ডাঃ আবদুর রহমান (রাফি): যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আযহা পালিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী এ বছর জুন মাসের ২৯ তারিখ বাংলাদেশের মানুষ ঈদুল আযহা উদযাপন করবেন। ঈদুল আযহার অন্যতম একটি আনুষ্ঠানিকতা হলো পছন্দের পশুকে কোরবানি করা।
মুসলিমদের এই উৎসবে সামর্থ্যবানরা পছন্দমতো পশু কোরবানি দিয়ে আল্লাহর কাছে তার তাকওয়া প্রদর্শন করে। সামর্থ্যবানদের কোরবানি গরুর মাংসের একটি অংশ থাকে গরিবদের জন্য। আর এই কোরবানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সুস্থ ও সবল পশু নির্বাচন করা। সবাই ভালো গরুটিই পছন্দ করতে চায়, এজন্যে সবার নজর থাকে গরুর স্বাস্থ্যের প্রতি। এই উৎসবকে পুঁজি করে অসাধু কিছু ব্যবসায়ী স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করে দ্রুত গরু মোটাতাজাকরণের দিকে ঝুঁকছে। তাই কোরবানির হাটে যাওয়ার আগে অবশ্যই সুস্থ সবল পশু চিহ্নিত করার উপায়সমূহ জেনে নেওয়া উচিত।
কোরবানির গরু সুস্থ ও রোগমুক্ত কিনা তা চেনার উপায়:
১) হরমোন ও স্টেরয়েড ব্যবহার করে মোটাতাজা করেছে কিনা তা জানার উপায়: স্টেরয়েড দিয়ে মোটাতাজা করা গরু স্বাস্থ্যবান দেখাবে কিন্তু এরা তেমন চটপটে হবে না। খুব বেশি নড়াচড়া করতে দেখা যাবে না। গরুর শরীরে আঙ্গুল দিয়ে হালকা চাপ দিলে ঢেবে যাবে। কিন্তু সুস্থ গরুর শরীরে আঙ্গুলের চাপ দিয়ে আঙ্গুল সরিয়ে নিলে তাৎক্ষণিকভাবে পূর্বের অবস্থায় ফেরত আসবে।
২) সুস্থ পশুর চোখ উজ্জ্বল ও তুলনামূলক বড় আকৃতির হবে। অবসরে জাবর কাটবে (পান চিবানোর মতো), কান নাড়াবে, লেজ দিয়ে মাছি তাড়াবে। বিরক্ত করলে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, সহজেই রেগে যাবে।
৩) সুস্থ গরুর নাকের সামনের কালো অংশ (Muzzle) ভেজা থাকবে, অসুস্থ গরুর ক্ষেত্রে শুকনো থাকবে। এছাড়া অসুস্থ গরুর শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে।
৪) সুস্থ গরুর গোবর স্বাভাবিক থাকবে, পাতলা পায়খানার মতো হবে না।
৫) সুস্থ গরুর সামনে খাবার এগিয়ে ধরলে জিহ্বা দিয়ে তাড়াতাড়ি টেনে নিতে চাইবে। অপরদিকে অসুস্থ পশু ভালোমতো খেতে চাইবে না।
৬) অসুস্থ গরু ঝিমায়, নিরব থাকে। খুব বেশি আশেপাশের কোলাহলে সাড়া দেয় না।
কোরবানির জন্য দেশে গরু, মহিষ, ছাগল প্রভৃতি পশু বা প্রাণীর চাহিদা ব্যাপক। পূর্বে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও অনেক পশু আমদানি করা হত। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এবছর দেশে কোরবানিযোগ্য প্রাণীর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। এবছর ১ কোটির মতো পশু কোরবানি করা হবে বলে আশা প্রকাশ করা যাচ্ছে। পশু ক্রয় থেকে শুরু করে মাংস ভক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বক্ষেত্রে। রোগব্যাধির প্রকোপ বেশি হলে প্রাণী চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।
হাট থেকে পশু কিনে আনার পর পশুর সামনে স্যালাইনযুক্ত পানি দিন। পশুর কোনো অসুস্থতা পরিলক্ষিত হলে ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিন। পশুকে ভাতের মাড় বা কাঠাঁলের চোবড়া বেশি খাওয়াবেন না, এতে করে পশুর পেটে গ্যাস জমা হয়ে পেট ফুলে যেতে পারে।
কোরবানির পশু কেনার পর আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষই পশুর প্রতি বেশি দরদ দেখাতে গিয়ে জবাইয়ের পূর্বে বেশি করে খাবার খাওয়ায়, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে করে মাংসের গুণগত মান কমে যেতে পারে৷ পশু জবাইয়ের ১২ ঘন্টা পূর্ব থেকে পশুকে কোনো খাবার না দেওয়াই ভালো এবং বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে৷ এতে করে চামড়া ছাড়ানো সহজ হবে৷
লেখকঃ বি. এস. সি. ভেট সায়েন্স এন্ড এ. এইচ.
এম. এস. (ডেইরি সায়েন্স)
প্রয়োজনে: 01987899651