এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: "Let's Celebrate the Power of Dairy" এই প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আজ ০১ জুন, ২০২৫ খ্রি. তারিখ রোজ রবিবার বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এর ডেইরি রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের উদ্যোগে "বিশ্ব দুগ্ধ দিবস-২০২৫" উদযাপিত হয়।
দিবসটি উদযাপনের আয়োজনের মধ্যে ছিলো বর্ণাঢ্য একটি র্যালি এবং র্যালির পরবর্তীতে দুগ্ধ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, দুগ্ধ শিল্পের বিকাশ ও দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়নে বিএলআরআই কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি সেমিনার।
সকাল ৯.৩০ ঘটিকায় ডেইরি রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার প্রাঙ্গণ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি যাত্রা শুরু করে। এসময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জনাব মো. ইমাম উদ্দীন কবীর এর নেতৃত্বে উক্ত র্যালিতে অংশ নেন বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুকসহ ইনস্টিটিউটের সকল স্তরের বিজ্ঞানী-কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। বর্ণিল টিশার্ট, ক্যাপ ও প্ল্যাকার্ড সম্বলিত র্যালিটি এরপর বিএলআরআই এর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে শেষ হয়।
র্যালি শেষে বিএলআরআই-এর প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিশুদের জন্য দুধ ও দই বিতরণ করা হয়। এসময় উৎসব মুখর পরিবেশ ইনস্টটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তান-সন্ততিগণ উক্ত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
উপরোক্ত কর্মসূচি শেষে ইনস্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষ (৪র্থ তলায়) একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জনাব মো. ইমাম উদ্দীন কবীর। উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক। এছাড়াও, উক্ত সেমিনারে বিএলআরআই এর সকল বিভাগীয় প্রধান, দপ্তর প্রধান, শাখা প্রধান, ডেইরি সেক্টরের বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারগণ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দমহ বিএলআরআই এর সকল পর্যায়ের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ১১.০০ ঘটিকায় পবিত্র গ্রন্থ হতে পাঠের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু্ হয়। শুরুতেই আমন্ত্রিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রাণী উৎপাদন গবেষণা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. বিপ্লব কুমার রায়।
স্বাগত বক্তব্যের পর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেইরি রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের দপ্তর প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. রাকিবুল হাসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষজ্ঞ আলোচনা। এসময় আলোচনা করেন প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মতিন, ডিপার্টমেন্ট অফ ডেইরি সায়েন্স, ফ্যাকাল্টি অফ এনিমেল সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী এবং জনাব মুহাম্মদ মকবুল হোসেন, ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্ক ভিটা)।
বিশেষজ্ঞ আলোচনার পরে অনুষ্ঠিত হয় উন্মুক্ত আলোচনা। আলোচনায় উপস্থিত বক্তাগণ উল্লেখ করেন, দুধ একটি পুষ্টিকর খাবার। বাচ্চা হতে বৃদ্ধ সকলের দুধ পান করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আরো সচেতনতা ও প্রচারনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন একটি ভালো উদ্যোগ। এছাড়াও, বক্তরা পরামর্শ প্রদান করেন যে, যাদের ক্ষেত্রে দুধ খেলে পেটে সমস্যা হয় তারা দই, লাবানসহ অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য খেতে পারেন। এছাড়াও, এসময় বক্তারা আরও বলেন, বিএলআরআই এ ডেইরির উপর গবেষণার জন্য ডেইরি রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও দুগ্ধপণ্য তৈরির কলাকৌশল উদ্ভাবিত হবে। দুগ্ধ দিবস সহ দুগ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে দুধের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষ আরও সচেতন হবে এবং দুগ্ধপণ্য খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও বিএলআরআই কর্তৃক এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করাকে সকলে সাধুবাদ জানান।
এসময় বিএরআরআই এর বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও দপ্তর প্রধানগণ এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। এরপর আমন্ত্রিত অতিথিরা একে একে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জনাব মো. ইমাম উদ্দীন কবীর বলেন, দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুষম একটি খাদ্য। আর তাই বাচ্চা হতে সকল বয়সের মানুষের দৈনিক দুধ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ। এই অভ্যাস যেনো সকলের মধ্যে গড়ে তোলা সম্ভব হয় তা নিশ্চিত করতে বিএলআরআইকে কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে। এসময় তিনি দুধে ভেজাল মেশানের কুফল সম্পর্কেও আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, মানুষের ৭০%-৮০% রোগের কারণই হলো তার জীবনযাপন ও খাদ্য অভ্যাস। এক্ষেত্রে দুধে যেহেতু ভিটামিন সি ও আয়য়ন ছাড়া সকল খাদ্য উপাদান বিদ্যমান, তাই দুধ খাদ্য তালিকায় যুক্ত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বাচ্চাদের দুধ খেতে আগ্রহী করে তোলায় বাবা-মাকেই বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। ধূমপানের কুফল ও দুধ পানের সুফল সকলকে জানাতে হবে। তবেই মেধাসম্মত জাতি গঠন করা সম্ভব হবে।