এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: ‘মাটি পরীক্ষা করে সার দিন, সারের অপচয় কমিয়ে অধিক ফসল ঘরে নিন’ স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে চলছে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) এর ১০টি ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগারের মাধ্যমে রবি-২০২৪ মৌসুমের কৃষক সেবা কার্যক্রম।
এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণের ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষা গবেষণাগার (এমএসটিএল)কীর্তনখোলা কর্তৃক বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলায় সুষম সার সুপারিশ কার্ড বিতরণ ও কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বিভাগীয় গবেষণাগার বরিশালের আয়োজনে এবং গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসআরডিআই, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রহমান এবং সভাপতিত্ব করেন এমএসটিএল কীর্তনখোলার টিম লিডার ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী আমিনুল ইসলাম।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও টীম কীর্তনখোলার সদস্য কৃষিবিদ মো: কায়েস মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসআরডিআই বিভাগীয় গবেষণাগার বরিশালের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একেএম আমিনুল ইসলাম আকন, গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সেকেন্দার শেখ, টীম কীর্তনখোলার সদস্য মো: রাসেল মাহমুদ প্রমুখ।
উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তারা মাটি সৃষ্টির ইতিহাস, মাটির ভৌত- রাসায়নিক গুণাবলী, বিভিন্ন ফসলের উপযোগিতা, মাটির গুণাগুণ, মাটি পরীক্ষার গুরুত্ব, মাটির নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি, মাটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, ভেজাল সার শনাক্তকরণ, ভেজাল সারের কুফল এবং সুষম সার ব্যবহার করে অর্থ সাশ্রয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও ট্রেনিং সেশন পরিচালনা করেন।
এছাড়াও বক্তারা মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাটি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা, মাটির প্রাণ জৈব সারের পর্যাপ্ত ব্যবহার বৃদ্ধি, রাসায়নিক সারের যথেচ্ছা ব্যবহার হ্রাস এবং সুষম সার ব্যবহারের উপর গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সার সুপারিশ কার্ড কিভাবে ব্যবহার করবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন কীর্তনখোলার টীম লিডার কাজী আমিনুল ইসলাম। উপজেলা কৃষি অফিসার মো: সেকেন্দার শেখ কৃষক পর্যায়ে সরাসরি ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং গৌরনদী উপজেলা কৃষি অফিসকে সিলেকশন করার জন্য এসআরডিআই এর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ড.বেগম সামিয়া সুলতানাকে ধন্যবাদ জানান।
এ এসময় বক্তারা আরও বলেন আমাদের সীমিত মৃত্তিকা সম্পদের উর্বরতা ঠিক রেখে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। আর মাটির স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য মাটি পরীক্ষা করে সুষম সার ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। মাটি পরীক্ষা করে সার দিলে সারের অপচয় রোধ হয়, ফলন ২০-৩০% বৃদ্ধি পায়, জমির স্বাস্থ্য ভালো থাকে, পরিবেশও ভালো থাকে, মাটি দূষণ, পানি দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কৃষকের দোরগোড়ায় মৃত্তিকার সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চলমান এই কর্মসূচিকে কৃষাণ কৃষাণী, উদ্যোক্তারা স্বাগত জানান এবং অন্যান্য কৃষকদেরকেও তারা মাটি পরীক্ষা করে সার দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিবেন বলে আশ্বস্থ করেন। কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করতে এমএসটিএল কীর্তনখোলার রবি ২০২৪ মৌসুমের কার্যক্রম বরিশাল বিভাগের ৪ টি উপজেলা নেছাড়াবাদ, গৌরনদী, দুমকী ও বরগুনা সদরে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই কর্মসূচিতে মাত্র ২৫ টাকার বিনিময়ে মাটি পরীক্ষার এই সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছেন চাষীরা যার প্রকৃত খরচ ৪৪০ টাকা যা সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। এছাড়াও সরকার কৃষকদের জন্য অত্যন্ত কম খরচে মাটি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। সেজন্য সবাইকে নিকটস্থ কৃষি অফিসের মাধ্যমে অথবা সরাসরি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট হতে মাটি পরীক্ষা করে চাষাবাদ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।