খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ:রাত পোহালেই আগামীকাল গৌরব ঐতিহ্য সংগ্রাম ও সাফল্যের -বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর ৩০ তম জাতীয় সম্মেলন। সেই ২০০৯ সালে (রিপন-রোটন) ভাই এর সময় থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে যে পথচলা শুরু হয়েছিল তারই পূর্নতা পেয়েছি জয় ভাই ও লেখক দাদার হাত দিয়ে।
(রিপন-রোটন) ভাই এর সময় আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ সম্পাদক ছিলাম। এরপর (সোহাগ-নাজমুল) ভাই এর কমিটিতে বাকৃবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পরের বার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম কিন্তু আমাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আবারো শোভন ভাই রাব্বানী ভাইয়ের সময় সভাপতি প্রার্থী হলাম।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! আমাদের কমিটি করার আগেই উনাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। আবারো ধাক্কা খেয়ে একটা অনিশ্চিত রাজনৈতিক সময়ে আটকে গেলাম। জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপা দায়িত্ব দিলেন জয় ভাই ও লেখক দাদাকে। শোভন ভাইয়ের সময় জয় ভাই ছিলেন সিনিয়র সহ সভাপতি। তারো আগে থেকে ভাইয়ের সাথে একটু চেনা পরিচয় ছিল। ডাকসু নির্বাচন এর সময় জয় ভাইয়ের সাথে কিছু আলাপ আলোচনা হত।
সেই ব্যক্তিগত জায়গা থেকে ভাইকে গিয়ে বলি, ভাই আমি রাজনীতি করতে চাই আপনি যদি আমাকে ছোটভাই হিসেবে একটু সহযোগিতা করেন। আপনি সহযোগিতে না করলে আমি রাজনীতি বাদ দিব ভাই। ভাই আমার সব কিছু জানতেন। বললেন তুই এতদিন ধরে রাজনীতি করিস তুই অবশ্যই রাজনীতি করবি। আমি দেখব।
এরপর থেকে আজকে প্রায় সাড়ে তিন বছর আপনার কাছে থেকে যে পরিমান স্নেহ ভালোবাসা আর বিপদের দিনগুলোতে আমার কাধে আপনার হাতকে পেয়েছি তা আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে সারাজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেও কখনো শোধ হবার নয় ভাই।
যখন কমিটি হওয়ার কথা ঠিক সেই মুহুর্তে করোনা এসে একটা সাধারন পরিবেশ পুরাই ওলোট পালোট করে দিল। কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে কবে কি হবে কেউ জানে না। এভাবে প্রায় দেড় বছর গেল। কি যে অসহ্য মানসিক কষ্ট করে প্রতিটা দিন অপেক্ষা করতাম কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে। সেই সময় আপনি সাহস যুগিয়েছেন, মানুষের জন্যে কাজ করার অনুপ্রেরনা দিয়েছেন। আপনার নেতৃত্বে এই করোনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যেভাবে মানুষের পাশে দাড়িয়েছে তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আমি সব সময়ই প্রতিকুল পরিবেশে রাজনীতি করেছি।
একেতো পারিবারিক পারিপার্শ্বিক চাপ, আর্থিক কষ্ট তার উপর আমার বিরুদ্ধে একের পর একেক ষড়যন্ত্র লেগেই ছিল। এমন কোন নোংরামি নাই যে আমাকে নিয়ে হয় নাই।
আমাদের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পাঁচ বছর চলছিল। এদিকে আমার বয়স শেষ প্রান্তে। ভাইকে বললাম ভাই সামনে আমার বয়স শেষ হবে অন্তত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে সিভি নেন তাহলে হয়ত টিকে থাকার সুযোগ পাব নাহলে এভাবেই বিদায় নিতে হবে। আপনি বলেছিলেন করোনা ছিল সেই হিসেবে হয়ত বয়স শিথীল করা যাবে। আমি বললাম ভাই আমার প্রতিপক্ষ অনেক বড় বড় নেতা। বয়স শেষ হলে কিছুতেই আমাকে রাজনীতি করতে দিবে না। আমার বয়স শেষ হওয়ার আগের প্রতিটি রাত ঘুমোতে যাওয়ার আগে কান্নাকাটি করতাম। শুধু মনে হত রাত পোহালেই আরও একটি দিন শেষ।
আমার বয়স শেষ এর ঠিক দশ দিন আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ বছর ০১ মাস ০৪ দিন মেয়াদি কমিটি নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই বিলুপ্ত করা হয়। এ যেন আমার কাছে ছিল নতুন জীবন ফিরে পাওয়ার মত। কমিটি বিলুপ্ত করার পর আপনাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে।একজন হেভিওয়েট নেতা লোকজনের সামনেই যা তা বলেছিল কেন কমিটি বিলুপ্ত করা হলো অথচ কমিটির বয়স তখন ৬ বছর চলছিল।
আপনি আমাকে বলেছিলেন, তুই এতদিন রাজনীতি করিস এতটুকু ত আশা করতেই পারিস। কে কি বলে বলুক আমি ত অন্যায় কিছু করি নাই। নতুন কমিটি দেওয়া প্রয়োজন তাই কমিটি বিলুপ্ত করেছি। সেইদিন শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় আপনার প্রতি মাথা নুয়ে আসছিল ভাই। এরপর সেই ক্ষমতালোভী নষ্টরা শুরু করলো নতুন অপরাজনৈতিক। বয়স এর ফাঁদে যখন আটকাতে পারলো না তখন তারা মুখে মুখে বেশ কয়েকবার বিয়ে দিল আমাকে। বিভিন্ন ছবি দেখিয়ে বুঝাতে চাইলো আমি নাকি বিয়ে করেছি। আপনি সরাসরি বলেছিল প্রেম করা দোষের কিছু না। বিবাহিত প্রমান করতে চাইলে সঠিক কাবিননামা নিয়ে আসতে হবে। এবং আপনি সেটি যাচাই করে দেখবেন ঠিক কিনা। আর যদি ভুয়া হয় তাহলে যে নিয়ে আসবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন।
আপনার কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে সেই ক্ষমতালোভিরা পিছু টান দেয়। এরপর ২০২২ এর ২৬ মার্চ জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এক মেয়েকে চাকরির লোভ দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি এর অভিযোগ করানো হয়। মেয়েদের জোর করে ধরে এনে আন্দোলন করানো হয়। টাকা দিয়ে বিভিন্ন অনলাইনে ও টিভিতে ভুয়া নিউজ করানো হয়।
তারা যেন আমার বিচারের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ করছিল আমি সেদিন ছাত্রলীগের শিক্ষা উপকরন বিতরন এর জন্যে লঞ্চে করে চাঁদপুর যাচ্ছিলাম। লঞ্চে আপনাকে সেইসব ঘটনা বললে আপনি বললেন আসল ঘটনা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন। সেই তিন চারদিন আমি যে কি পরিমান মানসিক চাপে ছিলাম একমাত্র আল্লাহ জানেন। মানুষ যে কত নোংরা হতে পারে এসব না ঘটলে বুঝতাম না। শুধু আল্লাহর কাছে বলতাম নেতা হই আর না হই এই অমানুষ গুলোর যেন পতন হয়।
তারপর আপনি গোয়েন্দা সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক, শিক্ষক সবার সাথে কথা বলেছেন। এবং সকলেই বলেছিল এসব ভুয়া। আমার বিরুদ্ধে সাজানো নাটক। এরপর ঈদের ঠিক চারপাঁচ দিন আগে কমিটির কথা শুনলেও দেরি হতে হতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ঈদের ছুটিতে বন্ধ হয়ে যায়। আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়ি। কিন্তু আল্লাহ নিরাশ করে নাই। পবিত্র ২৭ রমজান আমাদের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি করা হয়।
ভাই আপনি আমার মত একজন ক্ষুদ্র কর্মীর জন্যে যা করেছেন তা আসলেই আমার কাছে পরম পাওয়া ভাই। আমি,আমার পরিবার শুভাকাঙ্ক্ষী, বাকৃবি ছাত্রলীগ পরিবার আপনার কাছে আমৃত্যু কৃতজ্ঞ ভাই। আপনার জন্যে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয় নাই। তারা সফল হলে আরও অনেক ত্যাগী কর্মী রাজনীতি থেকে হারিয়ে যেত।
আপনি আমার নিভে যাওয়া প্রদীপে নতুন জীবনের সঞ্চার করেছেন। আমার রাজনৈতিক জীবনে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি আপনি দিয়েছেন। এতএত মানুষের ভালোবাসা সম্মান সব কিছু আপনার জন্যে ভাই।
সম্মেলন হলে আপনিও সাবেক হবেন তবে ভাই হিসেবে আমৃত্যু আপনার সাথে থাকব ভাই। ভাই কখনো সাবেক হয় না। সম্মেলন রাজনৈতিক দায়িত্ব বদলের সবচেয়ে সুন্দর সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। জননেত্রী যাকে নতুন সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব দিবেন তার নেতৃত্বেই আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব এটাই রাজনৈতিক নিয়ম।
ভালো থাকবেন সদা হাস্যজ্বল বিনয়ী পরিশ্রমী কর্মীবান্ধব ছাত্রলীগের জয় ভাই ;আমাদের জয় ভাই। আমার মত হাজারো রিয়াদ আপনার জন্যে দোয়া করবে। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আরো উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করবেন এই দোয়া করি। শ্রদ্ধা সম্মান ভালোবাসা আমৃত্যু ভাই।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ময়মনসিংহ