ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক১, ড. মোঃ মেহেদী আলম২, ড. নিয়াজ আল হাসান৩, আবুল বাশার৪, মোঃ মাহমুদুল হাসান৫ : আবহমান কাল থেকেই মাছে-ভাতে বাঙালীর আমিষের প্রধান ও নির্ভরযোগ্য উৎস মাছ। নানাবিধ কারণে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন সেরকম বৃদ্ধি না পেলেও বদ্ধ জলাশয়ে চাষের মাছের উৎপাদন (যাকে একোয়াকালচার বলে) বেড়েছে বহুগুণ।
মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিগত দুই দশকে বদ্ধ জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ৮.৫৭ লক্ষ মে. টন (২০০২-০৩) থেকে ২৭.৩১ লক্ষ মে. টনে (২০২১-২২) উন্নীত হয়েছে, যা মোট উৎপাদনের (৪৭.৫৯ লক্ষ মে. টন) প্রায় ৫৭.৪%। আরও বিশেষভাবে বলতে গেলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গত ১৪ বছরে (২০০৮-০৯ থেকে ২০২১-২২) চাষকৃত মাছের উৎপাদন হয়েছে আড়াই গুনেরও বেশি। শুধুমাত্র পুষ্টির চাহিদা পূরণই নয়, একোয়াকালচার এর সাথে জড়িত সকল স্টেকহোল্ডারদের (মৎস্য হ্যাচারি মালিক, মৎস্য চাষী, মৎস্য ব্যবসায়ী, খাদ্য-ঔষধের দোকানী, রপ্তানীকারক ও অন্যান্য) কর্মসংস্থান তৈরী, বৈদেশিক মুদ্রা আয়, জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছে এই সেক্টর।
মৎস্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী মৎস্য সেক্টর হতে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ৫১৯২ কোটি টাকা, যা এই সেক্টরকে দেশের ২য় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সেক্টর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে এই সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় দুই কোটি মানুষ, যাদের একটি বড় অংশ অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত। মৎস্যচাষের গুরুত্ব বিবেচনায় বর্তমান সরকার একোয়াকালচারকে এসডিজি (এসডিজি ১.১, ২.১, ৫.৩, ১৩.১, ১৪.১ লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে। যার ফলশ্রুতিতে সরকার এসডিজি ২০৩০, ভিশন ২০৪১, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ সহ অন্যান্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে একোয়াকালচারকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর মাঝে অন্যতম হলো, ২০৪১ সালে মাছের মোট উৎপাদন ৮১ লক্ষ মে. টনে উন্নীত করা (যার ৬২% একোয়াকালচার), এবং হেক্টর প্রতি চিংড়ির উৎপাদন ০.৯৮৭ মে. টন থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১.০৭ মে. টনে উন্নীত করা। এসব টার্গেট সফল করার লক্ষ্যে সরকার হ্যাচারী ও খাদ্য শিল্পে ভর্তুকি প্রদান, করোনা মহামারীর সময়ে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান, সরকারী সংস্থার (মৎস্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট) মাধ্যমে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, বেসরকারী খাতকে (খাদ্য, ঔষধ ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প) উদ্বুদ্ধকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক ফিশারিজ শিক্ষার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণসহ নানাবিধ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশ চাষের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদনে পৃথিবীতে ৫ম শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ও চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিগত ২০ বছরে হ্যাচারী, খাদ্য ও ঔষধ শিল্পের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে হ্যাচারীর সংখ্যা ১০৬৬ টি, যার মোট রেনু উৎপাদন প্রায় ৭ লক্ষ কেজি। খাদ্য তৈরী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১২৮ টিরও বেশী, যাদের মোট বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা রযেছে ৫০ লক্ষ মে. টনেরও বেশী। মাছের ঔষধ প্রস্তুত ও বিপণন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭৬১ টি, যেখানে পণ্য ও সেবার আনুমানিক বাজারমূল্য ২০ বিলিয়ন টাকারও বেশী।
মৎস্য সেক্টরের এই বহুমুখী সফলতার পেছনে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ফিশারিজ গ্রাজুয়েটগণ অন্যতম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৭ সালে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফিশারিজ গ্রাজুয়েট তৈরি শুরু হয়। মাৎস্যবিজ্ঞানসহ কৃষি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় উচ্চ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে। বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবেলা এবং টেকসই প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ‘কৃষি’ এবং ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রতি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে সর্বমোট ৫৩ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, এর মধ্যে ১৯ টি কৃষি, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ফিশারিজ (অনার্স) ডিগ্রী প্রদান করা হচ্ছে। এই ডিগ্রির কারিকুলাম/সিলেবাস অত্যন্ত যুগোপযোগি ও আন্তর্জাতিক মানের। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া বছরে প্রায় দেড় হাজার গ্রাজুয়েট তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মৎস্য সেক্টর পরিচালনার জন্য দক্ষতা অর্জন করে সরকারী (মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট), আধা- সরকারী (বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন) ও বেসরকারি (ফিড কোম্পানি, ঔষধ ও রাসায়নিক কোম্পানি, মৎস্য হ্যাচারী ও খামারে) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
মৎস্য উৎপাদনে উদীয়মান সমস্যা হচ্ছে মাছের রোগ, এবং প্রতিবছর এর কারণে চাষীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ও অন্যান্য জীবাণু গঠিত বিভিন্ন ধরনের মৎস্য রোগের আবির্ভাব ঘটছে। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে মাছের চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না, অর্থাৎ চাষীর খামারে মৎস্য রোগের ডায়াগনোসিস এবং ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার মত তাদের নীতিগত ব্যবস্থা নেই। কিন্তু মাছের খাদ্য ও কেমিক্যাল কোম্পানিতে নিয়োজিত হয়ে যারা মাঠ পর্যায়ে মাছের রোগের চিকিৎসা করে আসছেন, তাদের অধিকাংশ হচ্ছেন ফিশারিজ গ্রাজুয়েট। ফিশারিজ গ্রাজুয়েটরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মাঠ পর্যায়ে এই সেবা দিয়ে আসছেন কারণ তারা আন্ডারগ্রাজুয়েট (B.Sc.) লেভেলে Icthyology, Fish Farm Design and Constrution, Fish Pathology, Fish Parasitology, Fisheries Microbiology, Shellfish Diseases, Aquatic Animal Health & Immunology, Microbiology of Fishery products, Water Quality Management, এবং Environmental Management for Aquaculture, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ফিশারিজে ডিগ্রি প্রদান করা হয় এরকম সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ৪/৫ বছরে মৎস্য চিকিৎসা পদ্ধতির আধুনিকায়নের জন্য Fish Pharmacology কোর্স চালু করা হয়েছে।
আমরা জানি, মাছ হচ্ছে শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী (Poikilothermic animal)। মাছ রোগাক্রান্ত হওয়া উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট (Homeothermic animal) স্থলজ প্রাণীর মত নয়, এবং এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা অনেকগুলো ফ্যাক্টর এর সাথে সম্পৃক্ত। যেমন, পানি ও মাটির ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলী, জীবাণু, মাছের মজুদ ঘনত্ব, ব্রুড মাছ ও পোনার গুণাগুণ, ইত্যাদি ফ্যাক্টরগুলো মৎস্য রোগকে প্রভাবিত করে। একইসাথে মাছের বায়োলজি ও খাদ্যাভ্যাস স্থলজ প্রাণীর চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ায় মাছের রোগব্যাধি, রোগের ডায়াগনোসিস, রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা, ইত্যাদি স্থলজ প্রাণীর চেয়ে আলাদা। স্থলজ প্রাণীর (যেমন, গরু বা ছাগল) মত শুধুমাত্র রোগ সনাক্তকরণ ও ঔষধ প্রদানের মাধ্যমে মাছের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। মাছের রোগের চিকিৎসায় কেবল দৈহিক চিকিৎসার জ্ঞান যথেষ্ট নয়, বরং পুকুরের জলজ পরিবেশ তথা মাটি ও পানির ভৌত-রাসায়নিক ও জৈবিক নিয়ামকগুলির আন্তঃসম্পর্ক সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা গ্রহণ করতে হয়। পুকুর বা জলজ পরিবেশের ভৌত-রাসায়নিক ও জৈবিক অবস্থার উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট করার পর মাছের চিকিৎসা করতে হয়। মাছের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ফিশারিজ গ্রাজুয়েটগণ জলজ পরিবেশের ভৌত-রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলীর পাশাপাশি তাদের জটিল সম্পর্ক (যেমন, অক্সিজেনের সাথে পানির পিএইচ ও তাপমাত্রার সম্পর্ক) ও বিভিন্ন চক্র (যেমন, নাইট্রোজেন চক্র) সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রোগ প্রতিরোধক হিসেবে প্রোবায়োটিকের ব্যবহার মাত্রা নির্ভর করে পানির গুণাগুণ ও জলবায়ুর উপর, কোনোভাবেই মাছের দৈহিক অবস্থার উপর নয়। মাটি ও পানি তথা পুকুরের জলজ পরিবেশের সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের ভেতর যে ভৌত-রাসায়নিক ও জৈবিক সম্পর্ক রয়েছে তা সঠিকভাবে বোঝার জন্য ‘Limnology’ নামক কোর্স শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক এবং প্রয়োগিকভাবে পড়ানো হয়।
বর্তমান সরকারের মৎস্যবান্ধব নীতির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে মৎস্য সেক্টরে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন, ও প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশের মাধ্যমে মৎস্য খাত দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ সময় মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২৩ প্রণয়ন হতে যাচ্ছে, যা অবশ্যই একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। কিন্তু খসড়া বিধিমালার ষষ্ঠ অধ্যায়ের বিধি ২০(১) এবং ২০(৪) বিধিতে মৎস্য চিকিৎসায় ভেটেরিনারি ডাক্তারদের যুক্ত করা হয়েছে; যা মৎস্য সেক্টরের সাথে সাংঘর্ষিক, এবং এই সেক্টরে নিয়োজিত সকলে চরম হতাশায় ফেলেছে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।
বাংলাদেশে ভেটেরিনারি চিকিৎসার সূত্রপাত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে পাস করা গ্রাজুয়েটদের মাধ্যমে। পরবর্তীতে, বাংলাদেশে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারিতে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে, ফলে ভেটেরিনারি চিকিৎসকগণ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রাণি চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে লাইভস্টক সেক্টরকে অনেক এগিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ভেটেরিনারি শিক্ষা স্থলজ প্রাণীর (Homeothermic animal) চিকিৎসা ভিত্তিক, জলজ প্রাণীর (Poikilothermic animal) চিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষা ভেটেরিনারি গ্রাজুয়েটদের দেয়া হয় না। কারণ এদেশে মাৎস্যবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়েছে, যেখানে একুয়াটিক ভেটেরিনারি সংক্রান্ত যে সমস্ত কোর্সসমূহ পড়ানো হয়, সে আলোকেই ফিশারিজ সায়েন্স বিকশিত হয়েছে। ভেটেরিনারি চিকিৎসক যাদের জলজ ইকোসিস্টেম, জলজ প্রাণী, তথা শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী সম্পর্কে পড়ানো হয় না, তাদের পক্ষে মাছের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় উত্তম মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনায় মাছের রোগ নিরাময়ে, ‘মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৩’- এ ফিশারিজ গ্রাজুয়েট অন্তর্ভুক্ত না করে ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের দায়িত্ব দেয়া ফিশারিজ সেক্টরের অগ্রযাত্রার সম্পূর্ণরূপে পরিপন্থী।
থাইল্যান্ড পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একোয়াকালচার ভিত্তিক মাছ উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারক দেশ, এবং এশিয়া মহাদেশে কৃষি বিষয়ক গবেষণা এবং উন্নয়নে থাইল্যান্ডের অগ্রনী ভূমিকা রয়েছে। থাইল্যান্ডের AIT থেকে বাংলাদেশের কৃষির বিভিন্ন সেক্টরের বহু গবেষক, কর্মকর্তা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কৃষি তথা বৈশ্বিক মাছ উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা দেশ থাইল্যান্ডের মৎস্য সেক্টরের সার্বিক বিষয়ে নেতৃত্ব দেয় উক্ত দেশের সরকারী প্রতিষ্ঠান-মৎস অধিদপ্তর, যেখানে জলজ প্রাণীর রোগের ডায়াগনোসিস, চিকিৎসা প্রদান, ইত্যাদি বিষয়ে সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ। জলজ প্রাণীর রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলির মধ্যে রয়েছে আইন/নিয়ম জারি, জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, রোগ নজরদারি কর্মসূচি, সক্ষমতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থাগুলির সাথে যৌথভাবে কাজ করা। অধিকন্তু, থাইল্যান্ডের মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাদেশিক মৎস্য কর্মকর্তার মাধ্যমে জলজ প্রাণীর রোগের জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য Contingency পরিকল্পনা তৈরি করেছে। প্রাদেশিক মৎস্য কর্মকর্তা প্রতিটি প্রদেশে জরুরী জলজ প্রাণীর রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন, যেখানে Aquatic Animal Health Research and Development Division (AAHRDD) এবং Songkhla Aquatic Animal Health Research Center (SAAHRC) মাছের রোগ নির্ণয় এবং পরীক্ষাগার হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের ৪র্থ শীর্ষ মাছ উৎপাদনকারী দেশ ভিয়েতনামে মাছের রোগ নজরদারি, পর্যবেক্ষণ, নির্ণয় ও চিকিৎসায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করে তারা হলো Research Institute for Aquaculture No. 1 (RIA1), Research Institute for Aquaculture No. 2 (RIA2), Research Institute for Aquaculture No. 3 (RIA 3), Nha Trang Fisheries University, Can Tho University, এবং National Fisheries Quality Assurance and Veterinary Directorate। অথচ দুঃখজনকভাবে মাছের রোগ নজরদারিতে বিশ্বের ৫ম শীর্ষ মাছ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থা ঐ সমস্ত দেশের তুলনায় অনেক দুর্বল এবং ব্যতিক্রম। এ সমস্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ‘মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৩’-এর দুটি বিধিকে নিম্নরূপে পরিমার্জন করা যেতে পারে।
ষষ্ঠ অধ্যায়ের বিধি ২০(১)
কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ মৎস্যচাষে ব্যবহৃত ক্ষতিকর নহে এরূপ রাসায়নিক পদার্থের তালিকা এবং রোগাক্রান্ত মাছের চিকিৎসার্থে ব্যবহৃত হইতে পারে এইরূপ ঔষধের তালিকা মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর এবং মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইন্সটিটিউট এর সমন্বিত উদ্যোগে প্রস্তুত করে প্রকৃতভাবে সরকারের অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করিবেন।
ষষ্ঠ অধ্যায়ের বিধি ২০(৪)
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে মাৎস্যবিজ্ঞানে চার বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রী প্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা/বিজ্ঞানী/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাছের রোগ নিরাময়ে যে ঔষধ যেভাবে ব্যবস্থাপত্রে নির্দেশনা প্রদান করিবেন সেইভাবে প্রয়োগ করা যাইবে এবং খামার মালিক এইরূপ ব্যবস্থাপত্র আহরণ ও বিক্রয়ের শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংরক্ষণ করিবেন।
মৎস্য সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে এ সমস্ত বিধিমালা নিরাপদ মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে মাছ রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এ সমস্ত বিধিমালাগুলো FAO, WTO, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন স্কিম, ইত্যাদি নির্দেশিকা ও নীতিমালা অনুসরণ করে তৈরি করা হয়। আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা এ সমস্ত নীতিমালার বাস্তবায়ন কোন দেশের উপর চাপিয়ে দেয় না। বরং তাদের নীতিমালা অনুসরণ করে যে কোন দেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ঠিক রেখে নিজেদের মত করে কাস্টমাইজ করে নিতে পারে। কারণ একেক দেশে একেক উপাধিতে বিশেষজ্ঞগণ মাছের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন যেমন, একোয়াকালচারিস্ট, ফিশ প্যাথোলজিস্ট, একুয়াটিক ভেটেরিনারিয়ান, সরকারী সংস্থা ইত্যাদি। অনেক একোয়াকালচার উৎপাদনকারী দেশে প্রাইভেট সেক্টর ভিত্তিক মাছের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয় এবং বাংলাদেশের মাছের চিকিৎসার প্রায় শতভাগ প্রাইভেট সেক্টর ভিত্তিক, যেখানে ফিশারিজ গ্রাজুয়েটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। যেহেতু বাংলাদেশের মৎস্য সেক্টর মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়, অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান, খাদ্য ও ঔষধ কোম্পানি, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা, ইত্যাদি মিলে বৃহৎ পরিবারে পরিণত হয়েছে, এবং আগামী দিনে মাছচাষে মাছের রোগ সংক্রান্ত সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ আরও বৃহৎ আকার ধারণ করবে, সেজন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন পর্যায়ে নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৭ সনে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকেই মাছের রোগ ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স পড়ানো হচ্ছিল। ১৯৯০ এর দশকে ব্রিটিশ সরকারের ODA এর অর্থায়নে যুক্তরাজ্যের স্টার্লিং বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহযোগিতায় মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে নির্মিত হয় অত্যাধুনিক মানের ‘ফিশ ডিজিজ’ ল্যাবরেটরি’। এই ল্যাবরেটরির মাধ্যমে মাছের রোগ সংক্রান্ত অনেক গবেষণা হয়, অনেক এমএস এবং পিএইচডি থিসিস লেখা হয়, এবং ইন্টারন্যাশনাল এবং ন্যাশনাল জার্নালে বহু আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। এসকল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাছের রোগের ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসা সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মৎস্য অধিদপ্তরের সুপারিশে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ শিক্ষায় মাছের রোগ সংক্রান্ত শিক্ষা ও গবেষণা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করে ফিশারিজ শিক্ষাকে আরও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে ড্রাগস্ এবং কেমিক্যালস কোম্পানিগুলোর আওতায় মাঠ পর্যায়ে যারা মাছের রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন, তাদের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে ফিশারিজ গ্রাজুয়েট। তাই মৎস্য চিকিৎসায় ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের বিকল্প খোঁজার করার কোন সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ‘মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০’ এর উপধারা ১৫ অনুযায়ী মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা চাষীদের জন্য মাছের খাদ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিশ নিউট্রিশন’ ল্যাবরেটরির সুবিধা নিতে পারেন। যেমন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ‘ফিশ নিউটিশন’ ল্যাবরেটরি সারা বছরই মৎস্য অধিদপ্তরকে মাছের খাদ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে আসছে। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ‘ফিশ নিউট্রিশন’ ল্যাবরেটরির মত ‘ফিশ ডিজিজ’ ল্যাবরেটরিও মৎস্য অধিদপ্তরকে মাছের রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে পারে। সেক্ষেত্রে ‘মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০’ এর মত ‘মৎস্য রোগ এবং চিকিৎসা’ সম্পর্কিত একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে, এবং সে আইনে মাছের রোগ ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা সম্পর্কিত সার্বিক বিষয় উল্লেখ থাকতে হবে। পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যে সমস্ত মৎস্য কর্মকর্তাগণ মাছের রোগ সম্পর্কিত আধুনিক কোর্স আগে অধ্যায়ন করেন নাই, তাদের সকলকে ধাপে ধাপে Fish Disesae, Disease Diagnosis and Treatment, Pharmacology, ইত্যাদি বিষয়ে আধুনিক মানসম্পন্ন কমপক্ষে তিন মাসের ট্রেনিং প্রদান করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পর্যায়ে: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫টি কেন্দ্র এবং ৫টি উপকেন্দ্র রয়েছে, যেগুলো প্রায় সারাদেশে বিস্তৃত। ময়মনসিংহে অবস্থিত স্বাদুপানি কেন্দ্রসহ অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে মাছের রোগ সংক্রান্ত গবেষণা এবং ডায়াগনোসিস এর সার্বিক সুযোগ-সুবিধা। ময়মনসিংহসহ অনেকগুলো কেন্দ্র থেকে মাছের রোগের চিকিৎসার নিমিত্তে চাষীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সকল কেন্দ্রে রয়েছে আধুনিকমানের গবেষণাগার, যেগুলোতে ল্যাবরেটরির মান আধুনিকায়নের মাধ্যমে আরও গুণগত মানের মৎস্য চিকিৎসা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
মৎস্য অধিদপ্তর পর্যায়ে: থাইল্যান্ডের মৎস্য অধিদপ্তরের মত বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় ডিডি অফিসের আওতায় আধুনিক মানের ফিস ডিজিজ ল্যাবরেটরি নির্মাণ করা প্রয়োজন। মৎস্য অধিদপ্তরকে অতি দ্রুত স্বল্প মেয়াদী প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় পর্যায়ে এ ধরনের ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে। এ সমস্ত ল্যাবরেটরি থেকে চাষীদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য মোবাইল ভিহাইকেল-বেসড মৎস্য চিকিৎসা সার্ভিস প্রবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তিনটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি রয়েছে, যেগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং খুলনাতে অবস্থিত। এগুলোতে রপ্তানিযোগ্য মৎস্য এবং মৎস্য পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য অনুজীব থেকে শুরু করে যেকোনো দূষিত পদার্থ পরীক্ষা করার বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি সুবিধা রয়েছে। এই ল্যাবরেটরির সুবিধাগুলো ব্যবহার করে মাছের রোগ নিরাময় করা অতীব সহজ। মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত শতাধিক মৎস্য খামার রয়েছে, যেখানে ফিশারিজ গ্রাজুয়েটরা ঐ খামারগুলোর ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করে আসছেন। খামারগুলোতে মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য স্বল্প পরিসরে কিছু ল্যাবরেটরি ফেসিলিটিস, যেখানে মাছের ফিজিওলজি বুঝা, মাছের পরিপক্কতা নির্ণয় করা, লার্ভাল রেয়ারিং, লার্ভার রোগ চিকিৎসা, ইত্যাদি কাজের প্রাথমিক সুবিধা রয়েছে। সরকারী মৎস্য খামারগুলোর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে চাষী পর্যায়ে গুণগতমানের মাছের পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করা, এবং এ কাজটি তারা অত্যন্ত সফলতার সাথে করে আসছেন। দেশব্যাপী বিস্তৃত এই মৎস্য খামারগুলোতে মাছের রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করার জন্য আধুনিক মানের ল্যাবরেটরি স্থাপন করে প্রান্তিক পর্যায়ে চাষীদের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
প্রাইভেট সেক্টর পর্যায়ে: যেহেতু একোয়াকালচার উৎপাদনকারী অনেক দেশের মতো বাংলদেশেও প্রাইভেট সেক্টর ভিত্তিক মৎস্য চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, এবং সেখানে ফিশারিজ গ্রাজুয়েটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, সেজন্য প্রাইভেট সেক্টরে মৎস্য রোগের ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি, এবং আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠার জন্য সরকারের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের সাংগঠনিক পর্যায়ে: পৃথিবীর একোয়াকালচার ভিত্তিক মোট মৎস্য উৎপাদনের ৯০% আসে এশিয়া থেকে। এশিয়ার অনেক দেশ যেমন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে ফিশারিজ গ্রাজুয়েট তৈরী হয়, তারাই মাছের রোগ সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজারের মতো ফিশারিজ গ্রাজুয়েট তৈরি হচ্ছে, ভবিষ্যতে চাষী পর্যায়ে তারাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, কিন্তু তাদের কোন সাংগঠনিক কাঠামো নেই.। সেজন্য ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের পেশাগত অধিকার, ন্যায্য দাবি আদায় ও মান মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের নেতৃত্বে অতি দ্রুত ‘ফিশারিজ গ্রাজুয়েট কাউন্সিল’ গঠন করা প্রয়োজন। যেহেতু বাংলাদেশ ফিশারিজ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হচ্ছে ফিশারিজ গ্রাজুয়েট, সেজন্য উল্লেখিত প্রেক্ষাপটের আলোকে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে ভেটেরিনারি গ্রাজুয়েটদের সাথে ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের অহেতুক সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হবে, এবং হাজারো মেধাবী ফিশারিজ গ্রাজুয়েটদের ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হবে।
লেখক: ১ প্রফেসর, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, ২ ফিশারিজ অ্যান্ড ওশান সায়েন্সেস অনুষদ, সহকারী প্রফেসর, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা, ৩ লেকচারার, ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ,৪ লেকচারার, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ, ৫ লেকচারার, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
*Email: This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.