বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় গড়ে উঠা প্লাটফর্ম "জুলাই স্মৃতি পরিষদ" এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষ্যে "কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই" শীর্ষক ছাত্র-শিক্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে বাকৃবির টিএসসি সম্মেলন কক্ষে ওই সংলাপের আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাসরুল আহসান ও বৃতি বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জায়াদ হাসান ওয়ালিদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী শেখ ফরিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ নিজার আলম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক উম্মে ফারহানা সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং "জুলাই স্মৃতি পরিষদ" এর আত্মপ্রকাশের পটভূমি নিয়ে আলোচনা করা হয়৷ অনুষ্ঠানের মূল ধারণাপত্র পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌমিত্র পাল ও তাজরিন হাসান তূর্ণা। অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান রাজু। উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তারা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকট ও সমাধানের নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করেন।
বক্তব্যে জাবির সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ নিজার আলম বলেন, "বাংলাদেশে ২০২৪ সালে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে ১-১.৫ হাজার লোক মেরে ফেলা হয়েছে। তাহলে ব্রিটিশ আমলের থেকে কোনো ভালো অবস্থায় কি আপনি আছেন? আপনি কি দেশের নাগরিক? মানব অধিকার থেকে নাগরিক অধিকার বেশি। কিন্তু আমাদের মানব অধিকার থেকেও নিচে, অমানবিক অধিকার। '২৪ সালে তাই সমঝোতা প্রয়োজন। এমন কোনো কাজ না করা যাতে মানবায়ন বিঘ্নিত হয়। আপনি রাষ্ট্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এটা মনে রাখা দরকার।" তিনি আরোও বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় সবধরনের মত-পথের লোকের জন্য। আপনি কারো সাথে একমত হবেন, কারো সাথে হবেন না। এখন অনেক জায়গায় দেখা যায় ভিন্ন মতের মানুষকে মত প্রকাশে বাধা দেয়া হচ্ছে। যে আমার সমালোচনা করবে তার পাশে বসেই তো কথা বলার কথা। কিন্তু তা হচ্ছেনা। শিক্ষক ভুল করলে ছাত্র সেই ভুল করতে পারেনা। আপনার বিবেচনা সবসময় যুক্তি নির্ভর হওয়া উচিত এবং সবসময় ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে মোরালি ডিসিশন নেয়া প্রয়োজন।"
বক্তব্যে বাকৃবির অধ্যাপক কাজী ফরিদ বলেন, "কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই ? এমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই, যেখানে সবার কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাই কেমন শিক্ষক চাই এবং কেমন শিক্ষার্থী চাই এই প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ।" এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সংকট ও সমাধান নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
প্রশ্নোত্তর পর্বে এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের উত্তরে জাককানইবির শিক্ষক উম্মে ফারহানা বলেন, "ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক হবে মোরালিটির উপর নির্ভর করে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী দুইজনই তাদের মোরাল দিক দিয়ে শক্তিশালী থাকলেই কেবল মানোন্নয়ন সম্ভব।"
গণমানুষের অংশগ্রহণে যে অভূতপূর্ব আন্দোলন ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে শত প্রাণের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছে সে নতুন বাংলাদেশে শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতান্ত্রিক ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, জনমানুষের টাকায় যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় সেই যেন জনমানুষের কল্যাণে জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার সুযোগ অবারিত থাকে ও প্রকৃত মানুষ হবার সমস্ত আয়োজন থাকে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় এবং সবশেষে বাকৃবিতে "জুলাই স্মৃতি পরিষদ" এর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।