আবুল বাশার মিরাজ:বর্তমানে কৃষি খাতে সাধিত হয়েছে অকল্পনীয় উন্নতি। শুধু ফসলের মাঠে নয়- সব ক্ষেত্রেই এমনকি ছাদ কৃষিতে ব্যাপক আগ্রহ ও সাফল্য অর্জন করেছে। আর এ সাফল্য এসেছে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের সুদক্ষ নের্তেত্বের কারণে। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী একজন কৃষিবিদ, কৃষি গবেষক ও কৃষিতে উচ্চশিক্ষিত হওয়ায় এ কাজটি করা তার পক্ষে আরো সহজ হয়েছে। কৃষির কোন জায়গায় গুরুত্বআরোপ করা দরকার, সে জায়গাটিতেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন কারণ কৃষির এ বিষয়টি তিনি জানেন, বোঝেন।
করোনাকালের কথা সবারই মনে রয়েছে, সারাদেশে যখন খাদ্য সংকটে ভুগেছে সেখানে বাংলাদেশ ছিল ব্যতিক্রম। সব কিছু বন্ধ থাকলেও কৃষির উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়নি। আর এ সিদ্ধান্ত ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনার। তার সে এ সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। করোনাকালেও তিনি সুরক্ষা বজায় রেখে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কৃষকের কল্যাণে ছুটে গেছেন। শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় উন্নত প্রযুক্তিতে ধান কাটা, মাড়াইয়ের কাজে প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আর এ কারণেই আমরা করোনাকে মোকাবেলা করতে পেরেছি, খাদ্য সংকটে পড়তে হয়নি আমাদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হাত ধরে, ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল (উফশী) জাত উদ্ভাবনের পথে যাত্রা করেন। যার কারণে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি), বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) ফসলের জাত উদ্ভাবনে ক্রমাগতভাবে সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছে।
ইউএসডিএর প্রতিবেদন মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সারা বিশ্বে ধানের উৎপাদন ৫০ কোটি ২০ লাখ টনেরও বেশি। ফলে বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে ধানচাষে গ্রামের ৪৮ ভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অর্ধেক এবং জাতীয় আয়ের ছয় ভাগের এক ভাগ আসে ধান থেকে। দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ পরিবার প্রতি বছর ১ কোটি ৫ লাখ হেক্টর একর জমিতে ধান চাষ করছে। আমন, আউশ ও বোরো ধান চাষে বছরে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন ধান উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে প্রথম জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেন বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা। আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতি কৃষি, তৈরি পোশাকশিল্প এবং রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল হলেও এতে সিংহভাগ অবদান কৃষির। স্বাধীনতার পূর্বে দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব না হলেও বর্তমানে ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়েছে।
উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা ডেভরেসোন্যান্সলি'র গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কৃষি জমিতে যেকোনো সবজি ৭৮ শতাংশ, পাট ২৬ শতাংশ, জমিতে মাছ ১২ শতাংশ এবং প্রায় সমপরিমাণ সরিষা, ডাল এবং রসুন, বাদাম এবং সয়াবিন ১০ শতাংশ, ভুট্টা ৫ শতাংশ, আম ৪ শতাংশ, পেঁয়াজ ৪ শতাংশ, তিল ও পান ৩ শতাংশ এবং কিছু কৃষক অন্যান্য ফল ও ফুলের চাষ করেন। তবে ১২ শতাংশ কৃষক শুধু ধান চাষ করেন। সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ উৎপাদনে চতুর্থ এবং প্রতিকূল পরিবেশ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ৮৫ লাখ টন আলু উৎপাদনের মাধ্যমে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায়, সাড়ে ১০ লাখ টন আম উৎপাদনে বিশ্বে নবম স্থান অর্জন করেছে এবং হেক্টরপ্রতি ভুট্টা উৎপাদন হয় ৬ দশমিক ৯৮ টন। এছাড়া বাংলাদেশ এখন চাল, আলু ও ভুট্টা রপ্তানি করছে। কৃষিতে আমাদের এ সাফল্যধারা অব্যহত থাকুক সে প্রত্যাশা রইল।
লেখক: কৃষিবিদ ও সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি