ইসলামিক ডেস্ক:অত্যধিক রাগ মানুষকে উদ্ধত, বদমেজাজি ও অহঙ্কারী করে তোলে। মানব জীবনে রাগ ভয়ঙ্কর একটি ব্যাধি। রাগ একটি নীরব ঘাতক। গবেষণা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত রাগ শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত রেগে গেলে শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপম বুকে ব্যথা, তীব্র মাথাব্যথা, মাইগ্রেন অ্যাসিডিটির মতো অনেক শারীরিক রোগ দেখা দিতে পারে। দেখা দিতে পারে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা। বাড়তে পারে স্ট্রেস। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অতিরিক্ত রাগ মানুষের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেয়। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে সুখী মানুষ দীর্ঘদিন বাঁচে।
রাগ পারিবারিকভাবে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ঘটায়। পিতা-পুত্রের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, সন্তান পিতার সাথে বেয়াদবি করে, পিতা সন্তানকে পারিবারিকভাবে বয়কট করে। সামাজিকভাবে প্রতিবেশী প্রতিবেশীর মধ্যে ঝগড়া হয়, পরস্পর আহত বা নিহত হয়। রাগ মানুষকে প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলে। যতক্ষণ প্রতিশোধ নিতে পারে না ততক্ষণ সে শান্তিতে কোনো কাজ করতে পারে না। এমনকি রাতে সে ঘুমাতে পারে না। পরিপুষ্টিতে বাধার সৃষ্টি করে। এভাবে রাগ অত্যন্ত ব্যাপক এবং বহুমুখী সমস্যার সৃষ্টি করে।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘ যারা ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৪)।
কারণ ক্ষমা মানুষকে মহৎ ও আরো বড় করে তুলে।
রাগ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রথম ও প্রধান উপায় হলো- মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা। অর্থাৎ তাউজুু তথা ‘আউজুু বিল্লাহি মিনাশ শায়তোয়ানির রাজিম’ পাঠ করা। সুলাইমান ইবনে সুরদ রা: থেকে বর্ণিত- একবার নবী সা:-এর সম্মুখেই দুই ব্যক্তি গালাগালি করছিল। আমরাও তাঁর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম, তাদের একজন অপরজনের প্রতি এতটাই রেগে গিয়ে গালি দিচ্ছিল যে, তার চেহেরা রক্তিম হয়ে গিয়েছিল। তখন নবী সা: বললেন, ‘আমি এমন একটি কালিমা জানি, যদি এ লোকটি তা পড়ত, তবে তার রাগ দূর হয়ে যেত। অর্থাৎ যদি লোকটি ‘আউজুু বিল্লাহি মিনাশ শায়তোয়ানির রাজিম’ পড়ত। তখন লোকেরা সে ব্যক্তিকে বলল, নবী সা: কী বলেছেন, তা কি তুমি শুনছ না? সে বলল- নিশ্চয়ই পাগল নই’ (বুখারি-৬১১৫)।
রাগ থেকে পরিত্রাণের আরেকটি উপায় হলো- নিজের অবস্থার পরিবর্তন করা অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগ হলে বসে পড়তে হবে আর বসা অবস্থায় রাগ হলে শুয়ে পড়তে হবে। হজরত আবু জার গিফারি রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ্ সা: বলেছেন, যখন তোমাদের কারো রাগ হয়, দাঁড়ানো থাকলে সে যেন বসে পড়ে। যদি রাগের উপশম হয় তবে উত্তম। তা না হলে সে যেন শুয়ে পড়ে’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি ও আবু দাউদ-৪৭৮৪)।
রাগ দমনে আরো সুন্দর একটি উপায় হলো চুপ থাকা। অর্থাৎ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা না করে চুপ হয়ে যাওয়া। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও চুপ থাকো; তুমি রাগান্বিত হও চুপ থাকো; তুমি রাগান্বিত হও চুপ থাকো’(মুসনাদে আহমাদ)। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি নবী সা:-এর কাছে বলল, আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, তুমি রাগ করো না। লোকটি কয়েকবার তা বললেন, নবী সা: প্রত্যেক বারই বললেন ‘তুমি রাগ করো না’ (বুখারি-৬১১৬)।
আসুন, আমাদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করি। রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর উল্লিখিত উপায়গুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করি। নিশ্চয়ই মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলের মাঝ থেকে মারাত্মক এ ব্যাধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার শক্তি দিবেন-আমিন