
এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: ভোরের আলো ফোটার আগেই মাঠে নামেন পাবনার কৃষকেরা। শীত হোক কিংবা গ্রীষ্ম -বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, শসা, মরিচে ভরে থাকে ক্ষেত। কিন্তু এই প্রাচুর্যের মাঝেই লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা -দাম। একসঙ্গে বাজারে সবজি উঠলেই দর পড়ে যায়, আর সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষক বাধ্য হন কম দামে বিক্রি করতে। পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য তখন অধরাই থেকে যায়।
এই বাস্তবতার পরিবর্তন আনতেই কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশে চালু হয়েছে ফার্মার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ কার্যক্রম। পাবনাতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় ফসল সংরক্ষণের এই নতুন ব্যবস্থা কৃষকদের মধ্যে জাগিয়েছে নতুন আশার আলো।
এই প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) পাবনা জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের হলরুমে অনুষ্ঠিত হলো ফার্মার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ বিষয়ক এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। সেখানে উপস্থিত কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের চোখেমুখে ছিল আগ্রহ আর প্রত্যাশা। আলোচনায় উঠে আসে সংরক্ষণ না থাকলে উৎপাদনের সাফল্যও যে অনেক সময় লোকসানে পরিণত হয়।
প্রশিক্ষণে জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়িত ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সাশ্রয়ী কোল্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় ঘরভিত্তিক ও কনটেইনারভিত্তিক দুই ধরনের মিনি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করা হচ্ছে। সোলারচালিত ও সেন্সরনিয়ন্ত্রিত এই স্টোরেজে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মাত্র ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কয়েক মাস পর্যন্ত সবজি ও ফল সতেজ রাখা সম্ভব যা আগে কৃষকের কল্পনারও বাইরে ছিল।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আলি কবির বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়লেও সংরক্ষণের অভাবে কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। তাঁর মতে, ফার্মার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ শুধু ফসল নষ্ট কমাবে না, বরং কৃষককে বাজার ব্যবস্থাপনায় সক্ষম করে তুলবে। এতে কৃষি হবে আরও লাভজনক ও টেকসই।
সভাপতির বক্তব্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাবনার উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, পাবনা একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি অঞ্চল হলেও সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতা কৃষকের বড় চ্যালেঞ্জ। মিনি কোল্ড স্টোরেজ চালু হলে কৃষক নিজের উৎপাদিত পণ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রাখতে পারবেন।
প্রকল্প পরিচালক তালহা জুবাইর মাসরুর তার প্রেজেন্টেশনে প্রযুক্তিগত দিকগুলো সহজ ভাষায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতি মৌসুমেই অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। সংরক্ষণের সুযোগ থাকলে কৃষক সুবিধাজনক সময়ে বাজারজাত করতে পারবেন। এই প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় সংরক্ষণ সুবিধা পৌঁছে দেবে এটাই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
প্রশিক্ষণ শেষে সবাই যান পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া এলাকায় স্থাপিত কনটেইনার ও সোলারভিত্তিক মিনি কোল্ড স্টোরেজ পরিদর্শনে। সেখানে ফুলকপি, কাঁচামরিচ, লাউ, বিটরুট ও ব্রোকলি সংরক্ষণের দৃশ্য চোখে পড়ে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় এই প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই তাদের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনছে।
স্থানীয় কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আগে দাম কম থাকলে সবজি নষ্ট হয়ে যেত। এখন কোল্ড স্টোরেজে রেখে ভালো সময়ে বিক্রি করতে পারছি। আমাদের জন্য এটা খুব উপকারে আসছে। এমন কোল্ড স্টোরেজ আরও হলে কৃষক সত্যিই লাভবান হবে।”
























