কৃষি সাংবাদিকতার সহজ ভাবনায় এক কঠিন বাস্তবতা

দে লো য়া র জা হি দ:কৃষি সাংবাদিকতা, যোগাযোগের একটি বিশেষ ক্ষেত্র। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে মানুষ যখন রোপন ও প্রাণীদের গৃহপালন  করতে শুরু করে তখন থেকে কৃষি সম্প্রদায়ের বিকাশ। যাযাবর শিকারী-সংগ্রাহক জীবনধারা থেকে গৃহস্থালি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, পরিবার এবং বৃহত্তর গোষ্ঠী সম্প্রদায় গড়ে তুলতে এ রূপান্তরে মানুষ সক্ষম হয়েছিল।

কৃষি সাংবাদিকতা মানুষের খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে সংবাদ, তথ্য রিপোর্ট করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এ সাংবাদিকতায় ওয়েব ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নিবন্ধ তৈরি যা কৃষির বর্তমান প্রবণতাকে প্রকাশ করে এবং গল্পের তথ্য, উৎসগুলি গবেষণা ও যাচাই করে। কৃষি সংবাদ; কৃষি বাজার; বীজ, সরঞ্জাম, রসায়ন বা চাষ পদ্ধতিতে নতুন প্রযুক্তি; রোগ বা খাদ্যজনিত প্যাথোজেনের প্রাদুর্ভাব; মেলা এবং প্রকাশ করা;  শ্রম; সরকারি প্রবিধান; প্রশিক্ষণ; আবহাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরে। কৃষি সাংবাদিকরা দেশের সামাজিক মাধ্যম তথা চ্যানেলগুলিতে ট্র্যাফিক তৈরি করে তাদের গল্পগুলো পুশ করেন।

কৃষি উন্নয়নের বিষয়ে বাংলাদেশে ৬০ এর দশক থেকে আমাদের ভাবনায় কিছুটা পরিবর্তন আসতে শুরু করে। কৃষি তথা গ্রাম সম্পর্কিত সকল অসুবিধা, সমস্যা ও তাদের সমাধান, তথ্য এবং যোগাযোগ নিয়ে কুমিল্লায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুগান্তকারী কতগুলো কর্মসূচি নিয়ে কাজ শুরু করেন ড. আক্তার হামিদ খান। ব্রিটিশ ভারতের অধীনে সম্মানজনক ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আই সি.এস) কর্মকর্তা ১৯৩৬-৩৮ সালে ইংল্যান্ডের ম্যাগডিলিন কলেজ, কেমব্রীজ-এ ও শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরবর্তী সময়ে তা মোকাবেলায় ঔপনিবেশিক প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিবাদে ১৯৪৪ সালে সিভিল সার্ভিস চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেন এবং ভারতের আলীগড়ের একটি গ্রামে শ্রমিক ও তালা মেরামতকারী হিসেবে ও কাজ করেন।

ড. আক্তার হামিদ খান ১৯৫০ সালে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে  তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪-৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের 'ভি-এইড' কর্মসূচীর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন ও ১৯৫৮ সালে তিনি মিশিগান ষ্টেট বিশ্ববিদ্যালয় হতে পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক অভিজ্ঞতা অর্জন এবং সেখান থেকে ফিরে পাকিস্তান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বর্তমানে বার্ড) এর প্রতিষ্ঠাতা করে প্রথম প্রধান নির্বাহী  হিসেবে যোগদান করেন। যারা পল্লী-গ্রাম তথা কৃষি ও কৃষককে নিয়ে কাজ করার  কথা ভাবেন তাদের জন্য এ এক উজ্জ্বল দৃস্টান্ত।

সাংবাদিকতার একটি ফর্ম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা যা সাংবাদিকদের গভীর আগ্রহের বিষয়, যেমন গুরুতর অপরাধ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি বা কর্পোরেট অন্যায়ের মতো কাজগুলোর তদন্ত করা। একজন তদন্তকারী সাংবাদিক এর কয়েক মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে এ কাজগুলোর উপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন তৈরী করতে। সামাজিক ও আইনি বিষয়গুলোর উপর গবেষণা করা ছাড়া এ ধরনের কাজ করা খুবই কঠিন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকগণ তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে পরামর্শদানের জন্য তাদের কাজের নজিরগুলো পিছু রেখে গেছেন। সামাজিক ও আইনি বিষয়ে নিয়মিত পড়াশুনা ও গবেষণা ছাড়া একজন দক্ষ অনুসন্ধানী সাংবাদিক হওয়া খুবই কঠিন বিষয়।

খাদ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায়, যেখানে ৫৮.৫  মিলিয়নেরও বেশি লোক, যা মোট জনসংখ্যার ৩৬% কে প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তুু তারা হালকা দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়। দেশের সবচেয়ে খারাপ খাদ্য সংকট দেখা দেয় ১৯৭৪ এর পর ২০০৭-২০০৮ সালে। খাদ্যপণ্যের (বিশেষ করে গম, চাল, সয়া এবং ভুট্টা) বিশ্ববাজারে উচ্চমূল্য ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যায় অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ঘটায়। খাদ্য সংকট ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইকে এখন আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় স্থান দিয়েছে বিশ্ব। দুর্ভাগ্যবশত, খাদ্য নিরাপত্তা এখন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কোনো দেশের সরকার, জাতিসংঘ সংস্থা এবং সামাজিক আন্দোলন এ সকল সংকটের কারণ এবং এটি মোকাবেলার উপায় সম্পর্কে সংখ্যাগরিষ্টের কোনো সিদ্বান্ত দৃশ্যমান নয়।

দেশে খাবার তৈরির জন্য পুরানো রেসিপিগুলি থেকে বের হবার প্রয়াস ও জোরদার নয় বরং ক্ষুধার্ত মানুষের শতাংশ অর্ধেকে কমিয়ে আনার আহ্বান স্পষ্টতই নাগালের বাইরে। কিন্তু খাদ্য সংকট, খাদ্য সহায়তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং খাদ্যের অধিকারের তিনটি স্তম্ভের ভিত্তিতে একটি নতুন বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থার দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য কৃষি সাংবাদিকতাকে সমৃদবধব ও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে কৃষি সাংবাদিকতার ভাবনায় কঠিন বাস্তবতা হলো সাংবাদিকতার প্রচলিত সংস্কৃতির পরিবর্তন।

[লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার, সভাপতি, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক, কানাডা নিবাসী]