এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:কুড়িগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও আন্দোলনের ফসল কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন পাস হয়। এ দিনটিকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. এ.কে.এম. জাকির হোসেন।
শুভেচ্ছা বার্তায় উপাচার্য প্রফেসর ড.একেএম জাকির হোসেন বলেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এখনো বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস হচ্ছে কৃষি ৷জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার মূল ভিত্তি হিসেবে কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কৃষিতে সবুজ বিপ্লব ঘটানোর মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন ৷ তিনি কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, বিজ্ঞান ভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন ও সফল বিপণনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন।
উপাচার্য প্রফেসর ড.একেএম জাকির হোসেন বলেন, জাতির জনকের কৃষি দর্শনের গুরুত্ব অনুধাবন করে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা উত্তরবঙ্গের নদীবেষ্টিত প্রকৃতি অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি, অতি প্রাচীন জনপদ কুড়িগ্রামের কৃষির উন্নয়ন তথা কৃষি বিজ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ গ্রহণ করেন৷ তারই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠেয় এক জনসভায় তাঁর নিজস্ব চিন্তা থেকে মঙ্গা পীড়িত কুড়িগ্রাম জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন।
শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, ২০২০ সনের ২১ ডিসেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০ এর খসড়া অনুমোদন করা হয় এবং পরবর্তীতে মহান জাতীয় সংসদে বিলটির ওপর আলোচনা শেষে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রাগ্রসর বিশ্বের সাথে সংগতি রক্ষা ও সমতা অর্জন এবং জাতীয় পর্যায়ে কৃষি বিজ্ঞানে উন্নত শিক্ষা দানের পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রচলিত অন্যান্য বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা সুযোগ সৃষ্টি এবং নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ দেশে কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বিগত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে "কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়' নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনকল্পে আইন পাস হয়।
বার্তায় তিনি আরো বলেন, উচ্চতর কৃষি শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক এবং স্লাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অগ্রগতিকল্পে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ইনকিউবেটরের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে কৃষি খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করা এবং পার্শ্ববর্তী জেলা গাইবান্ধা,লালমনিরহাট ও নীলফামারী এলাকার জমির জন্য গবেষণা ও কন্টাক্ট ফার্মিং এর লক্ষ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পশ্চাৎপদ কুড়িগ্রাম জেলার মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে দেয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন, "মনে রাখতে হবে, কৃষি আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এসে গেছে। দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। এই দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য নিজের দেশকেও যেমন বাঁচাতে হবে, পাশাপাশি অন্যান্য দেশকেও সাহায্য করতে হবে৷ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ সাহায্য চেয়েছে এবং আমরা তাদের জন্য খাদ্যশস্যও পাঠিয়েছি। সেজন্য এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে ।" ইতোমধ্যেই সরকার "সমস্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যাক্ত্রিকীকরণ" শীর্ষক নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। উক্ত প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এবং ব্যবসায়িকভাবে অধিকতর লাভজনক ও বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকে টেকসই করে তোলা সম্ভব হবে।
উপাচার্য বলেন, ফসলের রোগ নির্ণয়, জাতভিত্তিক পুষ্টি চাহিদা ও পুষ্টি আহরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ভূমির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহন এবং পরিবেশে ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্তকরণ ও শোধনসহ ন্যানো প্রযুক্তির সার, বালাইনাশক উদ্ভাবন ও ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক কৃষির প্রয়োগই সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারে৷ সেই লক্ষ্যে শিক্ষার গুণগত মান ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ "মাস্টার প্লান' প্রণয়ন করা হয়েছে।
মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার ক্ষেত্র জোরদার করার জন্য "ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া' এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভালো গবেষণা করে যাতে সারা বিশ্বে কৃষি উন্নয়নে কাজ করতে পারেন, কৃষকদের সম্পৃক্ত করে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগুলোকে কৃষিশিক্ষার সাথে সংযুক্ত করে বিষয় নির্ধারনের মাধ্যমে এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট আ্যান্ড বিজনেস কমিউনিকেশন, রিনিউআ্যাবল এনার্জি আ্যান্ড গ্বিন টেকনোলজি, জিওইনফরমেটিকস আ্যান্ড ন্যানোটেকনোলজি, ফুড সেফটিসহ বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের কৃষির রূপান্তরগুলো শিক্ষা দেওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের গোড়া থেকেই এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি আ্যাটাচমেন্ট, ফারমার ফিল্ড আ্যাটাচমেন্ট, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ও ইন্টার্নশিপে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে সকলের সদয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
আমরা একান্তভাবে বিশ্বাস করি নব প্রতিষ্ঠিত এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে কৃষি ক্ষেত্রে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুতৃপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমান সরকারে সূচিত "ভিশন-২০২১-৪১' সফল বাস্তবায়নসহ কুড়িগ্রাম জেলার কৃষকদের কৃষি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় শিক্ষা, জ্ঞান ও তথ্য দিয়ে সচেতন করে গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ৷
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এই পরমলগ্নে কুড়িগ্রাম জেলার সকল স্তরের জনগণ ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন । বাংলাদেশ চিরজীবী হোক ৷ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ৷