কুয়াকাটা: পর্যটনে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ও নীল অর্থনীতি

দেলোয়ার জাহিদ: বাংলাদেশের সমুদ্র ও উপকূলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, উন্নত জীবিকা, এবং বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিয়ে স্বরব এখন বোদ্ধামহল। ২১ শতকের গোড়া থেকে  যেহেতু দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা কৃষি সেক্টরে নিযুক্ত সেহেতু বাংলাদেশ মূলত কৃষিনির্ভর রয়ে গেছে। চাল প্রধান কৃষি পণ্য, পাট এবং চা, উভয়ই বৈদেশিক মুদ্রার মূল ও গুরুত্বপূর্ণ উৎস হওয়া তা স্বত্বেও বাংলাদেশের পর্যটন খাতের প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রভাব ক্রমেই যেন এখানে পরিস্ফুটিত হয়ে উঠছে। কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে একটি বিরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান যা পর্যটনে বাংলাদেশের সমুদ্র-উপকূলকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে ৩২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুয়াকাটা, স্থানীয়ভাবে পরিচিত সাগর কন্যা হিসেবে।  মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, নীল আকাশ, বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি এবং চিরহরিৎ বনের চমৎকার সমাহার নিয়ে গড়ে উঠছে নজরকাড়া সব হোটেল মোটেল এ কুয়াকাটায়। দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটনে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম স্থানে।

২০২০ সালে, বাংলাদেশ শুধুমাত্র পর্যটন খাতে প্রায় ২১৭.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। এটি মোট দেশজ উৎপাদনের ০.০৫২ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার সমস্ত আন্তর্জাতিক পর্যটন প্রাপ্তির প্রায় ১ শতাংশের সাথে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পর্যটন খাতের প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক প্রভাবগুলোকে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করার সময় এসেছে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে পর্যটন খাতের এর প্রতিশ্রুতি কিছুটা সীমিত এর কারণ হিসেবে এ খাতে বিনিয়োগ স্বল্পতাকে ও দায়ী করা হয়। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প অর্থনীতির বর্তমান পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা। এছাড়াও, ২০০৯ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ভ্রমণ খাত থেকে ১১৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পেয়েছে দাবি করা হয়েছে। পর্যটন সেক্টরের অর্থনৈতিক বিকাশ পর্যালোচনায় দেখা যায় প্রতি বছর এ খাতটি ২.২৩ মিলিয়ন চাকুরীর বাজার ও তৈরী করে। অভ্যন্তরীণ এবং বহির্মুখী দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট আকর্ষণের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি গড়ে তুলে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হয় দেশটিকে। সমুদ্র অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জণসহ দারিদ্র বিমোচন, অশিক্ষা দূর ও চিকিৎসা সুবিধা দানে রয়েছে অনেক পশ্চাৎপদতা ও সীমাবদ্ধতা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন  কোস্টাল ১৯ কে নিয়ে স্পেশাল প্রজেক্ট কমিটি গঠন করেছে। উপকূলীয় ১৯ জেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রকল্প নিতে তথা উপকূলে ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহানি ও নীরব ক্যান্সারের শিকার অগুনিত অধিবাসীর ও সুপেয় পানির অভাব দূর করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে  । উপকূলের অধিবাসীদের জীবনসংগ্রাম ও কষ্টগাঁথার মুলে রয়েছে রাষ্ট্র ও অর্থনীতির সাথে তাদের সংযোগহীনতা রয়েছে সমস্যা সঙ্কটের পাশাপাশি সমুদ্র অর্থনীতির এক অপার সম্ভাবনা যা আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে মোকাবেলা করতে হবে। মোকাবেলা করতে হবে, শুধু সরকার  নয় বরং স্বেচ্ছাশ্রম নিয়ে দুর্গতদের সেবা পার্শ্বে দাঁড়াতে হবে।

লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি।