মাহফুজুর রহমান: আমাদের গন্তব্য মসজিদে কিবলাতাইন। এ মসজিদেই প্রিয়নবী (সঃ) এর দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছিল। এখানে নামাজ পড়ার সময় আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশের ওহি আসে। কিবলা পরিবর্তন সম্পর্কিত পবিত্র কোরআনের আয়াত অবতীর্ণ হয়।
এরপর রাসূল (সঃ) নামাজরত অবস্থায় বাইতুল মুকাদ্দাসের দিক থেকে কা’বার দিকে ফিরে যান। তার সাথে জামাতে নামাজে দাঁড়ানো মুসল্লিরাও ফিরে যায়। একই মসজিদে দাঁড়িয়ে যেহেতু রাসূল (সঃ) দুই কিবলার দিকে মুখ করে নামাজ পড়েছিলেন তাই এই মসজিদের নাম ‘মসজিদে কিবলাতাইন’ বা ‘দুই কিবলার মসজিদ’ রাখা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ ঐতিহাসিক মসজিদে এক সাথে দুই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। আয়তন তিন হাজার ৯২০ স্কয়ার মিটার। মসজিদটিতে রয়েছে আট মিটার ও সাত মিটার দুটি গম্বুজ। রয়েছে দুটি মিনার। ইসলামের স্বর্ণালী ইতিহাসে ‘মসজিদে কিবলাতাইনের’ আবেদন চিরভাস্বর। আমরা মসজিদে কিবলাতাইনে আছরের নামাজ জামায়াতে আদায় করি।
এরপর চলে যায় মসজিদে কুবায়। মসজিদে কুবা ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নির্মিত মসজিদ। মহানবী (সঃ) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে কুবায় এ মসজিদ নির্মাণ করেন। এর আগে মক্কায় তিনি কোনো মসজিদ নির্মাণ করেননি। হিজরতের প্রথম দিন কুবা অবস্থানকালে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুল (সঃ) অংশগ্রহণ করেন।
মসজিদে কুবায় নামাজের ফজিলতের কথা অসংখ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন- হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অশ্বারোহণ করে কিংবা হেঁটে মসজিদে কুবায় আগমন করতেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। অন্য এক হাদিসে রয়েছে, প্রতি শনিবারে রাসুল (সঃ) কুবায় আগমন করতেন। (বুখারি-মুসলিম)। আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার সওয়াব একটি ওমরাহ’র সমপরিমাণ। (তিরমিজি) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে (সুন্নাত মোতাবেক অজু করে) মসজিদে কুবায় আগমন করে নামাজ আদায় করে তাকে একটি ওমরাহ’র সমপরিমাণ সওয়াব দান করা হবে। (ইবনে মাজাহ) তাই তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকেই প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করার জন্য গমন করা মদিনাবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানেও তাদের এই আমল অব্যাহত আছে। আমরা মসজিদে কুবায় প্রবেশ করে বেশ কিছু সময় সেখানে অবস্থান করি। আল্লাহর কাছে তাউফিক কামনা করি যেন মসজিদে কুবার যে ফজিলত আমরা জানি সে অনুযায়ী যেন কিছুটা আমল আমরা এখানে করতে পারি।-চলবে
-লেখক:জেনারেল ম্যানেজার, এগ্রোভেট ফার্মা