সবুর খান কলিন্স:১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অ্যাসেম্বলি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আর এ হলের আবাসিক ছাত্র হতে পারাটা আমার কাছে গর্বের। একইসাথে ছাত্রলীগের সাথে জড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে মানবিক কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারাটা আরো বেশি গর্বের মনে হয় আমার কাছে। ভাবতেই ভালো লাগে আমার হল থেকে ছাত্রলীগের জন্ম। আজ বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের মধ্যে বৃহৎ আর সেরা সংগঠনে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। আর এ সংগঠনের একজন হয়ে করোনাকালে কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
কেবল করেনাকালে নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতির ক্রান্ত্রিকালে বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংগঠনটি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সর্বশেষ আমরা দেখতে পাই যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে যখন মাকে জঙ্গলে রেখে চলে যায় তার প্রিয় সন্তান, স্বামীকে ছেড়ে চলে যায় তার প্রিয়তমা স্ত্রী। বাবা-মা-ভাই-বোনের লাশ নিতে যখন কেউ আসে আসে না হাসপাতালে, দাফন-সৎকারে লাশের পাশে যখন থাকে না তার আত্মীয়-স্বজন, জাতির এমনই ক্রান্তিকালে আবারো মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশে করোনা ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে স্যানিটাইজার তৈরি করে ছাত্রলীগ। ফর্মুলা অনুযায়ী দলীয় নেতাকর্মীরা স্যানিটাইজার বানিয়ে রাজধানী ও জেলা পর্যায়ে তা বিতরণ করা হয়। মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি বিনামূল্যে মাস্কও বিতরণ করি আমরা।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই অক্সিজেনের অভাবে করোনার রোগীর মৃত্যু বাড়তে থাকে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে অক্সিজেনের দাম বাড়িয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। সেইসঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার চলে যায় জনগণের নাগালের বাইরে। দ্বিগুণের চাইতেও বেশি দামে দিয়েও পাওয়া যাচ্ছিল না অক্সিজেন সিলিন্ডার। এমন দুর্দিনে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি আমরা ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ নিয়ে। অনেক ছুটাছুটি করেও যখন করোনা আক্রান্তরা অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচ্ছিলেন না, সেসময় আমরা বিনামূল্যে বাসায় গিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছি তাদের কাছে। মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে এসেছেন অনেকেই বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’র উদ্যোগটির কারণে।
করোনার ভিতর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা। বন্যায় ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণে কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগ। জামালপুর, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, মুন্সিগঞ্জ, পাবনা, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ ও শেরপুরে বন্যার্তদের ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পৌঁছে দিয়েছে ছাত্রলীগ। শুধু তাই-ই নয়, করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা গ্রামে ফিরে যায়। কিন্তু দীর্ঘসময় বন্ধের কারণে মেস কিংবা বাসা ভাড়া নিয়ে সংকট দেখা দেয়। শিক্ষার্থীদের ভাড়া সংক্রান্ত সংকট নিরসণেও আমরা কাজ করেছি।
করোনায় অসহায় হয়ে পড়া মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই আমরা। ঢাকাসহ সারাদেশে সাধ্যমতো খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি আমরা। শুধু খাদ্য সামগ্রীই নয়, চিকিৎসকদের নিয়ে টিম গঠন করে মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা, অসুস্থ মানুষের বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া ছাড়াও বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করেছি আমরা। ক্যাম্পাস, মসজিদ, বাজার ও মোড়ে মোড়ে হাত ধোঁয়ার জন্য সাবানপানির ব্যবস্থাও করা হয়। মানুষের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে রাতভর খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেটের উপর ঘুমিয়ে পড়ছেন আমাদের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রলীগের এসব মানবিক কাজের প্রশংসা করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেটি আমাদের জন্য ছিল অন্যরকম পাওয়া। সারাদেশে ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী জালের মত ছড়িয়ে আছে। আমি মনে করি দেশকে এগিয়ে নিতে ও বিজ্ঞান নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে ছাএলীগের আরো কাজ করার সুযোগ আছে ও আমরা সেটাই করছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলা প্রতিষ্ঠা ও জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে ছাত্রলীগের সবাই সবর্দা সচেষ্ট থেকে কাজ করি, এটাই হউক আমাদের সবার দৃঢ় অঙ্গিকার।
লেখক: উপ-বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ।