মাহফুজুর রহমান: মিসফালাহ এর হিজরা রোডে আমাদের হোটেল। এখান থেকে কাবার দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। পায়ে হাঁটার ৮/১০ মিনিটের পথ। হোটেল থেকে নামতেই প্রথম চোখে পড়ল ক্লক টাওয়ার। যেটি ১২০ তলা বিশিষ্ট। অনেক দূর থেকেও স্পষ্টভাবে ক্লক টাওয়ারের ঘড়িতে সময় দেখা যাচ্ছে।
আমরা হাঁটি হাঁটি পা পা করে তালবিয়া পাঠ করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছি কাবার পানে। যতই কাছে যাচ্ছি কেবল আবেগতাড়িত হয়ে যাচ্ছি। তালবিয়া পাঠ করার পাশা পাশি বার বার রবের শুকরিয়া আদায় করছি। হাটতে হাটতে আমরা পৌছে গেলাম ৭৯ নং গেটের সামনে। এই গেট দিয়ে প্রবেশ করেই আমরা যাবো কাবার মূল চত্বরে। ৭৯ নং গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম আমরা। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি কাবার দিকে। কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়লো অরাধ্য স্বপ্ন প্রিয় খানায় ক্বাবা। কালো গিলাফে ঢাকা সে কাবা দেখে একেবারেই যেন হারিয়ে গেলাম অন্য কোন জগতে। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান্নি’মাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লা-শারিকা লাক।
প্রথম কাবা শরীফ দেখার এই অনুভূতি আসলে কি-বোর্ডের মাধ্যমে লিখে কখনো বুঝানো সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের হৃদয়ের এই ক্ষুধা নিবারণের জন্য যেন গোগ্রাসে গিলছে আমাদের চর্ম চক্ষু। সুবাহানআল্লাহ আলহামদুল্লিাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার।
ফজর এর সময় হয়ে যাওয়ায় আমরা ক্বাবার সামনেই ফজরের নামাজ আদায় করি। হাদিসের ভাষ্যমতে, কাবার নিচের অংশ পৃথিবীর প্রথম জমিন। হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টির ২ হাজার বছর আগে সেখানে পৃথিবীর প্রথম ঘর কাবা নির্মাণ করা হয়। আল্লাহর নির্দেশে কাবাঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ফেরেশতারা। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে র্সবপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এই ঘর, যা বাক্কায় (মক্কা নগরীতে) অবস্থিত এবং বিশ^বাসীর জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।’ (সুরা আলে-ইমরান : ৯৬)
হজরত নূহ (আ.)-এর যুগে মহাপ্লাবনে এই ঘর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে কাবাঘর পুননির্মাণ করেন হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল (আঃ)। নির্মাণের পর আল্লাহ তায়ালা হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-কে বিশ্ববাসীকে এই ঘর জিয়ারতের আহ্বান জানানোর নির্দেশ দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও। তারা দূরদূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটে সওয়ার হয়ে তোমার কাছে আসবে।’ (সুরা হজ : ২৭)। আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আহ্বানের পর থেকে আজ পর্যন্ত কাবাকেন্দ্রিক ইবাদত ও জিয়ারত বন্ধ হয়নি।
এসব কাবার ইতিহাস মনে করতে করতেই অনেক সময় কেটে গেলো। আমরা কাবার মেহমানদের জন্য সংরক্ষিত জমজমের পানি পান করলাম। এক প্রশান্তিময় পানি। যা পান করলে নিমিষেই হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। -চলবে
লেখক:জেনারেল ম্যানেজার, এগ্রোভেট ফার্মা