ইসলামিক ডেস্ক: মা-বাবা সর্বদাই সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। শৈশব থেকে শুরু করে কতই না আদর যত দিয়ে তারা আমাদের লালন পালন করেন। তাই তাদের প্রতি ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মহান আল্লাহ বার্ধক্যে বাবা-মায়ের সাথে সব সময় ভালো আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সাথে সৎ ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। কেননা, তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি আরো নির্দেশ দিয়েছি, আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে তোমাদের আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে’ (সূরা লোকমান-১৪)।
পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)।
পিতা-মাতা মানুষের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনন্য রহমত। তাদের ছাড়া এই পৃথিবী অকল্পনীয়। শৈশব থেকে আমাদের আদর যত্ন দিয়ে তারা লালন-পালন করেন। বাবা-মা সর্বদা সন্তানের কল্যাণের কথা ভাবেন। তাই মহান আল্লাহর কাছে মা-বাবার মর্যাদা অতুলনীয়। কিন্তু বার্ধক্যে বেশির ভাগ সন্তান বাবা-মাকে অবহেলা করে। কারণ তখন তাদের উপার্জনের ক্ষমতা থাকে না, সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।
বাবা-মা বিধর্মী হলেও তাদের সাথে সৎ আচরণ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইসলামবিরোধী কোনো কাজের হুকুম না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কথা মানতে হবে। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না। কিন্তু পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে। যে আমার অভিমুখী হয় তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো তোমরা যা করছিলে’ (সূরা লুকমান-১৫)।
বাবা-মাকে কষ্ট দেয়া বা তাদের অবাধ্য হওয়া জঘন্যতম গুনাহ। বর্তমানে স্ত্রীর কথায় অনেক সন্তান নিজের বাবা-মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কিয়ামতের আগে মানুষ স্ত্রীর কথা মান্য করবে এবং বাবা-মায়ের নাফরমানি করবে। বন্ধু-বান্ধবকে নিকটবর্তী করবে, বাবা-মাকে দূরে সরিয়ে রাখবে। বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তানকে মহান আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ চাইলে বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু মা-বাবার অবাধ্যতার গুনাহ তিনি মাফ করবেন না। আর অবাধ্য সন্তানের শাস্তি তার মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই দেয়া হবে’ (মিশকাত-৪২১)।
উপরোক্ত কোরআন ও হাদিসের আলোক থেকে আমরা বুঝতে পারি মা-বাবা প্রতিটি মানুষের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বর্তমান সমাজে দেখা যায় পারিবারিক বন্ধন অনেক শিথিল হয়ে গেছে ।এখন অনেক সময় অনেক সন্তান তার বাবা-মাকে বোঝা মনে করে যা কখনোই কাম্য নয়। তাই ইসলামের নির্দেশনা মেনে মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তাদের খেয়াল রাখা উচিত। সবারই মনে রাখা উচিত আমরা আর যারা যৌবনকালে রয়েছি তারাও একদিন বার্ধক্যকে উপনীত হব তখনও ঠিক আমাদের পরিণতি এমনি হবে। যদি আমরা মা বাবার প্রতি অবহেলা করি। আসুন আমরা সকলেই মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাই। নিশ্চয়ই মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলের মনের আশা পূরণ করবেন।- আমিন