এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: ২০৪১ সালে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ লাখ মেট্রিক টন অর্জন করতে খামার যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় মৎস্যচাষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রতিটি পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো: আবদুর রহমান।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে মৎস্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মো: আব্দুর রহমান বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘ভরবো মাছে মোদের দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিবছরের মতো জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৪ উদযাপিত হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ৩১ জুলাই সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২৪ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে মৎস্যখাতে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২ জন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক, ২০২৪ প্রদান করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে ৬টি স্বর্ণ, ৮টি রৌপ্য ও ৮টি ব্রোঞ্জ পদক। এদিন বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে উন্নীতকরণের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জেলেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মৎস্য অভয়াশ্রম ও সংরক্ষিত এলাকা স্থাপন, ইলিশ সংরক্ষণ, সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা বিকাশে সামুদ্রিক মাছের মজুদ নিরূপণ ও স্থায়িত্বশীল আহরণ, মৎস্য ও মৎস্য পণ্যের ভ্যালুচেইন উন্নয়ন, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
মন্ত্রী বলেন, নদীনালা, খাল, বিলে পোনা অবমুক্তকরণ, মৎস্য হ্যাচারি আধুনিকায়ন,খাঁচায় মাছ চাষ প্রযুক্তি ও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়ানো হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ চীনকে টপকিয়ে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে মাছ উৎপাদনে আমরা প্রথম হতে চাই। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। সামুদ্রিক মাছের অবস্থান, গতিবিধি, মজুদ নিরূপণ ও আহরণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার আধুনিক ট্রলার আনার ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তা পাওয়া গেলে তাকে স্বাগত জানানো হবে এবং এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানান মন্ত্রী। সামুদ্রিক মাছের আহরণ, বিপণন ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করতে পারলে মৎস্য খাত বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলে মন্ত্রী এ সময় মন্তব্য করেন।
সরকার মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে তাদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রায় ১৮ লাখ ১০ হাজার জেলের মধ্যে ১৫ লাখ ৮০ হাজার জেলেকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ৫০টিরও অধিক দেশে বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে। বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্বেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭৪০৮ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ৪৪৯৬.৩৮ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এসময় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২৪ উপলক্ষ্যে গৃহীত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি এবং দেশের সব জেলা-উপজেলায় স্থানীয়ভাবে ০৭ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির উল্লেখ করেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ৩১ জুলাই সকাল ১০.৩০ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, ঢাকায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ, ২০২৪ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এদিন বেলা ১২.০০ টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। তৃতীয় দিন ০১ আগস্ট সকাল ১০.০০ টায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব মোঃ সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনস্থ পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। সপ্তাহের চতুর্থ দিন বিএফআরআই কর্তৃক একটি সেমিনার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। ৫ম দিন ০৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ ভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করবেন। ৬ষ্ঠ ও ৭ম দিনে যথাক্রমে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রগণ কর্তৃক মাছের পোনা অবমুক্তকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ, আলোচনা অনুষ্ঠান, মৎস্য খাতের সাফল্য নিয়ে ভিডিও প্রদর্শন এবং মৎস্য খাতে বর্তমান সরকারের অবদান ও অর্জন নিয়ে স্ক্রল ও টিভিসি প্রচার করা হবে। তাছাড়াও দেশের সকল জেলা-উপজেলায় সপ্তাহব্যাপী আলোচনা সভা, সেমিনার/কর্মশালা, র্যালি, পোনা অবমুক্তকরণ, স্থানীয় পর্যায়ে সফল মৎস্য চাষি ও উদ্যোক্তাদের পুরস্কার বিতরণ, মৎস্য খাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, মৎস্যচাষিদের জন্য বিশেষ পরামর্শ সেবা, পানি পরীক্ষা, রচনা/কুইজ প্রতিযোগিতা, সুফলভোগীদের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
অবৈধ কারেন্ট জালের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উৎপাদনকারীরা এ বিষয়ে কোর্টে রিট করায় উৎপাদন বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সজাগ আছে এবং আইন মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।
চিংড়িতে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি জমিতে লবণাক্ততার প্রবেশের ফলে জমির মালিকরা এখাতে জমি ইজারা দিতে চান না। এছাড়া দেশীয় বাজারে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশে চিংড়ির রপ্তানি কিছুটা কমে গেছে। তবে চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কক্সবাজারে একটি বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন তৈরি করার প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মোঃ আলমগীর এসময় উপস্থিত ছিলেন।