মাহফুজুর রহমান: জ্বীনের পাহাড়ের নাম হয়তো আপনারা অনেকেই শুনে থাকবেন। আমরাও শুনেছি। এখানে যানবাহন চলাচলের যে অলৌকিকতা অর্থাৎ কোন ধরনের গিয়ার ছাড়াই (ষ্টার্ট বন্ধ অবস্থায়) গাড়ী ৮০ থেকে ১০০ কিঃমিঃ/ঘন্টা গতিতে চলে। আমরা সেই অলৌকিকতার সরাসরি সাক্ষী হতে এবারের গন্তব্য হিসাবে জ্বীনের পাহাড়ে যাই। জ্বীনের পাহাড়ে পৌছে আমরা মাগরিবের নামাজ আদায় করি। যাতায়াতের গোটা রাস্তায় আপনাকে বিমোহিত করবে এখানকার পাহাড়ী সৌন্দর্য্য।
ওহুদ পাহাড়ের গা ঘেঁষে পথ চলেছে ওয়াদি আল বায়দার পাহাড়ঘেরা এক উপত্যকার দিকে। যাকে আমরা জীনের পাহাড় নামে চিনি। মদিনা থেকে ৪৫ কিঃ মিঃ দূরত্বে এটি অবস্থিত। সারি সারি খেজুর গাছ আর পাহাড়। চমৎকার এক দৃশ্য। যেটি দেখতে দেখতে আমরা সেখানে পৌছে যায়। এখানের দর্শনার্থীদের জন্য মরুভূমির জাহাজ হিসাবে পরিচিত উটের পিঠে চড়ার ব্যবস্থা আছে। ১০ রিয়ালের বিনিময়ে যে কেউ এই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।আমি এবং নূর ভাই না চড়লেও আমাদের লিটন ভাই এবং রাসেল ভাই ঠিকই এই অভিজ্ঞতা রপ্ত করলেন।
এবার আমাদের সেই অলৌকিকতা দর্শনের পালা। মূলত পাহাড় থেকে ফেরার সময়ই এটি ঘটে থাকে। আমরা গাড়িতে চেপে বসলাম। সুবহানআল্লাহ। গাড়ী চলছে কিন্তু আমাদের গাড়ী নিউট্রাল অবস্থায়।গতি বাড়তে বাড়তে আশি ক্রস করার উপক্রম। কিন্তু আমাদের মেহেরুল ভাই ব্রেক চেপে আশির উপরে গতি ওঠা থেকে রক্ষা করলেন। কারন এই রাস্তায় সর্বোচ্চ ৮০ কিঃমিঃ গতিতে গাড়ী চালানোর অনুমতি আছে। সমতল রাস্তায় এভাবে গাড়ী চলা দেখে যে কেউ শিহরিত হতে বাধ্য। আপনি একটু কল্পনা করে দেখুন। আপনি গাড়ীতে বসে আছেন যেটি ষ্টার্ট বন্ধ অবস্থায় আছে। এবং সেটি ঘন্টায় ৮০ কিঃ মিঃ বেগে ছুটে চলছে। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি মস্তক অবনত চিত্বে শুকরিয়া আদায় করলাম। এখানে ঢালু যায়গাতে পানির বোতল রাখলেও সেটি উল্টো দিকে চলে যায়। পানি ঢেলে দিলে সেটিও উল্টো দিকে যায়। আল্লাহু আকবার।
লেখাটি একটু ছোট করার চিন্তা থাকলেও আসলে মনের কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে লিখতে যেয়ে একটু বড় হয়ে গেলো। যাই হোক এরপর মদিনার আলোচিত অনেক যায়গা আমরা ঘুরে দেখলাম। আবু বকর (রাঃ) মসজিদ। মসজিদে গামামাহ। মসজিদে সাবাহ। বেলাল (রাঃ) মসজিদ। সবকিছুই দাড়িয়ে আছে স্বীয় মহিমায়।
রিয়াজুল জান্নাহ। কে শুনেনি এই যায়গার নাম। কে আশা পোষণ করেনি এখানে দু’রাকাত নামাজ পড়ে দোয়া করার। যার পাশে ঘুমিয়ে আছে আখেরী জামানার নবী আমার প্রিয় রাসূল (সঃ)। মহান রাব্বুল আলামিন জান্নাতের বাগান রেখেছেন পৃথিবীতেই। রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ : দুনিয়াতেই দৃশ্যমান বেহেশতের বাগান। এ দুনিয়ার একটি স্থানকে জান্নাতের বাগান ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী। বাস্তবেও আমরা দেখেছি সেখানে জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দাফনের মোবারক স্থানকে অনেকেই রওজা বা বাগান বলে সম্বোধন করে থাকেন । তবে তিনি একটি স্থানকে জান্নাতের বাগান বলে ঘোষণা করেছেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-আমার ঘর (বর্তমান দাফনের স্থান) এবং আমার মিম্বরের মাঝের জায়গা (রাওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ) জান্নাতের বাগানগুলোর একটি বাগান। আর আমার মিম্বর আমার হাওজের উপর অবস্থিত। (বুখারি)
সেখানে প্রবেশ করা ইতিপূর্বে সহজ হলেও এখন একটু কঠিন করা হয়েছে।
নুসুক নামক একটি এপস এর মাধ্যমে পূর্বেই অনুমতি নিতে হয় সেখানে প্রবেশ করার। আমরা অনুমতি পেয়েছিলাম ১৩ই মে রাত ১.৩০-২.০০ ঘটিকা। অর্থ্যাৎ উক্ত সময়ের মধ্যে কেবল আমরা সেখানে প্রবেশ করতে পারবো। যথাযথ সময়ে আমরা সেখানে প্রবেশ করি। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে প্রবেশ করলেও সেখানে প্রবেশ করার পর যে অনুভূতি সেটি আসলে বুঝানো মুশকিল। জান্নাতের বাগান। আসলেই সেই নামের যথার্থতা খূজে পেয়েছি সেখানে যেয়ে। আল্লাহর এই নগন্য বান্দাকে সেই যায়গায় প্রবেশ করার সূযোগ করে দেওয়াই লক্ষ-কোটি শুকরিয়া জানায় মনিবের দরবারে সর্বপ্রথম সেখানে প্রবেশ করে। আমাদের সর্বসাকুল্যে ১০/১২ মিনিট সেখানে থাকার সূযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই অল্প সময়টুকুই বাকী জীবনের বড় একটি প্রাপ্তি হিসাবে থেকে যাবে।-চলবে
-লেখক:জেনারেল ম্যানেজার, এগ্রোভেট ফার্মা