শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে ২০০ গৃহকর্মী নিয়ে 'গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম'র অভিষেক

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: গৃহকর্মে নিয়োজিত বাংলাদেশের ২৫ লক্ষাধিক গৃহকর্মীকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তি ও 'শ্রমিক' হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে 'গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম' এর পথচলা শুরু হয়েছে। আজ সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের সহযোগিতায় ও দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) এর বাস্তবায়নে ঢাকার ২০০ গৃহকর্মীকে নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ফোরামের ঘোষণা দেওয়া হয়।

ফোরামটি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে গৃহকর্মীদের অধিকার আদায়, গৃহকর্মীদের জন্য ২০১৫ সালের সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা বাস্তবায়ন,

গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতন ও হয়রানি প্রতিরোধ ও গৃহকর্মীদের শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে 'শ্রমিক' হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে তৃণমূল থেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত কাজ করবে। 'সুনীতি' প্রকল্পের অধীনে ২০০ সদস্যের এই ফোরামটি ২১ জনের একটি কমিটি নিয়ে ১৬ হাজার গৃহকর্মীকে কাজ করবে এবং ক্রমশ দেশব্যাপী তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।

'গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম' সভাপতি গৃহকর্মী জাকিয়া সুলতানা বলেন, 'আমাদের মূল দাবি দেশের সকল গৃহকর্মীকে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক করে 'শ্রমিক' হিসেবে স্বীকৃতি। এমনকি দেশে ঠিক কত নারী গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োজিত, তার সঠিক তথ্য-উপাত্তও নেই। গৃহকর্মী জাতীয় ফোরাম রাষ্ট্রের কাছে এইসব দাবি নিয়ে কাজ করবে। এই ফোরাম সকল গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় কাজ করবো।'

ডিএসকে এর নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহ বলেন, 'সুনীতি প্রকল্প থাকুক আর না থাকুক গৃহকর্মীদের সুরক্ষায়, তাদের নির্যাতন আর নিগ্রহের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে আমরা প্রতি বছর গৃহকর্মীদের নিয়ে সম্মেলন করবো। শ্রম আইনে তাদের অন্তর্ভুক্তির আন্দোলন আমরা চালিয়ে যাবো।'

অন্যদিকে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, শ্রমিক হিসেবে 'স্বীকৃতি' প্রদানের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'এই ফোরামের মাধ্যমে যে ১৬ হাজার গৃহকর্মীদের সাথে আমরা সম্পৃক্ত হচ্ছি, তারা নিজেদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে। আমরা বিশ্বাস করি, এখানকার সফলতা অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করবে। চা-বাগানের শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করবে, নারী মৎস্যজীবিদের উদ্বুদ্ধ করবে।'

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে গৃহকর্মীদের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে ২৫ লক্ষাধিক মানুষ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন, যাদের ৯০% নারী। অনানুষ্ঠানিক খাতের এই বিশাল কর্মীরা জাতীয় অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখলেও, 'শ্রমিক' হিসেবে তারা বাংলাদেশ শ্রম আইনে এখনও অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি। ফলে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। ২০২২ সালে অক্সফ্যামের একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, নারী সদস্যদের প্রায় ৯৩% তাদের কর্মক্ষেত্রে নির্যতান ও হয়রানির শিকার হন। গৃহকর্মীদের ৬৭% মানসিক নির্যাতন, ৬১% মৌখিক নির্যাতন এবং ২১% শারিরীক নির্যাতনের শিকার হন।

দেশের গৃহকর্মীদের শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ২০২০ সালে সুনীতি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে অক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ, ডিএসকে, কর্মজীবি নারীসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থা। ইতোমধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পেশায় নিয়োজিত প্রায় ১৮,০০০ নারী গৃহকর্মীদের পেশাগত ও জীবন দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সার্বিক জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে প্রকল্পটি।

অনুষ্ঠানে গৃহকর্মীরা ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবুল হোসেন, সমন্বয়ক, ডোমেস্টিক ওয়াকার্স রাইটস্ নেটওয়ার্ক; ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের নির্বাহী পরিচালক রোকসানা সুলতানা; মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।