মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম: সজিনা বাংলাদেশের একটি অতিপরিচিত উচ্চমূল্যের সুস্বাদু সবজি। এর উৎপত্তিস্থল ভারতীয় উপমহাদেশে হলেও শীতপ্রধান দেশ ব্যতীত সারা বিশ্বেই এটি জন্মে। তবে বারোমাসি সজিনার জাত প্রায় সারা বছরই ফল দেয়। আমাদের দেশে কম-বেশি প্রায় ৩-৪ ধরনের সজিনা পাওয়া যায়। বসতবাড়িতে লাগানোর জন্য সজিনা একটি উত্তম সবজি হিসেবে সমাদৃত।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা সজিনার পুষ্টিগুণের জন্য একে ‘অলৌকিক গাছ’ হিসেবে অভিহিত করেন। এর পাতায় প্রায় ১০ রকমের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিডসহ ৪০% আমিষ বিদ্যমান। সবজি হিসেবে সজিনার উপকারিতার থেকেও এর পাতার উপকারি দিক অনেক বেশি। আফ্রিকার দেশসমূহে এর অনন্য ও সহজলভ্য পুষ্টির উৎস বিবেচনায় ‘মায়েদের উত্তম-বন্ধু’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অনেকে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ হিসেবেও বলে থাকে। মাল্টিভিটামিন এ বৃক্ষের পুষ্টিগুণের মধ্যে রয়েছে, প্রতি ১০০ গ্রামে: খাদ্যশক্তি ৪৩ কিলোক্যালরি, পানি ৮৫ গ্রাম, আমিষ ৩ গ্রাম, চর্বি ০.৩ গ্রাম, শর্করা ৫.২ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ৪.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪.০১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম, জিংক ০.১৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ২৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি-১ ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি-২ ০.০৩ মিলিগ্রাম এবং ভিটামিন-সি ৬৮ মিলিগ্রাম।
সজিনা পাতার গুণাগুণ আরো অত্যাধিক। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজিনা পাতা কমলার থেকে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন-সি, গাজরের চেয়ে ৪ গুণ আমিষ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং ২ গুণ আমিষ, কলার চেয়ে ৩ গুণ পটাশিয়াম, এছাড়াও প্রায় ৪৩% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬০% ম্যাগনেসিয়াম, ৪২% পটাসিয়াম, ৭৩% লৌহ, ২৭% ভিটামিন-এ এবং ২৩% ভিটামিন-সি সহ দেহের অত্যাবশ্যকীয় বহুপুষ্টি উপাদানে ভরপুর থাকে। সজিনা পাতার গুড়া গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের জন্য অত্যন্ত উপকারি।
সজিনার বীজ শুকিয়ে ভাঙ্গালে সেখান থেকে প্রায় ৪০-৪২% ভোজ্য তেল পাওয়া যায়। এ তেল হার্টের রোগীসহ সকলের জন্যই বেশ ভালো ও উপকারি। উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত খৈল, পানি শোধন ও জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ভারতীয় আয়ুর্বেদিকশাস্ত্র মতে সজিনা গাছ মানুষকে প্রায় ৩২০ রকমের রোগ থেকে রক্ষা করে। সজিনা গাছের বিভিন্ন অংশ ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন বিধায় মানুষ অনেক আগে থেকে একে ব্যবহার করে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, কোন স্থানে ব্যথা পেলে বা ফুলে গেলে সজিনা গাছের শিকড়ের প্রলেপ ব্যবহার করা হয়, সজিনার শিকড়ের রস কানব্যথা উপশম করে, সজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথাব্যথা কমে, সজিনার আঠার প্রলেপ ফোঁড়ার জন্য কার্যকরী, সজিনা ফুলের রস মুত্রথলির পাথর ও হাঁপানি রোগের উপশমের জন্য কার্যকরী, সজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেলে বাচ্চাদের পেটের গ্যাস কম হয়, সজিনার পাতা শাক হিসেবে খেলে জ্বর ও সর্দি দূর হয়, বহুমূত্র রোগে সজিনা পাতার রস খুব কার্যকরী।
সজিনার ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং সজিনা ফুলের চাটনি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। সর্বোপরি দেহকে সুস্থ-সবল ও সতেজ রাখতে সজিনার বহুবিধ ব্যবহার আমাদের জন্য খুবই উপকারি।
-লেখক: বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাকৃবি চত্বর, ময়মনসিংহ-২২০২