গবাদি প্রাণীতে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ভবিষ্যতে মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, গবাদি প্রাণীতে যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়াসমূহে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে। যা মানব সম্পদের জন্য ভবিষ্যতে মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। মানুষ এবং গবাদি প্রাণী পাশাপাশি থাকলে প্রাণিসম্পদে ক্ষতিকর কিছু ব্যবহার করা হলে তা মানুষের শরীরে ফেরত আসার সম্ভবা তৈরি হয়। তাই আমাদের অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।

উপদেষ্টা আজ সকালে সৈয়দপুরের ইক্যু হেরিটেজ হোটেল এন্ড রিসোর্ট মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) আঞ্চলিক কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও কর্মশালা-২০২৫ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় জাতের মুরগিসমূহ হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ একটি ভৌগোলিক বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ, এদেশের বিভিন্ন রিজিওনাল ভেরিয়েশনাল ক্ষেত্র বিবেচনায় নিয়ে দেশীয় সম্পদসমূহ রক্ষা করতে হবে এবং অঞ্চলভিত্তিক ক্ষতির কারণসমূহ চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। দেশীয় মুরগির পাশাপাশি হাঁসের ডিমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ফিড ইন্ড্রাস্ট্রিতেও আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের সাথে সাথে খাদ্য তৈরির উপাদানের ক্ষেত্রেও আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। বাইরে থেকে খাদ্য তৈরির উপাদান আমদানি করা হলে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।

এর আগে উপদেষ্টা বিএলআরআই এর আঞ্চলিক কেন্দ্র পরিদর্শনকালে গরুর মাংস আমদানির ক্ষেত্রে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, দেশে মাংস উৎপাদনে নিয়োজিত খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার সর্বদা সচেষ্ট। দেশের ক্ষতি হয়-এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না।

এছাড়া বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-এর স্বাদুপানি উপকেন্দ্র পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, হারিয়ে যাওয়া মাছ ফিরিয়ে আনার জন্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খাদ্যব্যবস্থাপনা ও উপযুক্ত কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে এসব মাছের প্রজাতি রক্ষা করা সম্ভব হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। তিনি বলেন, খাবারের দাম বৃ্দ্ধি পেলে পোল্ট্রি বা ডিমের দাম বাড়বেই। একারণে কম খরচে খাদ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণা করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের কাজের ব্র্যান্ডিং বাড়াতে হবে। একই সাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে কর্মরত জনবলের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় সকল প্রকার সহযোগিতা করবে।

কর্মশালায় বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে উঠার সাথে সাথে আমাদের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। বিএলআরআই দেশীয় সম্পদকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিএলআরআই ভবিষ্যতে স্থানীয় জাত সংরক্ষণ ও খাদ্যের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য কাজ করবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলুফা আক্তার, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবদুর রউফ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র। কর্মশালায় স্বাগত বক্তৃতা এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএলআরআই এর পোল্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও দপ্তর প্রধান এবং পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. সাজেদুল করিম সরকার। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বিএলআরআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডার এসময় উপস্থিত ছিলেন।