আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি প্রতিনিধি:নতুন প্রজন্মের কাছে প্রেরণার উৎস হয়ে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ‘বিজয় ৭১’। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিসংগ্রামে বাংলার সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক হয়ে আছে এই ভাস্কর্যটি।
পরম আকাঙ্ক্ষিত বিজয়ের চিহ্ন ‘বিজয় ৭১’ শুধু একটি ভাস্কর্য নয়, এটি বাঙালির প্রেরণার উৎস, শোভা ছড়াচ্ছে বিজয়ের। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে বাকৃবির ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের সব ষড়যন্ত্র, ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে শহীদও হয়েছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে সেসব ত্যাগের স্মৃতি ধরে রাখতেই বাকৃবি ক্যাম্পাসে এই ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়।
ভাস্কর্যটি, ছয় ফুট উঁচু বেদির ওপর এক কৃষক মুুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছেন আকাশ পানে। ডান পাশেই শাশ্বত বাংলার সংগ্রামী নারী কাঁধে রাইফেল নিয়ে দৃঢ়চিত্তে দিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ডাক। অন্যদিকে তেজোদীপ্ত এক ছাত্র বাঁ হাতে রাইফেল নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গ্রেনেড ছোড়ার ভঙ্গিমায়।
জানা গেছে, তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনের নেতৃত্বে বিখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী শ্যামল চৌধুরী এটির নির্মাণ করেন। ১৯৯৮ সালে ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ২০০০ সালের জুন মাসে। ভাস্কর্যটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ২৪ লাখ টাকা।’
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা ইতিহাসের সাক্ষী এই ভাস্কর্যটি দেখতে প্রতিদিনই অগণিত মানুষ ক্যাম্পাসে ভিড় জমায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে অনেকেই ছুটে আসে ‘বিজয় ৭১’-এর পাদদেশে। ভাস্কর্যটির পাদদেশ ব্যবহার হয় মঞ্চ হিসেবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হন ‘বিজয় ৭১’ প্রাঙ্গণে।
‘বিজয় ৭১’ নিয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে কাওসার আহমেদ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন “আমরা নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু ভাস্কর্যের দিকে যখন তাকাই, তখন মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথা মনে করিয়ে দেয়। ‘বিজয় ৭১’-এর সামনে গিয়ে যখন দাঁড়াই তখন একজন তেজোদীপ্ত ছাত্র রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমি তরুণ, আমি ছাত্র। দেশের সেবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাই আমার কর্তব্য। নারী স্তম্ভ অনুপ্রাণিত করে একসঙ্গে পথ চলার। পতাকা হাতে কৃষক আমাদের জানান দেন, আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। পৃথিবীর খুব কম দেশই আছে যারা আমাদের মতো এত ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। ‘বিজয় ৭১’ মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের শোভা ছড়াচ্ছে আমাদের মাঝে।