সমীরন বিশ্বাস:যে কোন ভাইরাস যখন এটি ফল ফসলে আক্রমণ করে তখন আর কিছুই করার থাকেনা। এজন্য বাগানী এবং কৃষক ভাইদের ভাইরাস রোগ সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। পেঁপের মোজাইক ভাইরাস তেমনি একটি রোগ যার কারণে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আসুন এক নজরে জেনে নেই কি কারণে এ রোগ হয় এবং এর প্রতিকার কি?
রোগের নাম : পেঁপের মোজাইক
রোগের কারণ : ভাইরাস
ক্ষতির ধরণ : পাতায় হলুদ সবুজ ছিট ছিট দাগ পড়ে, শিরা হলুদ হয়, পাতা বিকৃত হয়। তীব্র আক্রমণে বয়স্ক পাতা ঝরে পড়ে। ফসলের যে পর্যায়ে আক্রমণ করে : বাড়ন্ত পর্যায় , চারা
ফসলের যে অংশে আক্রমণ করে : পাতা ও ফল।
রোগের লক্ষণ:
১) সকল বয়সের গাছের সারা বছর এ মোজাইক রোগ হয়ে থাকে।
২) এই রোগ পেঁপে গাছের মারাত্মক রোগ।
৩) অল্প বয়স্ক গাছে এ রোগের তীব্রতা বেশি থাকে ও ক্ষতি খুব বেশি হয়।
৪) প্রধান লক্ষণ হল পাতার উপর হালকা হলুদ ও গাঢ় সবুজ রং এর ছোপ ছোপ মোজাইক-এর দাগ সৃষ্টি হয় ও পাতা বিকৃত হয়।
৫) আক্রান্ত পাতা ক্ষুদ্রাকৃতির ও কুঁকড়ে যায়।
৬) পত্রবৃন্তের দৈর্ঘ্য হ্রাস পায় ও শীর্ষ পাতাগুলো খাড়া হয়ে যায়।
৭) আক্রান্ত গাছের ফল ক্ষুদ্রাকৃতির ও বিকৃত হয় এবং কোন কোন সময় অস্বাভাবিকভাবে লম্বাটে হয় ও সিদ্ধ হয় না।
৮) গাছ খাটো হয় ও ফল কমে যায়।
জৈব ব্যবস্থাপনা:
১. ক্ষেতে আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তা তুলে মাটির নীচে পুতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. বীজ বপনের পূর্বে জমি উত্তমরূপে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
৩. ভাইরাস প্রতিরোধী ও সুস্থ বীজ থেকে চারা তৈরি করুন ও শুধুমাত্র সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করুন।
৪. জাবপোকা বা ভেক্টর পোকা বা সাদা মাছি বাহক পোকা দমনের জন্য প্রতিরোধে হলুদ ফাঁদ ব্যবহার করুন।
৫. ভাইরাস আক্রান্ত গাছ পুড়িয়ে বা মাটিতে ফুতে ফেলুন।
৬. চারা অবস্থায় বীজতলা মশারি বা নেট দিয়ে ডেকে রাখতে হবে।
৭. আক্রান্ত জমিতে পেঁপে ও কুমড়া জাতীয় সবজি প্রতি বছর চাষ না না করে শস্য পর্যায় অবলম্বন করা উত্তম।
৮. জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা:
১. জাব পোকা দ্বারা মোজাইক রোগের ভাইরাস ছড়ায়। কাজেই জাব পোকা নিয়ন্ত্রণ করুন।
জাবপোকা: Myzus persicae, Aphis malvae, Aphis gossypi প্রভৃতি দ্বারা এই রোগ ছড়ায়।
২. জাবপোকা বা ভেক্টর পোকা বা বাহক পোকা দমনের জন্য ইরাদ ৫৫%ইসি (সাইহ্যালোথ্রিন + ক্লোরপাইরিফস) পরিমান মত ব্যবহার , ১০-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করা।
৩) পেঁপে গাছের ২ মাস বয়স থেকে ১৫ দিন পর পর ৬-৭ বার স্প্রে করা।
লেখক: সমীরন বিশ্বাস, লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, মদিনা টেক লিমিটেড, ঢাকা।