কৃষিবিদ খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ:সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে একটি বীর জাতির বীরত্বগাথার ইতিহাসকে ম্লান করা হলো। বাঙালি জাতিসত্ত্বায় কালিমা লেপন করা হলো। বিশ্বকে এমনভাবে বিস্মিত করা হলো, যেন বাংলাদেশকেই হত্যা করা হলো। কারণ বিশ্ববাসীর কাছে বঙ্গবন্ধুই ছিলেন বাংলাদেশ। নিজের দেশের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল সীমাহীন ভালোবাসা। প্রাণের চেয়েও তিনি বেশি ভালোবাসতেন দেশের মানুষকে। একদিকে দেশের মানুষই ছিল তার শক্তি ও প্রেরণার উৎস; অন্যদিকে তার বড় দুর্বলতার দিকটিও ছিল দেশের মানুষের প্রতি এই সীমাহীন ভালোবাসা।
১৯৭২ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার সবচেয়ে বড় শক্তিটি কী? বঙ্গবন্ধু উত্তরে বলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।’ এরপরই ফ্রস্ট তাকে প্রশ্ন করেন- ‘আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কী?’ উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি তাদের খুব বেশি ভালোবাসি।’ শেখ মুজিবুর রহমানেরও কখনো মৃত্যু হওয়ার নয়। তিনি জীবিত আছেন কোটি কোটি বিশ্ববাসীর হ্রদয়ে এবং বিশ্বাসঘাতকদের উত্তরসূরি আর তাদের কিছু অনুসারী ছাড়া প্রায় সব বাঙালির হৃদয়ে। খ্যাতিমান সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় সবার প্রাণের কথা লিখলেন অনবদ্য চয়নে, ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে রাজনীতিবিদ হিসেবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত প্রচণ্ড আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে প্রথম রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। যেমন পিতা, তেমন কন্যা। জননেত্রী তাঁর অসামান্য ত্যাগ ও নেতৃত্বে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে, আধুনিক, উন্নত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ায় অসামান্য অবদান রাখেন।
বঙ্গবন্ধুর দুটি স্বপ্নের মধ্যে ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করা এবং বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা। প্রথম স্বপ্নটি বঙ্গবন্ধু বাস্তবায়ন করেছিলেন। অন্য স্বপ্নটি যখন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছিলেন তখনই তাঁকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। বর্তমানে শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে জাতির জনকের দ্বিতীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসরমান বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুনরায় বিনির্মাণের কাজ। বাংলাদেশ এর মধ্যে ‘নিম্নমধ্যম’ আয়ের দেশ থেকে ‘মধ্যম’ আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।
বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের নন, সারা বিশ্বের বঞ্চিত, নিপীড়িত ও মুক্তিকামী মানুষের পক্ষের কণ্ঠস্বর ছিলেন। তার নির্মম নৃশংস বর্বরোচিত ঘটনায় গোটা বিশ্ব স্তম্ভিত হয়ে যায়। তাদের কাছে বড় প্রশ্ন থেকে যায়, বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে অনুসরণীয়, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, যার জীবনের মূল লক্ষ্যই ছিল মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি, তাকে কেন হত্যা করা হবে? বিশ্ববাসী অবাক হয়ে গিয়েছিল- যে মহান নেতা দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সংগ্রাম করে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে কারা অভ্যন্তরে কাটিয়ে একটি জাতিকে রাষ্ট্রভাষা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব উপহার দিল, তাকে তার দেশের মানুষের হাতে শাহাদতবরণ করতে হলো। ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে; কিন্তু তারা তার নাম বাঙালি জাতির অন্তর থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, নেতার মৃত্যু হতে পারে, কিন্তু আদর্শের মৃত্যু নেই। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। প্রত্যেক বাঙালির হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে থাকবেন চির অম্লান।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা