মাহফুজুর রহমান: সাফা-মারওয়ার ইতিহাস ইতিমধ্যে বলেছি। সাফা পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে কাবা-মুখি হয়ে দোয়া করলে সে দোয়া কবুলের সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে। আমরা সাফা পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে দোয়া-দরুদ পাঠ করে সায়ী শুরু করি। সাফা থেকে মারওয়া এক মারওয়া থেকে সাফা এক এভাবে আমরা মোট সাতবার সাফা-মারওয়া সায়ী শেষ করি। সবুজ বাতি দ্বারা চিহ্নিত স্থানগুলোতে একটু জোড়ে দৌড়ানোর আমলও করি। আলহামদুলিল্লাহ।
এরপর মাথা মুন্ডন করা। হজ ও ওমরায় মাথা মুন্ডনকে চুল ছাঁটা অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে। এমনকি মাথা মুন্ডনকারীর জন্য বিশেষভাবে তিনবার দোয়া করা হয়েছে। তাই হাজীদের জন্য মাথা মুন্ডনই উত্তম। নবীজি (সা.) স্বয়ং মাথা মুন্ডনকে পছন্দ করতেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ কর যারা মাথা মুন্ডন করেছে তাদের প্রতি। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও? রাসুল বললেন, হে আল্লাহ! তুমি অনুগ্রহ কর যারা মাথা মুন্ডন করেছে তাদের প্রতি। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও? তৃতীয়বার রাসুল (সা.) বললেন, যারা মাথা ছাঁটিয়েছে তাদের প্রতিও।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৫৪; মুসলিম, হাদিস : ৩২০৫) রাসুল (সঃ) এর এই হাদিস সম্পর্কে অবগত থাকায় আমরা মাথা মুন্ডন করি।কারণ তিনি সেখানে মাথা মুন্ডনকারিদের জন্য তিনবার দোয়া করেছেন। এভাবেই আমাদের প্রথম ওমরাহ এর কাজ সমাপ্ত হয়। হোটেলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে হালকা বিশ্রাম নেওয়া।
আমাদের জন্য ইতিমধ্যে তার গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছেন জহুরুল ভাই। জহুরুল ভাই একজন সৌদি প্রবাসী। নিজেই ব্যবসা করেন। তার গাড়ী নিয়ে এসেছেন আমাদের মক্কা শহর ঘুরে দেখাবেন। তার গাড়ীতে চড়ে আমরা বের হলাম। যদিও আমাদের পরিকল্পনা ছিলো আজকের ভ্রমণ একটু সংক্ষিপ্ত করার। সৌদি আরবের রাস্তা-ঘাটের ব্যাপারে নতুন করে আলোচনার আসলে কিছু নাই।এখানকার নিয়ম-নীতি নিঃসন্দেহে অসাধারণ। ট্রাফিক রুলস ভায়োলেট করার কোন সূযোগ নাই। অটো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। ট্রাফিক রুলস ভঙ্গ করলেই এ আই ক্যামেরার সাহায্যে অটোমেটিক্যালি মামলা হয়ে যাবে। পাহাড় কেটে সূড়ঙ্গ করে রাস্তা বানানো হয়েছে। পাহাড়-রাস্তার এই অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা পৌছে গেলাম জহুরানা মসজিদে।
মসজিদ আল মিকাত জহুরানা বা পুরনো ওমরাহ মসজিদ। যেখান থেকে ইহরাম বেঁধে রাসুলুল্লাহ (সঃ) জীবনের প্রথম পবিত্র ওমরাহ হজ্ব পালন করেন এবং একই রাতেই ওমরাহ শেষ করে এই মসজিদে এসে ফজরের নামাজ আদায় করেন। আমরা সেখানে এশার নামাজ আদায় করি নূর ভাইয়ের ইমামতিতে।
সেখানে কিছুসময় অবস্থান করার পর জহুরুল ভাই আমাদের নিয়ে গেলেন সৌদির আলোচিত খাবার আল বাইক খাওয়ানোর জন্য। এবং সেটি হলো ফাকা ময়দানে চাদর বিছিয়ে গোল হয়ে বসে একসাথে খাওয়া। আলহামদুলিল্লাহ। বাংলাদেশী ফাষ্টফুড খুব একটা লাইক না করলেও আল বাইকেরটা খুবই মানসম্মত মনে হয়েছে।
কাবা হলো মুসলিমদের একটি মিলনমেলা। এখানে সমগ্র বিশ্বের মুসলিমেরা আসেন ইবাদতের উদ্দেশ্যে। যার ফলে এখানে আসলে সমগ্র বিশ্বের মুসলিমদের সাথে আলাপ করার এক মহৎ সুযোগ পাওয়া যায়। আমি বেশ কয়েকটি দেশের মুসলিমদের সাথে কথা বলেছি। বিশেষত অনেক তুর্কির উপস্থিতি তখন ছিলো চোখে পড়ার মত। আমার বয়সী এক চায়নিজের সাথে অনেকক্ষন কথা বলেছি। কথা বলে মনে হলো সে ও ঠিক আমার মত আবেগ নিয়েই এখানে ছুটে এসেছে। কাবার প্রতি তার প্রচন্ড ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
পরদিন বিকাল। আমাদের বের হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে রায়হান ভাই তার গাড়ী নিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। রায়হান ভাই ও একজন প্রবাসী।নূর ভাইয়ের ইউনিয়নের নাগরিক। একটি কোম্পানির গাড়ী চালনার কাজে আছেন। তিনি আমাদের জন্য একটি কোষ্টারের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা কোষ্টারে চেপে নবীর দেশ ভ্রমণে বের হলাম। শুরুতে আমাদের আজকের গন্তব্য মিনা। এবং অল্পকিছু সময়ের মাধ্যেই আমরা পৌছে গেলাম মিনায়।-চলবে
-লেখক:জেনারেল ম্যানেজার, এগ্রোভেট ফার্মা