কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু।। দেশের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বন্যাপীড়িত এলাকার মানুষদেরকে সহযোগীতার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বন্যাকবলিতদের সহায়তায় নিরলসভাবে ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করেছেন। বন্যা-পরবর্তী খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্য করার জন্য বিনামূল্যে নাবি আমন ধানের চারা বিতরণ ও গবাদি প্রাণি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উদ্যোগসমূহ হচ্ছে -
• বন্যার্তদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ এক দিনের বেতনের অর্থ ২৫ লক্ষ টাকা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে প্রদান করেছেন ।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ১ মাসের স্টাইপেন্ড এর ৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বন্যার্তদের প্রদান করেছে ।
• লেট আমন ধানের চারা তৈরী করে বিনামূল্যে বন্যাদুর্গত এলাকায় সরবরাহ করার জন্য প্রায় ৫ একর জমিতে চারা তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে, যা আরও বাড়তে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমন ধানের চারা বিতরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রাপ্ত তথ্যসূত্র জানায়, বীজ বপনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) থেকে ১ টন (বিনা-১৭), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা থেকে ১৫০ কেজি (বিনা-১৭) এবং বায়ার বাংলাদেশ জামালপুর শাখা থেকে ৫০০ কেজি (ধানিগোল্ড)বীজইতোমধ্যে সংগ্রহ করে বীজতলাতে বপন করা হয়েছে।
• গবাদিপশু ও অন্যান্য প্রাণিদের চিকিৎসা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রাণি চিকিৎসক ও প্রাণি স্বাস্থ্যসেবা টীম কাজ শুরু করেছে।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বাকৃবি) ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে সকল শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্রয়াসে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রাণিসেবায় গো-খাদ্য ও মেডিসিন পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে ফেনীর তিন উপজেলা ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজীতে ৩ টন গো-খাদ্য ও মেডিসিন পাঠানো হয়েছে। এসময় খামারীদের মাঝে প্রাণি-খাদ্য প্রদান ছাড়াও গবাদিপশুর প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা, বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষুধ প্রদান এবং খামার পরিদর্শন বিভিন্ন টেকনিক্যাল পরামর্শ প্রদান করেন তারা ।পাশাপাশি টেলিমেডিসিন সেবা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । এছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ২.৫ টন এবং লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালীতে ৫১০ কেজি গো-খাদ্য সরবরাহের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের ২টি আলাদা টিম পৌঁছে গেছে । শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন কোম্পানি এ কাজে সাহায্য করেছেন । বাকৃবির এসবটিমটিকে সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করছেন বিভাগীয় ও জেলা এবং উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ।
এছাড়াও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সম্বলহীন খামারিদের মাঝে হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু বিতরণসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম হাতে নেয়ার চিন্তাভাবনা চলমান রয়েছে।
• টিএসসি কেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের গণত্রাণ কর্মসূচি চলছে। এতে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কর্মসূচির অংশ হিসাবে টিএসসিতে নগদ টাকা, শিশু, ছেলে, মেয়ে, বয়স্কদের জামাকাপড় ঔষধ, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবারসহ আরও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ চলছে।
গত ২২ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা গণত্রাণ সংগ্রহ শুরু করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ক্যান্টিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কে. আর. মার্কেটে গণত্রাণ সংগ্রহের বুথ স্থাপন করে ত্রাণ সংগ্রহ চালায়। পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসায় বাসায় গিয়ে এবং বিভিন্ন অনুষদে শিক্ষকদের কক্ষে গিয়ে গিয়েও ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন তারা। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পাশাপাশি বন্যার্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের অঞ্চলের বাসিন্দারাও । যার যার সাধ্যমতো নগদ অর্থ, কাপড়, শুকনা খাবার এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ দিয়ে সহায়তা করেছেন।
ত্রাণ হিসেবে পাওয়া কাপড়গুলো থেকে শিশু, নারী এবং পুরুষদের কাপড়গুলো বাছাই করে আলাদা আলাদাভাবে প্যাকিং করা হয়। ২২আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম শুকনা খাবার, পানি ও কাপড়সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকা ফেনীতে যায় । তারা ২৬ আগস্ট সকালে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন।
৩০ আগস্ট মধ্যরাতে ত্রাণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ২য় দফায় রওনা হয়েছেন নোয়াখালী, লক্ষীপুর এবং চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। ত্রাণ হিসেবে চাল-ডালের ৬০০ প্যাকেট, শুকনো খাবার ৩০০ প্যাকেট এবং গো-খাদ্য ৫১০ কেজি বিতরণ করা হবে। চাল, ডাল, আলু, তেল, কাপড়, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলা, মোমবাতি, দিয়াশলাই, স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় ঔষধ থাকবে প্যাকেটে।