দে লো য়া র জা হি দ:লেখক হ্যামিল্টন-প্যাটারসনের জীবনের মতো সমুদ্র যাত্রার স্মৃতিকথা ও এর অভিজ্ঞতার সাথে মিশে নেই আমার জীবন, জীবিকা ও লেখাজোখা। নেই বিস্ময়করভাবে বিস্ময়কর কোনো কাব্যিক প্রবন্ধ, নেই বিজ্ঞান, নন্দনতত্ত্ব এবং কৌশলের সমন্বয়ে, কার্টোগ্রাফিক কোনো পান্ডিত্য যার উপর ভিত্তি করে তৈরি করতে পারি সাগর নিয়ে কল্পনাকৃত কোন বাস্তবতা। সাংবাদিকতার স্কুলে পড়ে কেউ একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক (সংবাদকর্মী) হয়েছেন এমন নজিরের বিপরীত নজিরই বেশি। আমার নিজের সাংবাদিকতার পেশায় আসার ভিন্ন প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য আছে যার অনেকটাই অপ্রচলিত। একজন ভাল সাংবাদিক হওয়ার পূর্বে একজন ভাল ও হিতকর মানুষ হবার চেষ্টা করেছি ও এর গুরুত্বের উপর জোরারোপ করেছি। স্বভাবতই একজন ব্যক্তি মানুষ হিসেবে কিছু কঠিন পরিস্থিতির সমাধান খুঁজে পেতে চেষ্টা করেছি যা কাউকে শেখানো দুস্কর।
কুমিল্লা থেকে সাংবাদিকদের একটি টিম নিয়ে ১৯৮৫ সালে নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জলোচ্ছাস উপদ্রুত একটি চরাঞ্চলে কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও সে সাথে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম। মনে হতে পারে সাংবাদিক হিসেবে আমাদের পেশাগত কাজ ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর দুঃখ, দূর্দশাকে শুধু তুলে ধরা. আমাদের ক্যামেরা ও পিঠে খাবারের ব্যাগ দেখে ছুটে আসা অভুক্ত মানুষগুলোর ছবি তোলা! আমরা ওই হাতগুলোতে শুকনো খাবার ও কিছু পানীয় জল তুলে দিয়েছিলাম। তারপর ও জলোচ্ছাস বিধ্বস্ত মানুষকে নিয়ে সেদিন আমাদের খবরগুলো লাখ মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিলো।প্যাটারসনের দ্য মিরর অফ দ্য সি-যা অস্পষ্ট ও শূন্যতার পরামর্শ দেয় - এবং যা মানুষকে নিজের দিকে প্রতিফলিত করে তা পড়ে দেখার স্বপ্ন, স্বপ্নই রইলো।
সুখের বসন্ত আসে আর চলে যায়. পত্র পল্লবের গৌরবময় পতন রয়ে যায়...পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ হলো সাগর আর এ সাগরকে নিয়ে ভাবুক হয়েছিলেন এডমন্ড স্পেন্সার, তিনি লিখেছেন :
একদিন আমি স্ট্র্যান্ডে তার নাম লিখেছিলাম,
কিন্তু ঢেউ এসে তা ধুয়ে দিল:
আবার দ্বিতীয় হাত দিয়ে তা লিখলাম,
কিন্তু জোয়ার এসে আমার যন্ত্রণা তার শিকার বানিয়ে নিলো ।
'অর্থক মানুষ,' সে বলল, 'সেটা নিরর্থক পরীক্ষায়,
একটি নশ্বর জিনিস তাই অমর করা;
কারণ আমি নিজেই এ ক্ষয় পছন্দ করি,
এবং একই ভাবে আমার নাম মুছে ফেলো
সম্ভাব্য বৈশ্বিক খ্যাদ্য সংকট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান মূল্যায়ন করতে গিয়ে বের হয়ে এলো এক অপার সম্ভাবনার বিষয়। বাংলাদেশ সবুজ অর্থনীতির একটি দেশ। এদেশে সামদ্রিক অর্থনীতি তথা নীলের যে দ্যুতি ছড়াচ্ছে তা মুছে যাবার নয়. সাগর নানা দুর্যোগ দুর্বিপাকে কেড়ে নিয়েছে অনেক প্রাণ। সম্ভাব্য খ্যাদ্য সঙ্কটে সে সাগর উঁচু তুলে ধরবে দেশের মান।
ব্লু-ইকোনমির বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই পাইলট কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি মাছ, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৩৩৬ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক এবং বিভিন্ন প্রকার অর্থনৈতিক ও জৈবগুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের ৫ লক্ষাধিক জেলে প্রায় ৭০ হাজার যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযানের সহায়তায় জীবিকানির্বাহের সঙ্গে সঙ্গে মৎস্য উৎপাদনে
ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় রয়েছে চারটি মৎস্যকেন্দ্র। মৎস্যসম্পদ ছাড়াও সামুদ্রিক প্রাণী, সামুদ্রিক আগাছা, লতাগুল্মতেও ভরপুর বঙ্গোপসাগর। এসব আগাছা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করা যায়। স্পিরুলিনা নামক আগাছা চীন, জাপান, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ খাদ্য হিসেবে খেয়ে থাকে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।(সূত্র-ইত্তেফাক)
দেখা যায়, বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রশান্ত মহাসাগর একটি প্রধান অবদানকারী এবং বিশেষ করে যে দেশগুলির জল সরাসরি একে স্পর্শ করে তারা. উপকূল সংলগ্ন মার্কিন কাউন্টিগুলির চৌদ্দ শতাংশ দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪৫ শতাংশ উৎপন্ন করে, যেখানে তিন মিলিয়নেরও বেশি চাকরি (৪৫ টির মধ্যে একটি) রয়েছে সরাসরি মহাসাগর এবং গ্রেট লেকের সম্পদের উপর নির্ভরশীল। সমুদ্র ইতিমধ্যে সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য উৎপাদক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে যে মূল মহাসাগরীয় সম্পদের মূল্য ২৪ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার্স এছাড়াও পণ্য ও পরিষেবার বার্ষিক মূল্য ২.৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার্স যা বিশ্ব জিডিপির প্রায় ৫% এবং ৭ম বৃহত্তম অর্থনীতি তূল্য।
"জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বের প্রতিবছর ৮ কোটি ৪৪ লাখ টন সামুদ্রিক খাবার আহরণ করা হয়। বিশ্বের মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু।...২০১৭-২০১৮ সালে বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টন মাছের মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ টন মাছ এসেছে সমুদ্র থেকে।...বেসরকারি প্রতিষ্ঠান 'সেভ আওয়ার সি'- তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর বঙ্গোপসাগর থেকে আশি লাখ টন মাছ ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা ধরতে পারছেন মাত্র ৭ লাখ টন মাছ।..চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''এখনো সমুদ্র থেকে আমরা মূলত মাছ এবং চিংড়ি বেশি ধরা হয়। কারণ খাবার হিসাবে বাংলাদেশিদের ভেতরে এগুলোর চাহিদা বেশি রয়েছে। তবে ইদানীং অনেক জায়গায় অক্টোপাস, স্কুইড, ক্যাটলফিস, কাঁকড়া বা ঝিনুক খাওয়ার চল তৈরি হয়েছে।''(বিবিসি)
বাংলাদেশ সামুদ্রিক সম্পদের ব্যবহার করে খাদ্য, সার ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করতে পারে। সময় এসেছে মানুষের দ্বারা সামুদ্রিক প্রজাতির শোষণকে বন্ধ করে মাছ ধরা, মারি সংস্কৃতি এবং শিকারের মতো কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত করার। সমুদ্রের অন্যান্য ব্যবহারের মধ্যে বাণিজ্য, ভ্রমণ, খনিজ উত্তোলন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যুদ্ধ, এবং অবসর ক্রিয়াকলাপ যেমন সাঁতার, পাল তোলা এবং স্কুবা ডাইভিং করার । যদিও এসব কর্মকাণ্ডের অনেকগুলো সামুদ্রিক দূষণ সৃষ্টি করে তা ও বর্জনের চেষ্টা করার। বাংলাদেশ তার সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে জৈবিক বৈচিত্র্য বৃদ্বি, মাছ এবং সামুদ্রিক খাবারের সংস্থান ও সরবরাহ, ছাড়াও তেল এবং গ্যাস, খনিজ পদার্থ, বালি, নুড়ি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সংস্থান, পর্যটন এবং প্রবাল প্রাচীরের মতো অনন্য ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার।
বর্তমানে বাংলাদেশে সামুদ্রিক অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়ার কোনো বিকল্প নেই, বিকল্প নেই মানুষের খ্যাদ্য সংস্কৃতি পরিবর্তনের।
[লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার, সভাপতি, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক, কানাডা নিবাসী]