ইসলামিক ডেস্ক:মানবজীবনে ক্ষমার গুরুত্ব অপরিসীম, ক্ষমা মানুষকে বানায় মহৎ এবং দয়ালু। আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্নভাবে তার ‘ক্ষমা’ গুণটির কথা বর্ণনা করেছেন। সূরা বাকারার ৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু’।
আমার যদি আমাদের প্রিয় নবী মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যিনি বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবন ও আদর্শের দিকে আলোকপাত করি তাহলে অসংখ্য ‘ক্ষমা’র উপমা দেখতে পাই। আমাদের বিশ্বনবী সা:নিজের প্রতি হওয়া জুলুমকে হাসিমুখে মেনে ক্ষমা করে দেয়ার অন্যতম এক দৃষ্টান্ত মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনী অধ্যয়নে দেখা যায় তার চাক্ষুষ জাত শত্রুকে তিনি হাসিমুখে ক্ষমা করে দিলেন। নবুওয়তির শুরুর দিকে তিনি যখন তায়েফে উপস্থিত হলেন, সেখানে তায়েফ কর্তৃক আক্রান্তও হয়েছিলেন। তখন তাঁর পাশের খাদেম বলেছিল আপনি তাদের জন্য বদদোয়া করুন; তারা যেন ধ্বংস হয়ে যায়। হজরত জিবরাইল আ: এসে বললেন, আপনি হুকুম দিন! তায়েফের দুই পাশের পাহাড় এক করে দিয়ে তায়েফবাসীকে ধ্বংস করে দিই। কিন্তু রাসূল সা: কী বললেন? না! আমি বদদোয়ার জন্য প্রেরিত হইনি। আমি রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। অবলীলায় ক্ষমা করে দিলেন ওই জঘন্য অমানুষগুলোকে। এ কারণেই তাকে বলা হয়েছে আদর্শের মূর্তপ্রতীক। মানবসভ্যতার ইতিহাসে তাঁর মতো এমন উদার ও ক্ষমাশীল মানুষ ছিল না, এখনো নেই, কিয়ামত অবদি আসবেও না।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: সাহাবিদের ক্ষমা প্রদর্শনের শিক্ষা দিতেন সর্বদা। এই মর্মে চমৎকার একটি হাদিস রয়েছে। হাদিসটি হলো- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত- এক লোক এসে রাসূলুল্লাহ সা:-কে বলল, আমাদের গোলাম কর্মচারীরা তো ভুলত্রুটি করে থাকে; তাদের আমরা কতবার ক্ষমা করব?
উত্তরে রাসূল সা: কিছু না বলে চুপ রইলেন। লোকটি আবার প্রশ্ন করল। এবারো রাসূল সা: চুপ রইলেন। লোকটি যখন তৃতীয়বার প্রশ্ন করল- তখন রাসূল সা: বলেন, ‘প্রতিদিন তাকে ৭০ বার মাফ করে দেবে’ (আহমদ-৫৬৩৫)।
বর্তমান সময়ে আমরা ক্ষমা করে দেয়ার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছি। যার ফলে দিন দিন মানুষের মধ্যে মানুষ দয়াহীন হয়ে যাচ্ছে, সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। অথচ এক ‘ক্ষমা’ই পারে একটি সুন্দর, ঝামেলাহীন সুন্দর সমাজ উপহার দিতে। আসুন আমরা আমাদের প্রিয় নবীর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করি এবং সবাইকে ক্ষমা করে দেই। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সহায় হউন।-আমিন