ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান: আমরা অনেকেই গৃহে পশুপাখি লালন-পালন করে থাকি। কিন্ত পশুপাখির রোগবালাই রোধে অনেকটাই উদাসীন। পশুপাখির সুষ্ঠু স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিশ্চিত করা একটি সফল পশুপাখি পালনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রোগ-বালাই রোধে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পশুপাখির জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। আবার সঠিকসময়ে গৃহপালিত পশুর রোগ বালাই রোধে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে সে রোগগুলো ছড়িয়ে যেতে পারে মানুষের মধ্যে। আর এ কারণে, পশুপাখির রোগ বালাই রোধের বিষয়ে থাকতে হবে খুবই সতর্ক। সঠিকভাবে পশুপাখির রোগ-বালাই রোধে কার্যকর ১০ টি পদক্ষেপ তুলে ধরছি, যা অবশ্যই পালনীয়।
১. স্বাস্থ্যবান পশুপাখি নির্বাচন: প্রথম ধাপ হিসেবে, স্বাস্থ্যবান পশুপাখি নির্বাচন করতে হবে। রোগমুক্ত এবং সুস্থ পশুপাখি নির্বাচনের জন্য স্থানীয় এর পরামর্শ গ্রহণ করুন। পুষ্টি, প্রকৃতি, এবং স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী পশুপাখি নির্বাচন করলে রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি কমে যায়।
২. সঠিক খাদ্য ও পুষ্টি: পশুপাখির সঠিক বৃদ্ধি ও উন্নত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সুষম খাদ্য প্রদান করা অপরিহার্য। তাদের খাদ্যে পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন, এবং মিনারেল থাকা উচিত। খাদ্য সংক্রমণ বা খাদ্যবাহিত রোগ থেকে রক্ষা করতে প্রাপ্ত খাদ্য ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করা উচিত।
৩. স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা: পশুপাখির নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং টিকাদান নিশ্চিত করুন। রোগ প্রতিরোধী টিকা যেমন- পশুর পা ও মুখের রোগ, অ্যানথ্রাক্স, ব্ল্যাক কোয়ার্টার, হেমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া, ছাগলের পিপিআর, পক্স এবং মুরগির নিউক্যাসল রোগ, মারেকস রোগ, সংক্রামক বার্সাল রোগ, ফাউল পক্স, ফাউল কলেরা রোগের জন্য টিকাদান করা প্রয়োজন। সঠিক সময়ে টিকা দেওয়া হলে রোগের সম্ভাবনা কমে যায়।
৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটেশন: পশু বা পাখির আশ্রয়স্থল এবং পরিবেশ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতিদিন মেঝে পরিষ্কার করুন এবং মল-মূত্র অপসারণ করুন। এছাড়াও, পশুপাখির খাদ্য এবং পানির পাত্রও নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে যাতে ব্যাকটেরিয়া ও রোগ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৫. নিয়মিত পর্যবেক্ষণ: পশুপাখির স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আচরণ, খাদ্য গ্রহণ, এবং শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ্য করুন। কোন রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। রোগের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসা কার্যকর রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৬. বিভিন্ন রোগের জন্য সঠিক চিকিৎসা: যদি কোন রোগের উপসর্গ দেখা দেয়, তাৎক্ষণিকভাবে ভেটেরিনিয়ানের সাথে যোগাযোগ করুন। রোগের প্রকৃতি অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা এবং ঔষধ গ্রহণ করা উচিত। রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেরি করলে রোগ আরও মারাত্মক হতে পারে।
৭. পর্যাপ্ত স্থান ও বায়ুচলাচল: পশুপাখির আশ্রয়স্থলে পর্যাপ্ত স্থান এবং বায়ুচলাচল নিশ্চিত করুন। পশুপাখির ঠাসাঠাসি অবস্থা ও অক্সিজেনের অভাব রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সঠিক বায়ুচলাচল এবং স্থানীয় পরিসর রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
৮. পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: পশুপাখির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের গায়ে কোনও ময়লা বা কীটনাশক সংক্রমণ হলে তা দ্রুত পরিষ্কার করুন। নিয়মিত শাওয়ার বা স্নান করানোর মাধ্যমে পরিশুদ্ধতা বজায় রাখা সম্ভব।
৯. প্রাথমিক চিকিৎসা এবং পরজীবী রোগ প্রতিরোধী: প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য একটি সঠিক রুটিন তৈরি করুন। পরজীবী রোগ প্রতিরোধী যথাসময়ে দেওয়া নিশ্চিত করুন এবং জরুরি চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকুন।
১০. প্রশিক্ষণ: পশুপাখি পালনে খামারী/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা উচিত। তাদের সঠিক পরিচর্যা, স্যানিটেশন, এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন।
লেখক: প্রফেসর, মেডিসিন বিভাগ, ভেটেরিনারি অনুষদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।