এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশের মাছচাষ এখন আর শুধু উৎপাদনের গল্প নয় এটি নিরাপদ খাদ্য ও টেকসই উন্নয়নের এক আন্দোলন। তবে এই টেকসই পথের মূলভিত্তি একটি শব্দেই বাঁধা, আর সেটি হলো “Ecological Balance”, অর্থাৎ পুকুরের পরিবেশগত ভারসাম্য। পুকুরের পানি, মাটি, শৈবাল, প্ল্যাঙ্কটন, ব্যাকটেরিয়া ও মাছ সব মিলেই গড়ে ওঠে এক জীবন্ত ইকোসিস্টেম, যা ঠিকভাবে বজায় থাকলে পুকুর নিজেই হয়ে ওঠে এক প্রাকৃতিক উৎপাদন কারখানা।
কেন ইকোলজিক্যাল ব্যালান্স জরুরি?
কৃষিবিদ গোলাম সারোয়ার তোফায়েল, সহকারী ব্যবস্থাপক (মৎস্য), আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ময়মনসিংহ বলেন, “পুকুরে প্রতিদিন নানা জৈব-রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে।” মাছের মল ও অবশিষ্ট খাবার থেকে তৈরি হয় অ্যামোনিয়া (NH₃), যা ব্যাকটেরিয়া রূপান্তর করে নাইট্রাইট (NO₂⁻) ও নাইট্রেট (NO₃⁻)-এ। শৈবাল ও প্ল্যাঙ্কটন এই নাইট্রেট ব্যবহার করে বৃদ্ধি পায় এবং দিনে অক্সিজেন উৎপাদন করে, আবার রাতে মাছ ও শৈবাল উভয়েই অক্সিজেন গ্রহণ করে। এই প্রতিদিনের নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন চক্রই পুকুরের ভারসাম্য ধরে রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত খাবার, দূষণ বা রাসায়নিক ব্যবহার এই চক্রে ব্যাঘাত ঘটালে পানির মান নষ্ট হয়, মাছ খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা মারা যায়।
ব্যবস্থাপনা ও টেকসই পদ্ধতি:
টেকসই মাছচাষে সফলতার চাবিকাঠি হলো পানির মান রক্ষা, জৈব ও প্রোবায়োটিক ব্যবস্থাপনা, এবং একই পুকুরে বিভিন্ন স্তরের খাদ্যগ্রহণকারী প্রজাতির চাষ। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, তলানির স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট ও ক্লাইমেট-স্মার্ট একোয়াকালচার প্রযুক্তি গ্রহণ করাও অপরিহার্য।
গবেষক–মৎস্যচাষী–ভোক্তা: টেকসই ভবিষ্যতের ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক
গবেষকরা নতুন মাইক্রোবিয়াল কালচার, বায়োফ্লক ও ইকো-ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণার তথ্য সহজভাবে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেবেন। মৎস্যচাষীরা নিয়মিত পানি পরীক্ষা, সঠিক ফিডিং ও প্রোবায়োটিক ব্যবহার করে Biofloc বা IMTA প্রযুক্তি প্রয়োগ করবেন। আর ভোক্তারা অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত, নিরাপদ মাছ বেছে নিয়ে টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করবেন।
শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও সচেতনতা এই তিনের সম্মিলনেই গড়ে উঠবে টেকসই জলজ ভবিষ্যৎ। যেমনটি কৃষিবিদ গোলাম সারোয়ার তোফায়েল সুন্দরভাবে বলেছেন, “টেকসই মাছ চাষ কেবল লাভ নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্যনিরাপত্তার বিনিয়োগ।”