আবুল বাশার মিরাজ:কেবল ফুল, ফলের জন্য মানুষ গাছের কাছে যায় তা কিন্তু নয়। আরেকটি কারণে মানুষ গাছের কাছে যায়। আর সেটি হচ্ছে, সুশীতল বাতাস কিংবা ছায়ার খোঁজে। এটাই চিরত্নন, গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ এরা ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং এদের পত্রপল্লবের নিচে আবহাওয়া-সুরক্ষিত বাস্তুসংস্থান তৈরি করে। গাছ অক্সিজেন তৈরি ও বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরণ এবং ভূমি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে বৃহৎ আকারের শতবর্ষী গাছ ঢাকা শহরে খুঁজে পাওয়া সত্যিই কষ্টকর। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গেলে এমন একটি গাছের দেখা পাওয়া যাবে। উপাচার্য চত্বরের কেন্দ্রবিন্দুতে স্মৃতি চিরন্তনের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল এক কড়ই গাছ। অনেকের কাছে এটি রেইনট্রি নামেও পরিচিত। তবে গাছটির প্রকৃত বয়স কত, তা নিয়ে ঠিক করে বলা কঠিন। তবে ধারণা করা হয় গাছটির বয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়সের চেয়েও বেশি। অনেকে বলছেন গাছটির বয়স ১৫০ বছরের কম না। তবে গাছটির বিষয়ে একটি বিষয় খুবই সত্য, অজস্র স্মৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে এই কড়ই গাছটি। তবে এই গাছটিকে কে বা কারা রোপণ করেছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রচলিত আছে, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পরিবারের কর্তা এই গাছটি রোপণ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, এক ব্রিটিশ ভদ্রলোকেরা গাছটি রোপণ করেছিলেন।
বলতে গেলে, স্মৃতি চিরন্তনের এ স্মৃতিফলকটিকে ছায়ায় বেঁধে রেখেছে এই কড়ই গাছটি। গাছটির আর একটু কাছে যেতেই চোখ পড়ল বিভিন্ন বয়সী মানুষের। এছাড়াও প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থীর মিলনমেলা বসে এই কড়ই গাছের নিচেই। শিক্ষার্থীদের বসার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গাছটির চারপাশে শান বাঁধিয়ে দিয়েছে, যার ফলে স্থানটির আকর্ষণ কয়েকগুণ বেড়েছে। ক্লান্ত দুপুরে এখানে দেখা পাওয়া গেল বিভিন্ন বয়সের ও বিভিন্ন পেশার মানুষের। তারা এখানে বসে শরীর জিরিয়ে নিতেছেন তা কেউবা দলবেঁধে বসে বন্ধুদের আড্ডা দিতেছেন। আবার কেউবা প্রেমিকার সাথে বসে একসাথে ঘর বাঁধার পরিকল্পনায় ব্যাস্ত। এখানে শুধু যে কেবল দিনে আড্ডা জমে তা কিন্তু নয়। গভীর রাত পর্যন্ত পথিকের আনাগোনায় মুখর থাকে এ প্রাঙ্গণ, রাতভর চলে গান-গল্প-আড্ডা। আর এতসব নিত্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয়েছে শতবর্ষী এই পুরনো কড়ই গাছটি।
কড়ই গাছের নিচে বারবারই মনে হচ্ছিল, এসব শতবর্ষী গাছ যদি ঢাকা শহরে আরো কিছু থাকতো, তাহলে কতই না ভালো হত, মানুষের উপকার হত। প্রতিবছর যেভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে করে ঘরবাড়ি ও কলকারখানা স্থাপনের জন্য এ ধরনের গাছগুলো সারাদেশেই কাটা পড়ছে। ঢাকা শহরে উন্নয়নের নামে অহরহ গাছকাটা চলে, কিন্তু গাছ লাগানো হচ্ছে, এমনটা দেখা তেমন যায় না। উন্নয়নের নামে যেন এ ধরনের শতবর্ষী গাছ না কেটে ফেলা হয়, সেদিকে সবাইকেই সচেতন থাকতে হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও গণমাধ্যমকর্মী