মেহেদী ইসলাম: বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে একত্রে বাংলাদেশ যখন ২১ নভেম্বর বিশ্ব মৎস্য দিবস পালন করছে, তখন এসিআই অ্যাকোয়াকালচার আমাদের দেশের অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং গ্রামীণ জীবিকার ক্ষেত্রে মৎস্য খাতের অপরিহার্য ভূমিকা উদযাপন করছে। এই খাতের টেকসই উন্নয়নে এসিআই অ্যাকোয়াকালচার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও দেশের মৎস্য চাষীদের জীবনমান উন্নত করার জন্য উদ্ভাবনী পণ্য ও প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে আসছে।
বাংলাদেশে মৎস্য খাত: একটি জাতীয় সম্পদ
বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪.৬৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করেছে, যা গত দশকে ৫.৩৮% বার্ষিক বৃদ্ধির হার দেখিয়েছে। এই খাত জাতীয় আয়ের প্রায় ৩.৬৯% এবং প্রাণিজ প্রোটিনের ৬০% এর বেশি সরবরাহ করে, যা খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি, প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মানুষ এই খাতের সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। এসিআই অ্যাকোয়াকালচার গর্বের সাথে এই পরিসরে কাজ করছে, এবং উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা বৃদ্ধি করতে মৎস্য চাষীদের উপযুক্ত সমাধান প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শিল্পের অর্জন: প্রবৃদ্ধি এবং উদ্ভাবন
বাংলাদেশের মৎস্য খাত গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এই খাতের উন্নতিতে বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ, উন্নত মাছের খাদ্য এবং স্বাস্থ্য উন্নয়নমূলক পণ্যের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসিআই অ্যাকোয়াকালচার পরিবেশবান্ধব ও গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য যেমন ‘অ্যাকোয়া লাইম (ভিয়েতনাম)’ সরবরাহের মাধ্যমে এই পরিবর্তনের অংশ হয়ে গর্বিত। আমরা এমন পণ্য সরবরাহ করতে সচেষ্ট, যা মৎস্য খাতের স্থিতিশীলতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়।
মৎস্য খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ
এই শিল্পে অব্যাহত উন্নতির জন্য কিছু মূল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা প্রয়োজন:
১. পরিবেশগত প্রভাব ও জলবায়ু সহনশীলতা: বাংলাদেশে মৎস্য উৎপাদন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে একটি স্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং সামুদ্রিক লবণাক্ততার মতো সমস্যা মাছের বাসস্থানের ওপর প্রভাব ফেলছে, যা টেকসই উৎপাদনশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
২. গুণগত মানের পোনা সরবরাহ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ: পোনা প্রাপ্যতা এবং মান নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চাষীদের লাভজনকতা এবং উৎপাদনের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। সরকারের সমীক্ষা অনুসারে, বছরে বাংলাদেশে ৫০% এর বেশি চাষি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যা উন্নত রোগ ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
৩. বাজারে প্রবেশাধিকার ও আয়ের স্থায়িত্ব: বাজারে সঠিকভাবে প্রবেশ করতে না পারার কারণে অনেক ক্ষুদ্র চাষি ন্যায্য মূল্য পায় না। উন্নত ট্রান্সপোর্টেশন এবং সংরক্ষণ অবকাঠামোর অভাব অনেক চাষির আয়কে সীমিত করে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৪. অর্থায়ন ও নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন: মৎস্য খাতে অধিক সহায়ক নীতি এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। টেকসই উন্নতির জন্য প্রয়োজন আরো উন্নত প্রশিক্ষণ এবং সহায়ক অর্থায়ন ব্যবস্থা, যা চাষীদের তাদের ব্যবসায়কে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
টেকসই বৃদ্ধির সুযোগ
এসিআই অ্যাকোয়াকালচার একটি টেকসই ও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছে যেখানে টেকসই এবং প্রবৃদ্ধি একসাথে চলবে। আমাদের কৌশলটি মানসম্পন্ন অ্যাকোয়াকালচার ইনপুট সরবরাহ এবং চাষীদের টেকসই উৎপাদনশীলতা অর্জনে সহায়তা করার উপর কেন্দ্রিত:
১. পণ্য উদ্ভাবন ও মানসম্পন্ন ইনপুট: নতুন মাছের লিভার টনিক এসিআই লিভগার্ড-এর মতো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য পণ্য বিকাশের মাধ্যমে আমরা মাছের স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক সমাধান সরবরাহ করছি।
২. চাষীদের জ্ঞান ও কারিগরি সহায়তা প্রদান: এসিআই অ্যাকোয়াকালচার চাষীদের রোগ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যের দক্ষতা ও জলমান ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এভাবে আমরা তাদের লাভজনক এবং টেকসই চর্চা গ্রহণে উৎসাহিত করছি।
৩. বাজার প্রসার ও পণ্যের গুণগত মান উন্নতকরণ: গুণগত মানের উপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা বাজার নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করতে এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশি মাছের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করছি।
এই বিশ্ব মৎস্য দিবসে, এসিআই অ্যাকোয়াকালচার বাংলাদেশের মৎস্য খাতের টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে। আমাদের লক্ষ্য হলো চাষীদের ক্ষমতায়ন, গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং চাষাবাদকে একটি সফল ও টেকসই জীবিকা হিসেবে গড়ে তোলা।
তথ্যসূত্র:
১. বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের রিপোর্ট এবং ‘বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট’ থেকে তথ্য।
২. FAO (Food and Agriculture Organization) এবং World Bank-এর প্রতিবেদন।
৩. স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা নিবন্ধ এবং রিপোর্ট।
লেখক: মেহেদী ইসলাম, মার্কেটিং ম্যানেজার, এসিআই অ্যাকোয়াকালচার, এনিমেল হেলথ্