বাকৃবি প্রতিনিধি:বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র হেলথ কেয়ার সেন্টারে এক ছাত্রীকে ভুল চিকিৎসা দেয়াকে কেন্দ্র করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রীরা। সোমবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলের দিকে বেগম রোকেয়া হলে আবাসিক ছাত্রী জান্নাতুল নাঈম ঐশী হেলথ কেয়ারে চিকিৎসা নিতে গেলে ওই ঘটনাটি ঘটে। পরবর্তীতে অবস্থানরত ছাত্রীরা জরুরী সেবা ব্যতিত সকল ধরনের সেবা বন্ধ করে দেন এবং ওই সময়ে কর্মরত ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হেলথ কেয়ার থেকে বের করে রুম তালাবদ্ধ করেন। এসময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১৪ দফা দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঐশীর পেটে ব্যথা উঠলে হেলথ কেয়ারে চিকিৎসা নিতে যায়। পরে সেখানে দায়িত্বরত ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ তৎক্ষণাৎ ইনজেকশন দিয়ে ব্যাথা প্রশমনের পরামর্শ দেন। সেখানে কর্মরত কম্পাউন্ডার মো. মোখলেসুর রহমান ইনজেকশন দিতে একাধিকবার চেষ্টা করেও রক্তের শিরা শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। তৃতীয়বারের মতো ব্যর্থ হলে তার হাত ফুলে যায় এবং রক্ত বের হয়। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। তৎক্ষনাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের এম্বুলেন্স না পাওয়া গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম বিষয়টি জানতে পেরে নিজের গাড়িতে করে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে মেডিকেলে নিয়ে যান।
এ ঘটনা ঘটার ঘন্টাখানিকের মধ্যে প্রায় শতাধিক ছাত্রী নিজ নিজ হল থেকে বের হয়ে হেলথ কেয়ারের সামনে অবস্থান নেয় এবং অবস্থান কর্মসূচী চালায়। এসময় ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, হেলথ কেয়ার সেন্টারটি শুধু নামেই আছে। কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। কিছু হলেই ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়। এখানে শুধু নাপা আর প্যারাসিটামলের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রায় ৭ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীদের জন্যে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স এখন সক্রিয়।
এসময় প্রায় ঘন্টাখানিক অবস্থান কর্মসূচী চালায় ওই ছাত্রীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির তিনজন সহকারি প্রক্টর এসে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন এবং ছাত্রীদের নিজ নিজ হলে চলে যেতে বলেন। এসময় ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস পেয়ে অবস্থান কর্মসূচী প্রত্যাহার করেন।
এ সময় ছাত্রীরা লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে জড়িত কম্পাউন্ডারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে বহিষ্কার এবং তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে ১৪ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। পরে রাতে ওই দাবিগুলো তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত আকারে জমা দেন ছাত্রী নেতৃবৃন্দরা।
অসুস্থ ছাত্রী ঐশীর সম্পর্কে সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আজহারুল ইসলাম জানান, আমি জানা মাত্রই ঘটনাস্থলে যাই। পরে ওই শিক্ষার্থীকে আমার গাড়িতে করে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে আসি। এখানে চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় ও এপেন্ডিক্সের অপারেশন করতে বলেন। পরে রাতের মধ্যে ওই ছাত্রীকে গাড়ি ভাড়া করে তার বাসায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
বাকৃবি হেলথ কেয়ার সেন্টারে দায়িত্বরত ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই ছাত্রী হেলথ কেয়ারে আসলে আমি এপেনডিক্সের ব্যাথা আন্দাজ করতে পেরে ময়মনসিংহ মেডিকেলে রেফার করে দেই। কিন্তু ওই ছাত্রী ও তার বান্ধবীদের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয় যে এখানেই কোনো ব্যাথানাশক ইনজেকশন দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার। এসময় কর্মরত কম্পাউন্ডার ইনজেকশন দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। পরে ওই ছাত্রীকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।