নাজমুন নাহার: ভিটামিন-সি বা আ্যসকরবিক এসিড শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভিটামিন-সি মানবদেহে উৎপন্ন হয় না । তাই প্রাত্যহিক খাবার তালিকায় ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত। এটি কোষের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক। বিভিন্ন রোগের সংক্রমণে এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। এর অভাবে দাঁতের মাড়ি ও ত্বক ফেটে রক্ত পড়তে থাকে, যাকে আমরা স্কার্ভি রোগ বলি। সাধারণত ঠান্ডাজনিত রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি শরীরে আয়রণ শোষণ বৃদ্ধির মাধ্যমে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অত্যাবশ্যকীয় নিউট্রিয়েন্ট হিসেবে ভিটামিন-সি চুল ও ত্বক সুস্থ-সবল রাখে। ব্যালেন্স ডায়েট এর ক্ষেত্রেও এর জুড়ি নেই। ভিটামিন-সি সাধারণত টকজাতীয় খাবারে বেশি থাকে; যেমন :লেবুজাতীয় ফল, কমলা লেবু, বাতাবিলেবু। সবুজ শাক-সবজিতেও ভিটামিন-সি বিদ্যমান। তবে ভিটামিন-সি পানি ও তাপে নষ্ট হয়। সে জন্য সতর্কতার সঙ্গে এ ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত। বয়সভেদে এর চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন-সি গ্রহণ করা উচিত। একজন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৮০ থেকে ৯০ মি.গ্রা. এবং নারীর ৭০ থেকে ৮০ মি.গ্রা. পরিমাণই যথেষ্ট। এর অভাবে স্কার্ভি নামক রোগ হয়।
পরিবারের ভিটামিন-সি এর অভাব পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সুগন্ধি বারমাসি লেবুর জাত উদ্ভাবন করেছে। বিনালেবু-১ জাতটি বারো মাস ফলন দেয়। সূঁচালো অগ্রভাগ বিশিষ্ট সুগন্ধিযুক্ত ফলটি আকারে বেশ বড় এবং ডিম্বাকৃতি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ফলই বীজশূন্য। তবে পরিপক্ক অবস্থায় কিছু ফলে ২-৩ টি বীজ থাকতে পারে। বছরব্যাপী ফলন দেয়া এই লেবুর জাতটি লাগানোর মাধ্যমে আমরা সহজেই ভিটামিন-সির অভাব দূর করতে পারি। প্রতিটি ফলের ওজন ৯০-১৫০ গ্রাম এবং চামড়ার পুরুত্ব ০.৩-০.৪ সেমি.। একটি পরিপক্ক ফলে ৩৮ শতাংশ রস থাকে।
সাধারণত কলমের চারা রোপণের সময় হতে ১০- ১১ মাসের মধ্যে প্রথম ফলন পাওয়া যায়। কৃষক নিজেও কলমের চারা তৈরি করে প্রতি চারা ৩০ থেকে ৫০ টাকা দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারে। শরীরের জন্য ভিটামিন- সি এর রয়েছে নানারকম উপকারিতা। ভিটামিন-সি অস্থিমজ্জাতে লোহিত কণিকা ও হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে বিশেষভাবে সহায়তা করে। তাই আমরা ছাদবাগান, বারান্দায় টব বা বাড়ির আঙিনায় ২/৩ টি বিনালেবু-১ এর চারা লাগিয়ে পরিবারে ভিটামিন-সি র অভাব দূর করতে পারি।
লেখক: বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বরিশাল।