সমাবর্তনে বাকৃবির শিক্ষার্থীদের আনন্দ অনুভূতি

আজ ১২ ফ্রেব্রুয়ারি দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ৮ম  সমাবর্তন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত  স্নাতক স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার গ্রাজুয়েটকে একসাথে নিয়ে এটি হতে যাচ্ছে বাকৃবির ইতিহাসে বৃহৎ একটি সমাবর্তন। এ সমাবর্তন ঘিরে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন নানা অনুভূতির কথা । আর সেগুলো তুলে ধরেছেন আবুল বাশার মিরাজ

প্রাণের মানুষদের সাথে উচ্ছ্বাসে আনন্দে মিলবো এক প্রাণে
২০১০ সাল, মেডিকেল এডমিশন হলো না। জাবিতে গেলাম, বোটানিতে টিকলাম। তারপর ঢাবি তে পরীক্ষা দিলাম। ক আর ঘ দুই ইউনিটে পরীক্ষা দিলাম, দুটোই ক্যাম্পাসের বাইরে, পুরাণ ঢাকাতে। বিটিভির পর্দায় কার্জন হল দেখেই যতটুকুন চিনি ঢাবি কে আর কি! ক ইউনিটে ২২৩১ সিরিয়াল। ঘ ইউনিটেও পাশ। তারপর রাবি তে দিলাম, ওয়েটিং। এরপর বাকৃবিতে গেলাম পরীক্ষা দিতে। ক্যাম্পাস দেখেই প্রথম দেখায় প্রেমের মতন এই ক্যাম্পাস মনে ধরে গেল। টিকে গেলাম বাকৃবিতে। একই তারিখে ঢাবির ক ইউনিটে সয়েল, ওয়াটার এন্ড এনভায়রোনমেন্ট এর ভাইভা আর বাকৃবিতে ডিভিএম এ ভর্তি। মামাতো বড় ভাই বাকৃবিয়ান হওয়াও প্রকৃতিকন্যা বাকৃবিতে ভর্তি হলাম। ২০১১ এর ৪ঠা জানুয়ারি শুরু হলো মানুষের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন থেকে প্রাণি চিকিৎসক হওয়ার পথচলার। তখন পর্যন্ত গরুর ডাক্তার বলতে গ্রামের হাসান চাচাকেই চিনতাম, বুঝতাম। ২/৩ মাসের কোর্স করেই গরুর ডাক্তার আর কি ৫ বছরের দীর্ঘ পড়াশুনা, ইর্ন্টানি, দেশের বাইরে ট্রেনিং এত কিছু লাগে, নতুন দুনিয়া যেন এক। ডিভিএম ডিগ্রি অর্জন, সার্জারিতে মাস্টার্স, ফটোগ্রাফি, বিশাল এক বন্ধু সার্কেল। ভার্সিটি যেখানে ৫ বছরে শেষ করে মানুষ ভার্সিটি ছাড়ে, সেখানে ১০ বছর যায়, ভার্সিটি আর ছাড়া হয় না। করোনার ছোবলে পড়ে কোনো আনুষ্টানিকতা ছাড়াই ভার্সিটি ছাড়লাম। আমি ছাড়লেও ভার্সিটি আমারে ছাড়লো না।করোনার শেষে বিয়ে করলাম। বৌ এর অছিলায় মাতৃসম বাকৃবিতে প্রতি মাসে ই আসা যাওয়া চলে। এবার বাকৃবিতে যাওয়াটা অন্যরকম এক প্রাপ্তির। এক ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে এসে আজকে যে নামের আগে ডাক্তার যোগ হয়েছে, অবলা প্রাণিদের একজন সেবক হতে পেরেছি, নিজের একটা আইডেন্টিটি পেয়েছি, কৃষিবিদ নামক একটা অলংকার ধারণ করেছি, তার আনুষ্ঠানিক এক প্রাপ্তির আয়োজন করেছে প্রিয় মাতৃসম বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাণের মানুষদের সাথে উচ্ছ্বাসে আনন্দে মিলবো এক প্রাণে।
-ডা. রাফসান জানি
ভেটেরিনারি অনুষদ;  সেশন: ২০১০-১১

স্মরণের এই বালুকাবেলায় হৃদয় চিহ্ন আঁকি
ছোটবেলায় পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বাবা প্রকৃতিকণ্যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প করত এবং সেই সাথে আমাদের দুই ভাইকে দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর ইচ্ছা পোষন করত। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় তখনি আমাদের দুই ভাই এর ভাগ্য লিখে দিয়েছেন। আমার স্বল্প শিক্ষিত বাবা মায়ের দুই ছেলেই আজ কৃষিবিদ। ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় ষড়ঋতুর লীলাভুমি, প্রকৃতিকণ্যা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। হংসের মত ভেসে বেড়িয়েছি ব্রহ্মপুত্র, দাপিয়ে বেড়িয়েছি প্রাণের স্পন্দন ক্যাম্পাসের সর্বত্র। চলার পথে সংগী হয়েছিলো শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ, আমার আত্মার বন্ধন বন্ধুরা, অসংখ্য অগ্রজ এবং অনুজ। সমাবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটলেও, আমৃত্যু আত্মার সম্পর্ক থেকে যাবে। প্রাণের ১২৫০ একরে আবারো বন্ধুদের সাথে নিয়ে ফিরে যেতে চাই স্মৃতির বালুকাবেলায়। ছবির ক্যানভাসে আবদ্ধ হতে চাই প্রিয় মানুষের সাথে। প্রিয় ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে সমাবর্তনের টুপি বাবা-মাকে পরিয়ে দিয়ে তাদের পরিশ্রম এবং আকুন্ঠ সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।
-দ্বীপ জয় সাহা
পশুপালন অনুষদ; সেশনঃ ২০১১-১২

আবেগ ও ভালোবাসার নাম বাকৃবি
আমরা জানি, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সমাবর্তন একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। আমাদের কাছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আবেগের, ভালোবাসার অনুপম এক স্থান। তাই সমাবর্তনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই প্রহর গুনতে শুরু করেছি কখন আসবে অনুভূতিতে মিশে থাকা সেই দিনটি। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার গ্রাজুয়েটকে একসঙ্গে নিয়ে হতে যাচ্ছে অন্যতম বৃহৎ সমাবর্তন। সঙ্গত কারণেই দিনটি ঘিরে আমাদের মধ্যে এক অন্য রকম আবেগ, ভালো লাগা কাজ করছে। সমাবর্তনে মহামান্য আচার্যের অনুপস্থিতি গ্রাজুয়েটদের মনোবেদনার কারণ হলেও দীর্ঘসময় পর চিরচেনপাসে একসাথে মিলিত হবার এই সুযোগ অন্যরকম এক প্রাপ্তি। সমাবর্তন আয়োজন এক বিরাট মহাযজ্ঞ, ইতোমধ্যে কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি আমরা লক্ষ্য করেছি। সমাবর্তনসংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে নিবেদন থাকবে আমাদের মূল সনদ যেন নির্ভুল হয়। একই সাথে সমাবর্তনের আগের দিন থেকে সমাবর্তনের পরদিন পর্যন্ত গ্রাজুয়েটদের আবাসনব্যবস্থা, ক্ষেত্রবিশেষে আপ্যায়ন এবং যাতায়াতব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে এই সমাবর্তন আয়োজন সার্থক হোক এবং আয়োজনের  এই ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় থাকুক। জয়তু কৃষিবিদ, জয়তু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
মোঃ জুবায়ের ইবনে কামাল
কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ; সেশন: ২০১৩-১৪

কৃষির উন্নয়নে নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতে চাই
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়তে পেরে আমার প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এ কাটানো প্রতিটা সময় ছিল আমার কাছে অনেক আনন্দমধুর। বিশেষ করে ন্যাশনাল স্টার্টআপ ক্যাম্পে কিংবা উদ্ভাবকের খোঁজে রিয়েলিটি শোতে বিলিম্বি চা উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমার প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয় কে রিপ্রেজেন্ট করতে পেরে আমি গর্বিত। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে সবসময় আমার স্কিল বাড়াতে সবসময় সুযোগ করে দিয়েছে। সাংস্কৃতিক চর্চা,প্রেজেন্টেশন স্কিল, কিংবা গবেষণার হাতেখড়ি আমার প্রাণের  বিশ্ববিদ্যালয় এর মাধ্যমে হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ আমি পদচিহ্ন, হাসিমুখ এর সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলাম। আজ আমাদের সপ্নের সেই সমাবর্তনের মাধ্যমে আমাদের অর্জনগুলোর পূর্নতা পেয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাজুয়েট হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছি। আমি কৃষি অনুষদ থেকে স্নাতক এবং কীটতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেছি। আমার ইচ্ছা আমার পুঁথিগত বিদ্যাকে কাজে লাগিয়ে আমি প্রান্তিক কৃষকের, কৃষির উন্নয়নে নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতে চাই। একজন গর্বিত কৃষিবিদ হিসবে দেশের কল্যানে, কৃষকের কল্যাণে কাজ করতে চাই।
-আব্দুল্লাহ আল মাসুম
কৃষি অনুষদ; সেশন: ২০১৪-১৫