কৃষিবিদ ড. এম. মনির উদ্দিন :পৃথিবীর ইতিহাস পরিবর্তনে যে ক’জন মহান নেতা নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে মনের অজান্তেই চলে আসে একটি নাম হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাজ্ঞালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সারাজীবন জাতির জন্য সংগ্রাম এবং মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনের মধ্য দিয়ে তিনি বিশ্বে এক অনুকরণীয় নেতায় পরিণত হন। বঙ্গবন্ধুর সব্বোর্চ ত্যাগ, আপসহীন মনোভাব, সুচিন্তিত এবং সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার কারণে তৎকালীন সাম্রাাজ্যবাদী অপশক্তি মার্কিন যুক্তরাস্ট্র শত চেষ্টা করেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রুখতে পারেনি। আর সে কারনেই সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির কুচক্রের নির্মম শিকার হন বাংলার এই মহান নেতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান।
বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সংগ্রাম এবং দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন যে, কৃষির উন্নয়নের মধ্য দিয়েই কেবল বাঙ্গালী জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি আসতে পারে। আর সে কারনেই সাড়ে তিন বছরের শাসন সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের কৃষি উন্নয়নের জন্য গড়ে তোলেন বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালে দেশে তুলার চাষ সম্প্রসারণ করার জন্য তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেন। পুর্নগঠন করেন হর্টিকালচার বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি ও রাবার উন্নয়ন কার্যক্রম। বঙ্গবন্ধু কৃষি সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বীজ ও সার সরবরাহের প্রতিষ্ঠান বিএডিসিকে পুর্নগঠন করে সারাদেশে বীজকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য ১৯৭৩ সালে কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৩ সালে কৃষিতে গবেষণা সমন্বয়ের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং নুতন নামে পুর্নগঠন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট। এগ্রিকালচার রিসার্স ল্যাবরেটরিকে উন্নীত করেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট হিসেবে। এছাড়া তিনি ইশ্বরদীতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউট। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রতিষ্ঠা করেন পরামানু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট। মৎস্য ও পশু সম্পদের উন্নতির জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়।
কৃষি শিক্ষাকে দেশের উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত করতে ১৯৭৩ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভাষণে তিনি কৃষি বিপ্লবের কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। কেননা গ্রামই সব উন্নয়নের মুল কেন্দ্র। গ্রামের উন্নয়ন আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যখন বেগবান হবে তখন গোটা বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সম্মুখপানে। মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের কৃষি শিক্ষায় আকৃষ্ট করে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মানসে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেনীর পদমর্যাদা প্রদান করেন যা প্রতিবছর কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের তিনি কৃষি বিপ্লব সফল করার আহবান জানান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর পথ অনুসরণ করে কৃষি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করে তা বাস্তবায়ন করেন এবং এর কারনে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ন। দেশে বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নের্তৃত্বে কৃষিতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে বিশ্বে অনন্য রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। দেশের ১৭ কোটি মানুষের বিবেচনায় প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার কোটি টন খাদ্যের চাহিদা রয়েছে যার পুরোটাই আভ্যন্তরীন উৎপাদনের মাধ্যমে পুরন করা হচ্ছে।
এফএওর মিটিং দ্যা আন্ডার নিউট্রিশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের সিনিয়র এসডিজি স্পেশালিস্ট খাদ্য নষ্ট ও অপচয় বিষয়ে বলেন, সারাবিশ্বে প্রতিবছর উৎপাদন, পরিবহন, সংরক্ষন ও প্রক্রিয়াজাতকরন পর্যায়ে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ খাদ্য নষ্ট হয় যার আর্থিক মুল্য দাঁড়ায় ৪০০ বিলিয়ন ডলার। বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে কি পরিমান খাদ্য অপচয় হচ্ছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান এখনো জানা যায়নি। তিনি আরো বলেন, যখন খাদ্য নষ্ট হয় তখন আসলে খাদ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত অন্যান্য সম্পদ যেমন পানি, ভুমি, বিদ্যুৎ, শ্রম, পুজি ইত্যাদিরও অপচয় হয়।
মহামারী, যুদ্ধ সেইসাথে জলবায়ুর চরম বিরূপ আচরণ ইত্যাদি কারনে বিশ্বে খাদ্য সংকটের ঘন্টা বেজে উঠছে যখন বিশ্বে খাদ্যের অপচয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল একটি দেশে বছরে খাদ্যের অপচয় ১ দশমিক ৪৫ কোটি টন যার অর্থ ক্ষুধার আসন্ন হুমকি। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যদি অপচয় না করা হয় তাহলে এই পরিমান খাদ্য দিয়ে তিন মাসের জন্য ১৭ কোটি মানুষের খাওয়ানোর জন্য যথেষ্ট। খাদ্যের অপচয় এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছেছে যখন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঘাটতির বিষয়ে সতর্ক করেছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও জনগণকে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের বিষয়ে সতর্ক করেন এবং দেশের প্রতি ইঞ্চি খালি জমি যাতে কৃষির আওতায় আসে সেজন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
কৃষিতে বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতি স্বত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। প্রধান খাদ্যশস্য ধান ও গমের উৎপাদন গত অর্থ বছরে দাড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯০ কোটি টন যা গত ১১ বছরের মধ্যে ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশী। এই সময়ে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থ্যাৎ যা কিছু অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদিত হয় তার একটা ভালো অংশ ক্ষেত থেকে শুরু করে টেবিল পর্যন্ত একাধিক পর্যায়ে নষ্ট হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসুচীর খাদ্য অপচয়ের তথ্য অনুসারে, দেশে মাঠ থেকে রান্নাঘর পর্যন্ত যাত্রাপথে প্রতিবছর ৩৭ লাখ টনেরও বেশী খাবার নষ্ট হয়। বাড়িতে বার্ষিক খাদ্য বর্জ্য প্রায় ১.০৭ কোটি টন, কারন মোট বার্ষিক ক্ষতি এবং বর্জ্যরে পরিমান ১.৪৫ কোটি টন।
বাংলাদেশ প্রধানত একটি ধান উৎপাদনকারী দেশ এবং চাল প্রধান খাদ্য। দেশের মোট ফসলী জমির ৮০ শতাংশ ধান চাষের অধীনে এবং বছরে ৩ মৌসুমে ধান চাষ করা হয়। সুতরাং দেশের মানুষের জীবিকা নির্বাহে ধান একটি গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। দেশে প্রতিজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৩৬৭ গ্রাম চাল খায়। মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরি সরবরাহের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ এবং মোট প্রোটিন গ্রহনের প্রায় অর্ধেক আসে চাল থেকে। বাংলাদেশে ধান সংগ্রহের পর সংরক্ষনের জন্য সাধারনত ডোল, বের, গোলা, মটকা, স্টিলের ড্রাম, প্লাস্টিকের ব্যাগ, প্লাস্টিকের ড্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এ সমস্ত স্টোরেজ সিস্টেমে চাল বা ধানে পোকামাকড়ের আক্রমন বেশী হয় এবং বীজের ক্ষেত্রে অন্কুরোদগম ক্ষমতা নিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। দেশের এ সকল সনাতনী প্রথায় সংরক্ষন করা ধান বা চালে পোকামাকড়ের আক্রমনের কারনে সবচেয়ে বেশী খাদ্যের অপচয় হচ্ছে। শুধুমাত্র আধুনিক স্টোরেজ ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে পারলেই অপচয়ের বিরাট অংশ রোধ করা সম্ভব।
বিশ্বে প্রতি ৯ জন মানুষের মধ্যে ১ জন অপুষ্টির শিকার অথচ প্রতিবছর ১ বিলিয়ন টনেরও বেশী উৎপাদিত খাদ্য সারাবিশ্বে নষ্ট হয়। জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের ২০২১ খাদ্য বর্জ্য সুচক রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতিবছর মাথাপিছু ৬৫ কেজি খাদ্য বর্জ্য তৈরী হয় যা অনেক উন্নত দেশের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশী। খাদ্য বর্জ্যের পরিমান প্রতিবছর মাথাপিছু যুক্তরাস্ট্রে ৫৯ কেজি, রাশিয়ায় ৩৩ কেজি, আয়ারল্যান্ডে ৫৫ কেজি, নিউজিল্যান্ডে ৬১ কেজি এবং জাপানে ৬৪ কেজি। দেশের খাদ্য উৎপাদন ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার চেয়ে অনেক কম প্রচেষ্টায় খাদ্যের অপচয় ৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। আর এর একটি সহজ উপায় হচ্ছে-হারমেটিক স্টোরেজ।
হারমেটিক স্টোরেজ যা ”সিলড স্টোরেজ” বা ”এয়ারটাইট স্টোরেজ” নামেও পরিচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্যশস্য, ডাল, কফি এবং কোকো বিনের স্টোরেজ পদ্ধতি হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পদ্ধতিটি সিল করা বায়ুরোধী ব্যাগ বা কাঠামো ব্যবহার করে উচ্চ কার্বন ডাই অক্সাইড ঘনত্বের একটি স্বয়ংক্রিয় পরিবর্তিত বায়ুমন্ডল তৈরী করে। যেহেতু কাঠামোটি বায়ুরোধী সে কারনে শস্যের জৈব অংশ যেমন পোকামাকড়, বায়বীয় অনুজীব সময়ের সাথে সাথে শ্বসন বিপাকের কারনে কার্বন ডাই অক্সাইড ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। ফলে ভিতরের পোকামাকড় ও অনুজীব অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়। এতে শস্যে আলফা টক্সিন উৎপাদন ক্ষমতাও হ্রাস পায়।
হারমেটিক স্টোরেজ এর জন্য যে সকল ব্যাগ বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে সমস্ত ব্যাগ বা কন্টেইনার ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের মধ্যে সুপার গ্রেইন ব্যাগ, গ্রেইনপ্রো ব্যাগ, কোকুন (৫-৫০ টনের জন্য), বাংকারস, পিটস টানেল, সাইলো ব্যাগ, জিরোফ্লাই ব্যাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এ সকল ব্যাগ ব্যবহার করে শস্যবীজের বিশেষ করে ধানের ক্ষেত্রে বীজের অন্কুরোদগমের হার ৯৮-৯৯ শতাংশ পাওয়া যায় যা আমাদের দেশের সনাতনী পদ্ধতিতে সর্ব্বোচ ৬০ শতাংশ পাওয়া সম্ভব। সুতরাং গুনগতমানসম্পন্ন সতেজ বীজ নিশ্চিত করতে হলে হারমেটিক ব্যাগের কোন বিকল্প নেই। বিশেষ করে দেশের ক্ষুদ্র চাষী পর্যায়ে মান সম্পন্ন বীজের ব্যবহার বাড়াতে হলে হারমেটিক স্টোরেজ পদ্ধতির ব্যবহার অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি ধানের সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্লেটে নেয়া পর্যন্ত সংগ্রহত্তোর অপচয় রোধ করার জন্যও হারমেটিক স্টোরেজ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরী।
হারমেটিক স্টোরেজে যে সকল পলিপ্রপিলিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয় এদের একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পোকামাকড় বা ইঁদুর এ সমস্ত ব্যাগ কাটতে বা ছিদ্র করতে সক্ষম যার ফলে ব্যাগের ভিতর ও বাইরের আবহাওয়াগত পরিবেশ একই রকম হয়ে যায় এবং এতে হারমেটিক স্টোরেজের সুফল পাওয়া যায় না। এ সব দিক বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আব্দুল আউয়াল এবং তার বিশেষজ্ঞ দল গবেষণা করে বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য উপযোগী ধাতব কন্টেইনারে হারমেটিক স্টোরেজ এর গুণাবলী যুক্ত করেছেন যা পোকামাকড় বা ইদুর কাটতে বা ছিদ্র করতে পারবেনা এবং এর ব্যবহার অনেক বছর পর্যন্ত করা সম্ভব হবে।
ড. আউয়ালের মতে, এই ধরনের মেটালিক হারমেটিক স্টোরেজ দেশের ক্ষুদ্র কৃষক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের দিয়ে বীজ উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং কৃষক পর্যায়ে মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। এক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত এই স্টোরেজ পদ্ধতিটি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহন করতে পারে। এর ফলে কৃষক পর্যায়ে সুস্থ, সবল, নীরোগ বীজের ব্যবহার বাড়বে যা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশপাশি খাদ্যের জন্য ব্যবহ্নত ধানের অপচয় কমানোর জন্য বিভিন্ন আকারের কোকুন ব্যবহার কৃষক পর্যায়ে বাড়াতে পারলে সংরক্ষিত ধানের অপচয় অনেক পরিমানে কমে আসবে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, গেইন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হারমেটিক স্টোরেজ সাইলো উদ্ভাবক প্রফেসর ড. আব্দুল আউয়াল এই হারমেটিক প্রযুক্তিটি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। গেইন বাংলাদেশ জিংক জনিত অপুষ্টি কমানোর জন্য বায়োফর্টিফাইড জিংক ধানের সম্প্রসারণ নিয়ে অনেকদিন আগে থেকে কাজ করে আসছে। বায়োফর্টিফাইড জিংক ধানের মান সম্পন্ন বীজ কৃষক যাতে ব্যবহার করতে পারে সেজন্য গেইন এই হারমেটিক স্টোরেজ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছে।
১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপুর্ন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০০৮ জন)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এভাবে বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালে লোকসংখ্যা প্রায় ২০ কোটিতে বৃদ্ধি পাবে (এফএও, ২০১৪)। অন্যদিকে প্রতি বছর আবাদী জমি ১ শতাংশ করে কমছে। তাই প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন করতে হয়। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদিত যে বিপুল পরিমান খাদ্য সংগ্রহ করার পর থেকে প্লেটে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে অপচয় হয় তা যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনার ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা নেয়ায় দেশ আজ সকল কৃষিজ খাদ্যপণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পুর্ন এবং কৃষির এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার ফলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ১৯৭১ এর পরাজিত অপশক্তি আমেরিকা আবার তার কুদৃষ্টি ফেলেছে এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশের উপর। বাংলাদেশে নাকি মানবিক বিপর্যয় ঘটে চলছে। ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে বাংলাদেশকে নিয়ে এর আগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মুসলিম অধ্যুষিত হওয়া সত্বেও অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনের ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। আরও উল্লেখ করা হয়, দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে কার্যকর অসাম্প্রদায়িক রাস্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। আর মৌলবাদী আমেরিকায় সচরাচরই ঘটছে লোমহর্ষক বর্ণ বিদ্বেষী ঘটনা। কালো মানুষের উপর চলছে নির্মম নির্যাতন ও হত্যা।দেশটিতে সবসময়ই ঘটে চলেছে বিচার বহির্ভুত হত্যা। সেই আমেরিকা আজ বাংলাদেশে মানবিক বিপর্যয়ের সাফাই গেয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ রোহিজ্ঞা শরনার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং বিশ্ব নেতৃর্ত্বেও ভুয়সী প্রশংসা পেয়েছেন। বাংলাদেশের সেনা সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তি মিশনে অত্যন্ত দক্ষ ও সুনামের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছে যা ইতিমধ্যে বিশ্ব দরবারে বিশেষভাবে প্রশংসিত। বিশ্ব দরবারে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃর্ত্বের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন বিশ্ব নের্তৃবৃন্দ। বঙ্গবন্ধু বাঙ্গালী জাতিকে শিখিয়েছে অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতে। বাঙ্গালী বীরের জাতি যার প্রমান ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আর্ন্তজাতিক অপশক্তি আমেরিকার কুচক্রান্তকে প্রতিহত করে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমেরিকাকে সমুচিত জবাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃর্ত্বে বাংলাদেশ আগামীদিনে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা উচু করে দাড়াবে এই প্রত্যাশা সকল দেশবাসীর।
লেখক- কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ