
দেলোয়ার জাহিদ:বায়ান্নের ভাষা সৈনিক এ বি এম ওয়াজিউল্যাহ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী মহাবিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি বাংলাদেশে কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের জনক ড. আক্তার হামিদ খানের ভাবশিষ্য গত ৫ নভেম্বর আমাদের ছেড়ে পরলোকে চলে গেলেন। তিনি বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ হয়েও মহামানব ড.আখতার হামিদ খানের পল্লীউন্নয়ন সহযোগী হয়েছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ১৯৬১ সালের জুন মাসে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর গবেষণা শাখায় চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সাল থেকে বার্ডের কৃষি গবেষণা শাখার অধীন হিমাগার প্রকল্প, আধুনিক ক্রেমারী প্রকল্প, রাইসমিল ও পোল্ট্রি প্রকল্প সমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৩২ সনের এপ্রিল মাসে এবি এম ওয়াজিউল্যাহ কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ১৯৪৯ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৫১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে এইচ এস সি পাস করেন। ১৯৫০- ৫১ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। বাংলা ভাষার প্রতি গভীর মমত্ব ও দায়িত্ববোধ থেকে অংশগ্রহণ করেন ভাষা আন্দোলনে, যুক্তফ্রন্টের রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে জেলবন্দি হন ১৯৫৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সনের ২০অক্টোবর সামরিক আইন জারী করেন। সে সময়ে তাঁর (ওয়াজিউল্যাহর) বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করা হলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ১৯৬১ সালের জুন মাসে পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে যোগ দেন।
মরহুম ওয়াজিউল্লাহ কুমিল্লাস্থ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী'র প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, যিনি ছিলেন মনে প্রানে একজন ভাষা সৈনিক ও স্বাধীনতাকামী মানুষ। কুমিল্লায় দলমত নির্বিশেষে ওয়াজিউল্লাহ ভাই ছিলেন সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। ড. আখতার হামিদ খান পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং পল্লী উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সফল নেতৃত্ব দানের জন্য বিশ্বখ্যাত। তার উদ্ভাবিত পল্লী উন্নয়নের কার্যকর মডেল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে।
মরহুম ওয়াজিউল্লাহ কুমিল্লা ঠাকুরপাড়াস্থ নিরিবিলিতে বসবাস করতেন। আমার শৈশব, কৈশোর, ও যৌবন কেটেছে ঠাকুরপাড়ায় মরহুমের খুবই নিকটবর্তী স্থানে।
ড. খানের একজন ঘনিষ্ট ভাবশিষ্য মরহুম ওয়াজিউল্লাহ ভাই আমাদের জন্য ও ছিলেন অনুপ্রেণার উৎস। ষাটের দশকে ড. খানের নেতৃত্বে উদ্ভাবিত পল্লী উন্নয়নে কুমিল্লা মডেল-এর জন্য যে বার্ড বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছে, যে বার্ড এখনো একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অতুলনীয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী সে বার্ডের সাথে স্বাধীনতাত্তর লেখকের একটি যুগসূত্রিতা স্থাপিত হয়। লেখক পেশাগতভাবে অধ্যাপনা ও সাংবাদিকতাকে বেঁচে নিলেও পল্লী উন্নয়ণ নিয়ে কাজ করার প্রতি গভীর আসক্তি রয়ে যায়। তৎসময়ে সহপাঠী তোফায়েল আহমেদ বার্ডে যোগ দেন একজন জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে। বছর দুয়েক পর অনুজ আনোয়ার জাহিদ যোগ দেয় বার্ডের সহকারী পরিচালক হিসেবে, কয়েক বছর পর এনএস আই এর চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ছোট ভগ্নিপতি কামরুল হাসানও যোগ দেয় সহকারী পরিচালক হিসেবে। সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা ছেড়ে বার্ডের সহকারী পরিচালক হয় ছোটবোন নাসিমা আক্তার। অনুজ ড. আনোয়ার জাহিদ পরিচালক হিসেবে বার্ডের চাকুরীজীবন শেষে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায়, অন্যরা এখনো বার্ডের পরিচালক।
মরহুম ওয়াজিউল্লাহ ভাই আমাদের অতি আপনজন ও নিকটাত্মীয় শিক্ষা, উন্নয়ণ, প্রশিক্ষণ ও গবেষনায় চলার পথে পথিকৃৎ। আজীবন অনুশীলনকারী সমাজবিজ্ঞানী হিসাবে ড. খানের ভাবশিষ্য মরহুম ওয়াজিউল্লাহ ভাইয়ের সততা, নিষ্ঠা প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক কর্ম্মকান্ড ও দক্ষতা চিরদিন অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।.
[লেখক : বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার, সভাপতি, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক, কানাডা নিবাসী]



















