এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেছেন, বাংলাদেশের মৎস্য খাত আমাদের জাতীয় অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং গ্রামীণ জীবিকার অন্যতম উৎস। সাসটেইনেবল ফিশারিজ বিষয়টি শুধু একাডেমিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আমাদের জাতীয় উন্নয়ন কৌশলেরও অবিচ্ছেদ্য অংশ।সময় এসেছে আমাদের মাছের জাত উন্নয়ন, আহরণ ও বিপণন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার। আধুনিক গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আমাদের মাছের উৎপাদন ও মান উন্নত করতে হবে।দুঃখজনক হলেও সত্য, শিল্পাঞ্চল ও নগরায়ণের কারণে আমাদের জলাশয়, নদী ও হাওর এলাকায় মাছের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মাছ সংরক্ষণ আইন আছে, তবে এর আরও কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। কেবল আইন করলেই চলবে না, এর বাস্তবায়নে প্রশাসন, স্থানীয় সরকার এবং জনগণের সমন্বিত ভূমিকা অত্যন্ত জরুরী। জনগণের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য মাছের উৎপাদন করা দরকার। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় করতে হবে। মৎস্য, পরিবেশ, পানি উন্নয়ন ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সকলকেই একসাথে কাজ না করলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হবেনা।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে তিন দিন ব্যাপী ৩য় ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর সাসটেইনেবল ফিশারিজ (আইসিএসএফ) শীর্ষক সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদীয় ডিন এবং আইসিএসএফ এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নির্মল চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম. মাহবুব-ই-ইলাহী, সিকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (সাউরেস) পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইকবাল, আইসিএসএফ এর সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।
প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে সিকৃবি ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম বলেন, মাছ আমাদের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস। সিলেট অঞ্চলে মৎস্যচাষের সম্ভাবনা অপরিসীম। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে মাছ চাষে এক নতুন বিপ্লব ঘটাতে হবে।
আমাদেরকে নিরাপদ মাছের অভয়ারণ্য তৈরি করতে হবে। মাছ যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশে অবাধে বেড়ে উঠতে পারে, সেজন্য এসব অভয়ারণ্যকে আইনগতভাবে সুরক্ষিত করা জরুরী। এটি শুধু আমাদের বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি টেকসই সম্পদ হয়ে থাকবে। মাছের উৎপাদনের পথে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। একটি লাইভ জিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে আমাদের স্থানীয় ও দেশীয় প্রজাতির জেনেটিক সম্পদ সংরক্ষিত থাকে। মৎস্যচাষে অনুমোদনহীন পেস্টিসাইড ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করার পাশাপাশি বায়োপেষ্টিসাইড ব্যবহার বাড়ানোসহ হরমোনের ব্যবহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। কারণ নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের সাথে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরাসরি সম্পর্কিত।
আমরা যদি একযোগে কাজ করি, তবে মানুষের জন্য অধিকতর মাছের উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারবো এবং বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ মাছ উৎপাদনশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবো।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের আরো বলেন, আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ বাংলাদেশের গৌরব। ইলিশ আহরণ ও সংরক্ষণে জেলেদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে যার মাধ্যমে দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে প্রকৃত জেলেরা রক্ষা পাবে।
আমাদের লক্ষ শুধু মাছের উৎপাদন নয়, বরং জনগণকে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার পৌঁছে দেওয়া। এজন্য সরকার ইতিমধ্যে ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা টেকসই মৎস্য ব্যবস্থাপনা, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও গবেষণায় বিনিয়োগ করছি। পাশাপাশি আগামী ৩ মাসের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১ হাজারেরও অধিক শুণ্যপদ পুরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি হাওর অঞ্চলের কথা উল্লেখ করে বলেন, হাওরের জীববৈচিত্র্য আজ বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রিত হাউজ ভোট বা বাঁধ নির্মাণের কারণে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং বৈজ্ঞানিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। মৎস্যখাতকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহার, আইনের কঠোর প্রয়োগ ও প্রশাসনিক সমন্বয়, জেলে ও কৃষকের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণা কেন্দ্র ও উন্নয়ন সংস্থার সক্রিয় সহযোগিতায় দেশে একটি টেকসই ও নিরাপদ মৎস্যখাত গড়ে তুলা সম্ভব হবে। আজকের এই বৈজ্ঞানিক সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান, গবেষণা ও সুপারিশ আমাদের জাতীয় উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।