কৃষিতে প্লাস্টিক মালচিং-এর হুমকি

সমীরণ বিশ্বাস:বর্তমানে কৃষিতে ফলন বৃদ্ধি, আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও রোগ-পোকা দমনের জন্য মালচিং পদ্ধতির ব্যবহার ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে উদ্বেগজনকভাবে কৃষকরা অধিকহারে অজৈব পলি বা প্লাস্টিক মালচিং, বিশেষ করে পলি বা পলিথিনজাত মালচিং ব্যবহার করছেন। কারণ হিসেবে এর তুলনামূলকভাবে কম মূল্য, সহজলভ্যতা ও তাৎক্ষণিক ফলনের উন্নতি অন্যতম। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে মারাত্মক পরিবেশ ও কৃষি হুমকি।

প্লাস্টিক মালচিং ব্যবহারে মাটিতে সূর্যের আলো ও বাতাস প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হয়, ফলে মাটির স্বাভাবিক জৈব গঠন বিনষ্ট হয় এবং কেঁচো বা উপকারী মাইক্রোঅর্গানিজম ধ্বংস হয়ে যায়। এই অজৈব পদার্থগুলো সহজে পচে না এবং জমিতে থেকে থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। জলাবদ্ধতা, জমির উর্বরতা হ্রাস এবং কৃষিপণ্যে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা ঢুকে পড়ার মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও সৃষ্টি হয়। এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এখনই কঠোর নীতিমালা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট কৃষি দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের উচিত কৃষিজমিতে প্লাস্টিক মালচিং বিক্রি ও ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণমূলক আইন প্রণয়ন ও কার্যকর নজরদারি চালু করা। একইসাথে কৃষকদের মাঝে জৈব মালচিং বা বায়োডিগ্রেডেবল মালচিং-এর ব্যবহার ও সুবিধা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। যেমন খড়, ধানের খোসা, গাছের ছাল, পচনশীল কাগজ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক পদার্থ দিয়ে তৈরি মালচিং মাটিকে সুরক্ষা দেয় এবং পরিবেশেরও ক্ষতি করে না। অতএব, কৃষকের বর্তমান চাহিদার দিক বিবেচনা করেই টেকসই কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় এখনই বিকল্প এবং নিরাপদ মালচিং ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়া জরুরি।

মালচিং পেপার হচ্ছে একটি কৃষি সহায়ক উপাদান, যা মাটির ওপরে ঢেকে দিয়ে উদ্ভিদের চারপাশের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি আগাছা দমন, মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, মাটির উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ, এবং রোগ-বালাই কমাতে সাহায্য করে।

মালচিং পেপার মূলত দুই ধরনের:

জৈব মালচিং: খড়, শুকনো পাতা, কচুরিপানা, নারকেলের ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে তৈরি। পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপার (Mulching Paper) : বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় এবং এটি কৃষিতে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা, আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও ফলন বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপারগুলো মূলত বায়োডিগ্রেডেবল (জৈব-অবক্ষয়যোগ্য) উপাদান দিয়ে তৈরি, যা ৩-৬ মাসে মাটিতে মিশে মাটিতে মিশে যায় এবং পরিবেশের ক্ষতি করে না। পরিবেশবান্ধব মালচিং পেপারের ধরন : বায়োডিগ্রেডেবল মালচিং পেপার। ভুট্টা, আলু, গমের স্টার্চ, সেলুলোজ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। মাটিতে জৈব সারের মতো মিশে যায়। ক্রাফট মালচিং পেপার: পাট বা কাগজজাত ফাইবার থেকে তৈরি। পানিতে দ্রুত সরে যায় এবং পরিবেশে ক্ষতি করে না। কো-টিংকৃত বায়ো ফিল্ম মালচ : পেপারের উপর প্রাকৃতিক তেল বা কোলয়েডাল কোটিং থাকে, যা পানিরোধকতা বাড়ায়।

অজৈব মালচিং: পলি (প্লাস্টিক) দিয়ে তৈরি মালচিং পেপার। বর্তমানে ব্যবহৃত বেশিরভাগ মালচিং পেপারই পলি পেপার জাতীয় (প্লাস্টিক) উপাদান দিয়ে তৈরি। রঙ: কালো, রূপালি, সাদা-কালো দুই পাশে রঙ করা ইত্যাদি এটি সাধারণত পলি পেপার-এর মতো দেখতে হলেও এটি বিশেষভাবে কৃষির জন্য প্রস্তুত করা হয়। ক্ষয়প্রবণতা, শত বছরেও নষ্ট হয় না। দূষণ সৃষ্টি করে। অপসারণ দরকার।

কোথায় পাওয়া যায় পরিবেশবান্ধব মালচিং : বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI)। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন: ACI Agribusiness, Ispahani Agro, BRAC Agro, Online e-commerce (Daraz, Evaly, etc.)

মালচিংএ কৃষি ও কৃষকদের উপকারিতা: পানি কম লাগে , আগাছা কমে যায়, মাটির গঠন ও জৈব পদার্থ উন্নত হয়, ফসলের মান ও উৎপাদন বাড়ে, আগাছা জন্মাতে দেয় না, সেচের প্রয়োজন কমে, ফলন বাড়ে ও গুণগত মান ভালো হয়, রোগ-বালাই কম হয়, মাটির পুষ্টি ধরে রাখে।

লেখক:কৃষি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ , ঢাকা।