মাহফুজুর রহমান: মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রিয় ভাই মঈন আমাদের নিতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সফর করানোর জন্য। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় সফর করার পরিকল্পনা আমাদের পূর্ব থেকেই ছিলো। মঈন ভাই এসে সেটি আমাদের সহজ করে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। একটি প্রাইভেটকারে চড়ে রওনা হয়ে যায় আমরা মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে। প্রায় ১৭০টি দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন সেখানে পড়তে। আমাদের বাংলাদেশী প্রায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী বর্তমান সেখানে অধ্যয়নরত আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌছানোর পর অনেক বাংলাদেশী ছাত্র ভাইদের সাথে আমাদের সাক্ষাত হয়। আমরা মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে সরাসরি সেখানে চলমান একটি সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগ দেই আমরা। যেখানে বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা তাদের দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরেছেন ছোট্ট একটি ষ্টলের মধ্যে। যেখানে আমাদের বাংলাদেশী ছাত্র ভাইয়েরাও একটি ষ্টল দিয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশের ষ্টল ঘুরে দেখি আমরা। ইতিমধ্যে মাগরিবের নামাজ সমাগত হওয়ায় আমরা মসজিদের দিকে রওনা করি। নামাজ শেষ করে আমরা প্রবেশ করি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সু-বিশাল লাইব্রেরীতে। এখানকার রিডিং অংশের ব্যবস্থাপনা দেখেই মনে হলো ঘন্টার পর ঘন্টা এখানে বসে বই পড়া সম্ভব। এখানে ১লক্ষ ৮০ হাজারের উপরে বই সংরক্ষিত আছে। লাইব্রেরীর বিভিন্ন অংশ আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। হাতে খূব বেশি সময় না থাকায় এখানে বসে বই পড়া থেকে বঞ্চিত হলাম। সেখান থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু স্থান আমরা পরিদর্শণ করলাম। সর্বশেষ মঈন ভাইয়ের ডরমিটরিতে যেয়ে আপ্যায়িত হয়ে আমাদের হোটেলের দিকে রওনা করলাম।
আমাদের সফরে তিনজন জুনিয়র আমাদের সাথে ছিলেন। নূর ভাইয়ের ছেলে হিশাম, মুজাহিদ ভাইয়ের ছেলে জাইম এবং রাসেল ভাইয়ের মেয়ে আয়েশা। যারা সর্বদা আমাদের উজ্জিবিত করে রাখতেন। যদিও মুজাহিদ ভাই আমাদের আগেই দেশে ফিরে যান তার অফিসিয়াল জটিলতার কারনে। যার ফলে জাইমকে আমরা মিস করি। তবে বাকী দুইজন আমাদের সফরের শেষ পর্যন্ত আলোড়িত করে রাখেন। বাচ্চাদের সাথে আমার একটু হৃদ্যতা থাকার কারনে তাদের তিনজনের সাথেই খুব সহজেই আমার ভাব জমে ওঠে। মাত্র চার মাস বয়সী আয়েশা তো আমার কোলে উঠে আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতো। জার্নিতে জাইম অধিকাংশ সময় আমার কোলে। এবং হিশামের সাথে অনেক সময় রাত ২/৩টা পর্যন্ত সঙ্গ দিতে হতো আমার। সবাই যখন ঘুমিয়ে তখন আমি এবং হিশাম বিভিন্নগল্পে মগ্ন।
মক্কার ন্যায় যেন মদিনার দিনগুলোও খুব দ্রæত অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছিলো। সফরের একেবারে শেষপ্রান্তে যত আসছি মনটা ততই ভারী হয়ে উঠছে। এই শহরের মায়ায় বাধা পড়েছি। কিছুতেই যেন মন চাইছেনা এই ভালোবাসার শহর ছেড়ে চলে যাই। দেশে যাওয়ার কথা মনে পড়তেই মনের কোনে কোথায় যেন সূপ্ত ব্যাথা অনুভব করছি। মসজিদে নববীতে যখন প্রবেশ করি সেখান থেকে বের হতে মন সায় দিতোনা। মনে হতো আর একটু বসি। আর একটু বসি।এভাবেই ঘন্টার পর ঘন্টা সেখানে পার হয়ে যেতো।।-চলবে
-লেখক:জেনারেল ম্যানেজার, এগ্রোভেট ফার্মা