"সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ ফেরার পথে হঠাৎ দমকা হাওয়ার কবলে এমভি পারিজাত" আমাদের কিছু শিক্ষা নেয়া জরুরী

বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ:সেন্ট মার্টিন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে ফেরার পথে সাগরে হঠাৎ দমকা হাওয়ার কবলে পড়ে ভয়ানক দুলতে থাকে এমভি পারিজাত নামের পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফে ফেরার পথে সাগরে হঠাৎ দমকা হাওয়ার কবলে পড়ে ভয়ানক দুলতে থাকে এমভি পারিজাত নামের পর্যটকবাহী জাহাজ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের ঘটনা এটি। সে সময় জাহাজটিতে শিক্ষাসফরে যাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২৪০ জন পর্যটক ছিলেন।

বঙ্গোপসাগরে উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে জাহাজটি ভয়ানক দুলতে থাকলে পর্যটকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেন্ট মার্টিন জেটিঘাট থেকে এমভি পারিজাত জাহাজটি টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হয়। জেটিঘাট থেকে ছেড়ে আসার ১৫ মিনিটের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে দমকা হাওয়ায় ঢেউয়ের কবলে পড়লে পর্যটকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় অনেকেই কান্নাকাটি করতে থাকেন। জাহাজটিতে প্রায় আড়াই শ পর্যটক ছিলেন। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছিলেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে জাহাজটি টেকনাফের দমদমিয়া ঘাটে পৌঁছায়।(সূত্র :প্রথম আলো, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)

এ সংবাদের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে মুহূর্তের মধ্যে নেট দুনিয়ায়। সৃষ্টি করেছে অজানা আতংকের।  প্রাপ্য ভিডিওটিতে যে পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে তা থেকে স্পষ্টতই ধরে নেয়া যায় দুর্ঘটনা রোধে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আগেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার অনুপস্থিতি বা ব্যবস্থা নেওয়ার  প্রস্তুতির অভাব দৃশ্যমান। উন্নত ন্যাভিগেশনাল প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করার সুযোগ থাকলে উপযুক্ত রুট সেট করা ও যাত্রার আগেই আবহাওয়া বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যেত। যেহেতু প্রতি বছর সামুদ্রিক দুর্ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায় কারণ কর্মচারী এবং ক্রু সদস্যদের পক্ষ থেকে মানবিক ত্রুটি এবং অবহেলার মতো বিষয় ঘটে। তবে প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে এ ধরনের আকস্মিক ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যার জন্য আন্তর্জাতিক কতগুলো পদ্ধতি মেনে চলার উপর জোর দেয়া হয়।

এধরণের নিরাপত্তা আশংকা থেকে আমাদের কিছু শিক্ষা নেয়া জরুরী যেমন:

  • উন্নত ন্যাভিগেশনাল প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করা
  • উপযুক্ত রুট সেট করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি মেনে চলা
  • জাহাজগুলোর ফিটনেস চেক, নিয়মিত পরিদর্শন এবং সরঞ্জামের অবস্থা মূল্যায়ন
  • জাহাজের গতিবিধি ট্র্যাক করা এবং স্যাটেলাইট, নেভিগেশনাল প্রযুক্তি এবং অন্যান্য সরঞ্জামগুলির মাধ্যমে আবহাওয়ার অবস্থা
  • সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা
  • প্রযুক্তিগত সমস্যা বা সরঞ্জামের ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া
  • সমস্ত ক্রু সদস্যদের বোর্ডে তাদের দায়িত্বের জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করা
  • জাহাজের ডকুমেন্টেশন আন্তর্জাতিক প্রয়োজনীয়তা মেনে চলছে কিনা তা পরীক্ষা করা
  • উপরন্তু, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ক্রুদের জড়িত করা গুরুত্বপূর্ণ
  • এটি বোর্ড কাজের সময় তাদের দায়িত্ববোধ এবং মনোযোগকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।

সবশেষে, সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বর্তমান প্রবিধান মেনে চলছে তা নিশ্চিত করতে জাহাজের নিরাপত্তা পরিদর্শন প্রক্রিয়া অবশ্যই কঠোর এবং নিয়মিত পুনরাবৃত্তি করতে হবে।(নেট তথ্যসূত্র)

বাংলাদেশে সামুদ্রিক দুর্যোগে প্রতিরোধ করতে ও  দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য দুর্ঘটনা ঘটার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন, সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ ফেরার পথে এমভি পারিজাত যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল সে ক্ষেত্রে জাহাজ ও যাত্রীদের  নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোন ত্রুটি ছিল কিনা অনতিবিলম্ভে তা তদন্ত করে দেখা এবং প্রতিকারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি।