মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে কৃষিবিদ সন্তানের বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালবাসা.....

কৃষিবিদ ড. মু. তোফাজ্জল হোসেন:মায়ের গর্ভে জন্ম লাভ করেছি আমি/আপনি সকলে। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তিনি সম্মানের শীর্ষে মহান সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় ও মমতামাখা শব্দ ‘মা’। মা হচ্ছেন এক স্বর্গীয় বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান। মা’ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে অসীম, চিরন্তন আত্মত্যাগ, এক মমতাময়ী অসীম শ্রদ্ধার্ঘ ভালবাসা। মামুনি মহাবিশ্বের গরীয়সী, লালন-পালনকারী বর্ণনাতীত অনন্যা এক জন মহয়সী মা। জীবনের প্রতিটি স্তরে তাঁর কীর্তির কীর্তন অসাধারণ। আর তাইতো মাকে নিয়ে কবিতা, উপন্যাস, গান রচনা হয়েছে অসংখ্য।

পবিত্র কোর-আনে ও মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশনা রয়েছে। একটি হাদীসে আমাদের প্রীয় নবী মুহাম্মদ সঃ বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত। তাই অনুকম্পায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাভরে বিনয়াবনত থাকতে হবে। ওহ!আহ! উচ্চস্বরে কথা বলা যাবেনা (কুরান-১৭:২৪)।

আজ ১২ ডিসেম্বর! মা জননীকে হারানোর বিয়োগান্তির দিন! বেদনা-ক্লিষ্ট-বিমূঢ় বিধুরে ভারাক্রান্ত দিন! কষ্টের মূর্ছনা-বেদনা-যন্ত্রণার দিন!  ২০১৮ সালের এই দিনে (বুধবার সকাল ১০ টায়) আমার মমতাময়ী মা তারা বানু শেষ নি:শ্বাস ত‍্যাগ করে আমাকে/ আমাদেরকে এতিম করে কবর অতিথি হয়েছেন।

আজ প্রতিজ্ঞা করার দিন। বছরে শুধু এক দিন নয়, মায়ের প্রতি ভালোবাসা-শ্রদ্ধা- দোয়া স্থায়ী হোক বছর জুড়ে। তিনিতো আপনার/আমার অস্তিত্ব জুড়ে জীবনোপায় জীবনোচ্ছ্বাসের জীনম (Genome) কোডের ORF code (Open reafing frame, যা ডিএনএ এর অন্যত একটি অংশ)। Conserved region এ অসাধারন মিল। তাঁর coding বহন করে চলছি, চলবো আমি/ আপনি আমরণ। পুরোটাই mRNA (Messenger RNA), বায়োলজিক্যাল Transcription কিংবা Translation সব প্রক্রিয়াতেই মিলের সাদৃশ্য অসাধারণ identical. তাঁর কোন দায়িত্বই অবেহেলিত নয়; এটি যেন সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ গুণী প্রদীপের আলোকিত কীর্তন। লেখাপড়া না জানা “মা”ও সন্তানের আদর্শ শিক্ষক হিসেবে হৃদয়ে প্রথম শক্তিগড় সূচনা করেন।

আমার “মা” আমার সবচেয়ে বড় মাস্টার। গ্রামের বন্ধুদের সাথে অহেতুক ঘুরাফেরা রোধকল্পে মা পড়ার ঘরে বসে থাকতেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো। প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রতিষ্ঠানে মা লেখা পড়া না শিখেও অমাদের ভাই-বোনদের জনা মা ছিলেন আদর্শ শিক্ষিকা। আমাকে দেখার জন্য ওনার সব কাজ বন্ধ হলেও গরম দুধ আনতে ভুল করতেন না। আবার এই মা জননী শত বাঁধা-বিপত্তি পাড়ি দিয়ে আদুরের নাড়ী ছেঁড়াকে খুঁজে বেড়ায় সব সময়-যে কোন বিপদ-মহামারীতে, হাজির হন সবার আগে।

একবার “মা” সাঁতার কেটে আমাকে মৌমাছির আক্রমণ হতে (বন্যা কবলিত এলাকা ছিল), আবার পানিতে পড়ে গেলে মা গভীর খাল হতে আমাকে উদ্ধার করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিশ্ব মুক্ত সংবাদপত্র দিবসে (৩ মে ২০০২) দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ঢাকাতে আহত হই। বেশ কিছুদিন পর (সুস্থ হবার পর) মার কাছে গেলে মা ঘটনা শুনেই অজ্ঞান হয়ে পরেন। ভেবে দেখেছেন! সেই মার সাথে আমাদের কি করা উচিত? কিংবা যাঁরা কবর অতিথি হয়েছেন তাঁদের জন্য কতবার অতিরিক্ত নফল আদায় করে রব তুলেছি “রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা।” رَّبِّ ارْحَــمْــهُـمَا كَـمَا رَبَّـيَـانِـي صَـغِـيـ

"মা তুমি চলে গেছো সব ছেড়ে বহুদূরে,
আজও অনুভব করি
তুমি আছো আমার অস্তিত্ব জুড়ে।
আমার সব কিছুর পিছনে তুমি।"

হে আল্লাহ!! আমার বাবা-মা সহ সকল পিতামাতাকে আপনি মাফ করে দিন এবং দুনিয়া-আখেরাতে সম্মানিত করুন। প্রতিটি মুহুর্তই মাকে খুঁজে পেতি চাই।

লেখক:বিএজি (অনার্স), এম এস. বাকৃবি, পিএইচডি, দ. কোরিয়া।
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই, চট্টগ্রাম।