমের জন্য আলাদা ওয়াশরুম নাই। নিচ তলায় আলো বাতাসের অভাব রয়েছে। হলের বর্ধিত অংশে (এনেক্স) গণরুম ৪ টি, ৪ টা রুমে সিট ১০০টি। এ অংশটি পুরানো হওয়ায় রুম গুলো পুরাতন আর পোকামাকড়ের উপদ্রব আছে । বিশেষ করে ইদুর, লেমুর ওয়াশরুম সমস্যা, পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা নাই। রয়েছে সাপ, বেজি, শেয়াল এর অত্যাচার।
সাম্প্রতিক সময়ে তুলনামূলকভাবে ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাত্রী হলগুলোতে আবাসন সংকট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। আবাসন সমস্যা নিরসনের দাবিতে প্রায়শই ছাত্রীরা আন্দোলন করে থাকেন। এই সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শাখা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে স্নাতকে ছাত্র ৫৮৯ জন ও ছাত্রী ভর্তি হন ৫৪৩ জন, ২০২০ সালে ছাত্র ৫৮৭ জন ও ছাত্রী ভর্তি হন ৫৪৪ জন, ২০১৯ সালে ছাত্র ভর্তি ৬৮১ জন ও ছাত্রী ভর্তি হন ৫৬৫। গত কয়েক বছর ধরেই ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তি প্রায় সমানে সমানে চলে এসেছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ছাত্রের সংখ্যা ৩২২০ জন ও ছাত্রীর সংখ্যা ২৯৭০ জন। অর্থাৎ বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৪৮ শতাংশই ছাত্রী। শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ১৩ হলের মধ্যে ছাত্রীদের জন্য মাত্র ৪টি হল রয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও হলের সিট সংখ্যা বাড়েনি। এবছর ভর্তি হওয়া নতুন ছাত্রীরা থাকছেন হলের ডাইনিং, গ্রন্থাগার এমনকি হলের নামাজ কক্ষে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষেধক শাখার বেশ কয়েকটি কক্ষেও রাখা হয়েছে তাদের। এখানে প্রায় ২০০ এর মত ছাত্রী অবস্থান করছেন। নতুন হল নিমার্ণ হলে তাদেরকে নতুন হলে শিফট করানো হবে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এটিকে শেখ হাসিনা হল নাম দেওয়া হয়েছে।
বেগম রোকেয়া হলের আবাসিক দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, হলের গণরুমে গাদাগাদি করে বসবাস করতে হচ্ছে। এতে কোনো রকমে রাত কাটানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় পড়াশুনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী জানান, আবাসন-সংকটের কারণে একক আসন পেতে প্রায় ২-৩ বছর চলে যায়। গণরুমে থাকলে স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা তৈরি হয়। প্রয়োজন মতো শৌচাগারও না থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে অবস্থান করা এক ছাত্রী বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকায় আমাদের জন্য ডাইনিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। প্রতি বেলায়ই বাহিরের খাবার হোটেল থেকে খাবার আনতে হয়। পাশাপাশি খাবার পানি, ওয়াশরুম ও সীমিত জায়গায় গাদাগাদি করে থাকার ফলে পরিবেশ নষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হচ্ছে আমাদের। এছাড়া রোগীদের আসা-যাওয়া এবং চিকিৎসাকেন্দ্রের নির্দিষ্ট সীমারেখা না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ছাত্রীদের আবাসন-সংকটের পাশাপাশি ছাত্রদেরও রয়েছে একই সমস্যা। বছর বছর ভর্তিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও হলের সংখ্যা বাড়ায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ১৯৯৮ সালের পর ছাত্রদের জন্যেও কোনো নতুন হল নির্মাণ করা হয়নি।
ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, ছাত্রীহলের আবাসন সংকট সমাধানের জন্য সুলতানা রাজিয়া হলের একপাশের ব্লক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ছাত্র হলে সংকট খুব কম হলেও ছাত্রীদের হলে এ সংকট অনেক বেশি। সংকট নিরসনের জন্য আমরা কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনের ওপরে আমরা ছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। সেখানে এখন দু'শ ছাত্রী থাকছেন। এ ছাড়া ছাত্রীদের আরও নতুন দুটি হলের কাজ দ্রুতই শুরু হবে। ওই দুটি হলে ২ হাজার ৪০০ আসন থাকবে। এতে ছাত্রীদের শতভাগ আবাসন নিশ্চিত হবে বলে জানান তিনি।