ফিশ ফিড ও অ্যাকোয়াকালচারে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে হিউমিক অ্যাসিড: পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির

এগ্রিলাইফ প্রতিবেদক: বাংলাদেশের মৎস্য খাত দিনদিন প্রযুক্তিনির্ভর ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রসর হলেও ফিশ ফিড ও অ্যাকোয়াকালচার ব্যবস্থায় হিউমিক অ্যাসিড (Humic Acid) ব্যবহারের বিষয়টি এখনো বিস্তৃতভাবে আলোচিত হয়নি। অথচ এই প্রাকৃতিক জৈব পদার্থটি মাছের পুষ্টি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ, পানির গুণগত মান উন্নয়নসহ সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। আর বি এগ্রো লিমিটেড (কেজিএস গ্রুপ)-এর এজিএম, সেলস অ্যান্ড টেকনিক্যাল এবং ফিশ ফিড পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির-এর মতে, ফিশ ফিড প্রস্তুতকারক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের মাছ চাষি সবার জন্যই এটি একটি সম্ভাবনাময় সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে Aqua Nutrition ও Aquaculture–এ হিউমিক অ্যাসিড ব্যবহারের বিষয়ে নতুন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আর বি এগ্রো লিমিটেড (কেজিএস গ্রুপ)-এর এজিএম, সেলস অ্যান্ড টেকনিক্যাল এবং ফিশ ফিড পুষ্টিবিদ সাইফি নাসির মনে করেন, হিউমিক অ্যাসিড বাংলাদেশের মৎস্যশিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করবে। তাঁর মতে, এটি ফিশ ফিড উৎপাদন থেকে মাছ চাষ উভয় ক্ষেত্রের জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর সমাধান দিতে সক্ষম।

সাইফি নাসির জানান, হিউমিক অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক জৈব অণু, যা উদ্ভিদের পচন, জৈব পদার্থ ও লিওনার্ডাইট বা পিট-এর মতো উৎস থেকে তৈরি হয়। এটি পুষ্টির প্রাপ্যতা বৃদ্ধি, রাসায়নিক ভারসাম্য রক্ষা এবং বৃদ্ধি প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে স্বীকৃত।

পুষ্টিবিদ নাসিরের মতে, হিউমিক অ্যাসিড ফিশ ফিডে পুষ্টি শোষণ বাড়ায়, বিশেষ করে ফসফরাস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। এতে মাছের পরিপাকতন্ত্র উন্নত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং ওজন দ্রুত বাড়ে। এমনকি খাদ্য গ্রহণে অনীহা কমায়, ফলে ফিড কনভার্সন রেশিও (FCR) উন্নত হয় এবং উৎপাদন ব্যয় কমে আসে।

পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে হিউমিক অ্যাসিড অত্যন্ত কার্যকর বলে তিনি উল্লেখ করেন। এটি পানি ও মাটির pH ভারসাম্য রক্ষা করে, উপকারী অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং পুকুরের ক্ষতিকর গ্যাস অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড বা মিথেন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলে মাছের মৃত্যুহার কমে, বিশেষত গরমকালে যখন অক্সিজেনের ঘাটতি বাড়ে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন উৎপাদনেও এটি সহায়ক ভূমিকা রাখে, যা পুকুরের ইকোসিস্টেমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পুষ্টিবিদ নাসির আরও বলেন, ফিশ ফিড ফর্মুলেশনে নিয়মিত হিউমিক অ্যাসিড যুক্ত করলে উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে। একই সঙ্গে পানির গুণগত মান স্থিতিশীল থাকায় মাঠ পর্যায়ের খামারিরা সহজেই জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান পাবেন। ফলে ফিডমিল থেকে শুরু করে প্রান্তিক মাছচাষি সবাই লাভবান হবেন।

তিনি মনে করেন, উপমহাদেশে এখনো Aqua Nutrition ও Aquaculture–এ হিউমিক অ্যাসিডের ব্যবহার তেমনভাবে বিস্তৃত হয়নি। তাই এখনই গবেষণা, প্রয়োগ ও মাঠ পর্যায়ে প্রসার ঘটানোর সুবর্ণ সময়। এর সফল প্রয়োগ হলে মৎস্য শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি, ব্যয় হ্রাস এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।