সাফল্যে গাঁথা একজন উদ্যোক্তার সফলতার গল্প!!!

মোহাম্মদ শাহজাহানঃজাহাঙ্গীর আলম সুজন বয়সে তরুণ একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মিসকাহ পোল্ট্রি ফার্ম এন্ড সেলস্ সেন্টারের স্বত্বাধিকারী, মুহুরী পাড়া, লিংক রোড, কক্সবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা। বছর দশেক আগে থেকেই তার ব্যবসার হাতেখড়ি হয়। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের "রাণী" খ্যাত কক্সবাজার হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনাময়ী স্থান! সেই লক্ষ্যেকে সামনে রেখে তার সুদুর প্রসারী চিন্তা ও মননে ব্যবসায়িক পরিবর্তন ঘটতে থাকে প্রতিনিয়ত। ফলে পোল্ট্রি ও পোল্ট্রিজাত পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার পরিচিতির ব্যাপ্তি ও ব্যবসা বাড়তে থাকে আশপাশের জেলা শহর গুলোতে।

শহরের হোটেল-মোটেল জোনে তারকা মানের একাধিক হোটেল, বিভিন্ন হাসপাতাল এবং কক্সবাজার রেলওয়েতে তিনি পোল্ট্রিজাত পণ্য সরবরাহ করে আসছেন নিয়মিত। তাছাড়া দৈনিক ৪০০-৫০০ কেজি মুরগী পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় করে থাকেন। কিন্তু সফলতার মাঝামাঝি এসে কোন এক অজানা কারণে তিনি ব্যবসায়িক ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েন! তার ব্যবসা-বাণিজ্য কমতে থাকে!! বড় বড় পার্টি ও ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গুলো মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করে! সম্প্রতি ফুড সিকিউরিটি ইনস্পেক্টর টীম এসে অভিযান চালায়! পরিচ্ছন্নতা বিধি ও মূল্য তালিকা না থাকার কারণে জরিমানা করা হয়। এতে তিনি অনেকটা হতাশ হয়ে পড়েন!

এই খারাপ সময়ে তার সাথে পরিচয় হয় কোস্ট ফাউন্ডেশনের আরএমটিপি (পোল্ট্রি) প্রকল্পের একজন কর্মকর্তার সাথে! বিভিন্ন বিষয়ে আলাপচারিতায় এক পর্যায়ে তিনি তার সমস্যা গুলো শেয়ার করেন প্রকল্প কর্মকর্তার কাছে! কোস্ট ফাউন্ডেশনের চলমান প্রকল্প আরএমটিপি (পোল্ট্রি)'র হাইজেনিক ও হালাল পোল্ট্রি চেইন শপ উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় সর্ম্পকে তাকে ধারণা দেন প্রকল্প কর্মকর্তা। এছাড়া উল্লেখিত খাতে উদ্যোক্তাদের অনুদান প্রদানের বিষয়টি ও অবগত করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় উক্ত উদ্যোক্তা উদ্বুদ্ধ হয়ে হাইজেনিক ও হালাল পোল্ট্রি চেইন শপ উন্নয়নে অনুদানের জন্য আবেদন করেন। দু'জনের পারস্পরিক আলাপ ও পরিদর্শনকালে প্রকল্প কর্মকর্তা উদ্যোক্তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নিম্নে উল্লেখিত সমস্যা গুলো চিহ্নিত করেন ----

★অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পোল্ট্রিজাত পণ্য সরবরাহ।
★ এই কাজে নিয়োজিত কর্মীদের পরিচ্ছন্নতা বিধি মেনে না চলা।
★ কর্মীদের স্বাস্থ্য বিধি (যেমন - মাক্স, গ্লাভস, এপ্রন, মাথায় নেট ইত্যাদি) মেনে না চলা।
★ কাটিং স্পেসে ছিল কাঠের টেবিল , সাধারণ মেঝে , অস্বাস্থ্যকর ওয়াশিং স্পেস এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ।
★ বিপণন কৌশল ছিল গতানুগতিক এবং অফ লাইনে সামান্য পরিসরে।
★ পরিচিতির জন্য সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, মূল্য তালিকা, স্টিকার, প্যাকেজিং ব্যবস্থা নেই।
★ বড় বড় ক্রেতাসাধারণকে তার মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ সেন্টারটি পরিদর্শন করানোর অনুপযোগী ছিল।

আবেদনের আলোকে উদ্যোক্তার অনুদান অনুমোদিত হয় এবং অনুদানের অর্থ দিয়ে শনাক্তকৃত সমস্যা গুলো সমাধান করে তার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে নিম্নোক্ত পরিবর্তন গুলো আনয়ন করা হয়েছে------

★ বর্তমানে হালাল ভাবে জবেহকৃত পোল্ট্রিজাত পণ্য স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। ড্রেসিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে পরিষ্কার পানি।
★ এই কাজে নিয়োজিত কর্মীরা পরিচ্ছন্নতা বিধি মেনে চলে। ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ গুলোও নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে।
★ নিয়োজিত কর্মীরা স্বাস্থ্য বিধি (যেমন - মাক্স, গ্লাভস, এপ্রন, মাথায় নেট ইত্যাদি) মেনে চলে।
★ বর্তমানে কাটিং স্পেস, মেঝে , ওয়াশিং স্পেসে বসানো হয়েছে ঝকঝকে তকতকে টাইলস। যা নিয়মিত পরিষ্কার রাখে কর্মীরা।
★ বর্তমানে বিপণন কৌশল হচ্ছে ভিন্ন ধাঁচের। অফ লাইনের পাশাপাশি অনলাইনে ও রয়েছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। "মিসকাহ পোল্ট্রি এন্ড সেলস সেন্টার " নামে অনলাইনে রয়েছে আলাদা পেইজ যা উন্নয়নে বুস্টিং সহায়তা বাবদ অনুদান ও পেয়েছেন তিনি।
★ বর্তমানে পরিচিতির জন্য সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, মূল্য তালিকা, স্টিকার ও প্যাকেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
★ এখন তিনি ক্রেতাসাধারণকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তার মুরগী প্রক্রিয়াজাতকরণ সেন্টারটি ভিজিট করাতে পারছেন। ফলে ক্রেতারা ও সন্তুষ্ট।

তুলনামূলক বিশ্লেষণে বর্তমানে তিনি যে যে সুফল পাচ্ছেন তার ভাষ্যমতে তা নিম্নরূপঃ
★ তার ব্যবসায়িক পরিচিতি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
★ অফ লাইন ও অনলাইনে প্রতি মাসে তার বিক্রির হার বেড়েছে গড়ে প্রায় ২০% শতাংশ।
★ ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে গড়ে প্রায় ১৫% শতাংশ।
★ নীট লাভের ক্ষেত্রে ও গড়ে বেড়েছে প্রায় ৫% শতাংশ।
★ জনসচেতনতা বেড়েছে গড়ে প্রায় ১৫% শতাংশ।
★ ক্রেতাসাধারণের সন্তুষ্টি অর্জনের পাশাপাশি ব্যবসায়িক সুনামের গ্রাফ রেখাটিও বেশ উর্ধ্বমুখী।

উক্ত উদ্যোক্তা হাইজেনিক ও হালাল পোল্ট্রি চেইন শপ উন্নয়নে কোস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ ও ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং অত্র সংস্থার নীতি নির্ধারকগনও উন্নয়ন কর্মীদের কৃতজ্ঞচিত্তে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

প্রতিবেদনটি তৈরীতে সহযোগিতা করেছেন
মোহাম্মদ শাহজাহান
বিজনেস ডেভলপমেন্ট অফিসার, আরএমটিপি(পোল্ট্রি)
কোস্ট ফাউন্ডেশন, কক্সবাজার সদর -১