কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার: আগামীকাল ১৩ই অক্টোবর শুক্রবার ২০২৩ সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও পালিত হবে বিশ্ব ডিম দিবস।দিবস পালনের লক্ষ্য হল, ভোক্তার নিকট ডিমের পুষ্টি গুন তুলে ধরা, সস্তা মুল্যের উন্নত মানের প্রোটিন গ্রহনে ভোক্তা সাধারণকে উদ্বুদ্ধ করা। বাংলাদেশে সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর দিবসটি অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবারে জাকজমক র্যালি, সভা সেমিনার ও ডিম বিতরণের মাধ্যমে পালিত হয়।
এবারের ডিম দিবসের স্লোগান হল “স্বাস্থ্যবান ভবিষ্যতের জন্য ডিম” প্রতি বছর বিশ্ব ডিম দিবস কেন ভোক্তা সাধারণের মাঝে চিন্তার খোরাক জোগায়?
অনেকের কাছেই বিষয়টি হাস্যরসাত্মক, আমার পরিচিত মহলের অনেকের অভিব্যক্তিও তাই, আর কত দিবস দেখব!
যেহেতু আমরা ডিম উৎপাদন করি, আমাদের ডিমের বাজার কাটতি আর কাস্টমার বাড়ানোর জন্য আমরা উদ্ভট এমন ডিম দিবস পয়দা করেছি। এবছর তো আরো বেশি ক্ষোভ আর শ্লেষ দেখতে পাচ্ছি- ডিমের দাম বাড়তি, এসব দিবস পালন করে ডিমের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা ইত্যাদি ইত্যাদি।
হিসাব কিতাবে বাংলাদেশে ডিমের যে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার হার জন প্রতি ১০৪টি তা আমরা অর্জন করে ফেলেছি ইতিমধ্যে - সবাই খুশি অন্তত নীতি নির্ধারনী মহল তাই মনে করেন এবং এই অভাবনীয় অর্জনের জন্য আমাদের বুকের ছাতি ফুলে ১২ হাত চওড়া হয়ে যায়- আমাদের টার্গেট তো অর্জন হয়েছে! সাধু সাধু
বাস্তবতা কি?
এই ১০৪টি ডিমের মধ্যে সরাসরি গড়ে টেবল এগ বা পাতে কয় টা পড়ে বছরান্তে জন প্রতি?
হিসাব টা মিলাই চলেন- ডিমের ব্যবহার দেশে কি কি ভাবে হয়-
১. সরাসরি রান্না বা সিদ্ধ বা অমলেট করে খাওয়া
২. বেকারি পন্য উৎপাদনে
৩. ফার্মাসিউটিক্যালসের উপাদান হিসাবে
৪. সাবান স্যাম্পু অন্যান্ন টয়েলেট্রিজ উৎপাদন করতে
৫. ল্যাবে ( প্রচুর পরিমানে ব্যবহার হয়)
তাহলে বাস্তবে কি দাঁড়ালো?
কয়টা ডিম সরাসরি আমাদের পাতে পড়ে পেটে যায় আমার ধারনা বছরে জন প্রতি ৩/৪ ডজনের বেশি না।
তাহলে জনপ্রতি হেড ডিম খাওয়ার সংখ্যা কত?
আমরা ডিম দিবস পালন করি ডিমের গুন সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন করতে, বিক্রি বাড়ানোর জন্য নয়। মাছ মাংস ও অন্যান্য উৎস থেকে আমরা যে প্রোটিন পাই তা সহজে হজমযোগ্য কোন প্রোটিন নয়, পেটে দেওয়ার পরে সুস্থ সবল মানুষ না হলে প্রোটিন ঠিক মত হজম হয় না এবং প্রকৃত প্রোটিনের অধিকাংশ পায়খানা ও মুত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে বেরিয়ে যায় এবং রক্ত প্রবাহ হয়ে দেহের কোষের ব্যবহার উপযোগী ( বায়ো এভেইলেবল) প্রোটিন নিতান্তই সামান্য পরিমানে ফাইনালি দেহের কাজে লাগে।
অন্যদিকে ডিমে যে প্রোটিন থাকে তার শতভাগই দেহের কোষের ব্যবহার উপযোগী ( উচ্চমানের জ্বালানির/ফুয়েল মত)
একটা ডিম থেকে আস্ত একটা বাচ্চা ফুটে বের হয়- এটাতে কি প্রমান হয় না একটা ডিমে জীবন সৃষ্টি ও টিকে থাকার জন্য যত প্রয়োজনীয় পুষ্টি দরকার তার সব কিছুই প্রাকৃতিক ভাবে দেওয়া আছে।
পৃথিবীতে ডিমের মত এমন কোন খাদ্য পাওয়া যাবে না যাতে এমন ভাবে জীবনের জন্য দরকারী সব পুষ্টি উপাদান প্যাকেজ হিসাবে পুষ্টির ক্যাপসুল আকারে খোসা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমরা প্রতি বছর বিশ্ব ডিম দিবস পালন করি-
★ ডিমের এমন সম্মোহনী সু-গুণের কথা জানাতে
★ভবিষ্যতে মেধাবী একটা জেনারেশন প্রস্তুত করতে
★ মাথা পিছু ডিম গ্রহন বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ সবল স্বাস্থ্যবান হিসাবে গড়তে সচেতন করতে।
পরিশেষে: ডিম তুলনামূলক কম দামে পৃথিবীর সেরা প্রোটিন।।
লেখক:[মাস্টার্স ইন পোল্ট্রি সায়েন্স]
ই সি মেম্বার, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বি পি আই এ)