মেঘের আড়ালে গা ভাসাই, চল বন্ধু বৃক্ষ লাগাই

বাকৃবি প্রতিনিধি:আকাশে জমেছে ঘন কালো মেঘ, থেমে থেমে বৃষ্টি আর বিজলির ঝলক সব মিলিয়ে জানান দিচ্ছে, বর্ষা এসে গেছে। কেউ বর্ষার এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটছেন পাহাড়, ঝরনা কিংবা হাওরের সান্নিধ্যে। কেউ আবার ব্যস্ত বৃষ্টিবিলাস আর পিঠা উৎসবে। তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ব‌্যতিক্রমী একদল তরুণ বর্ষাকে বরণ করছেন আসুন পরিবেশকে বাঁচায়, প্রকৃতিকে সাজায় সোগ্লা‌নে।

'মেঘের আড়ালে গা ভাসাই' শিরোনামের এক ব্যতিক্রমধর্মী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় এমন আয়োজন করেছে বাকৃ‌বির পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস। বর্ষার নতুন প্রাণকে আহ্বান জানানো আর পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে এই আয়োজন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবেশবান্ধব নানা প্রজাতির দেড় শতাধিক বৃক্ষের চারা বিতরণ করা হয়। চারাগুলোর মধ্যে ছিল—নিম, পেয়ারা, ক্যাকটাস, লাকি ব্যাম্বু, নিয়ন, অঞ্জলা, ব্রাজিল কচু, ব্রককামি, ক্রোটন, ড্রাসিনা, মা‌নি প্লান্ট, এবং সাকুলেন্টসহ নানা ফলজ ও শোভাবর্ধক গাছ।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল বাউল গান, আধুনিক গান, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি এবং আরও নান্দনিক উপস্থাপনা। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ছিল ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ, জিতলে একটি গাছের চারা এবং একটি প্লাস্টিকের বোতলের বদলে দেওয়া হচ্ছে একটি গাছ!

এই পর্বে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছিলেন। গাছ হাতে পাওয়া বিজয়ীদের মুখে ছিল অনাবিল হাসি। এই প‌র্বে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, “এ রকম উদ্যোগ সত্যিই ব্যতিক্রম ও প্রাণচঞ্চল। এক পাশে গান-বাজনা, অন্য পাশে গাছ বিতরণ সব মিলিয়ে প্রাণ প্রকৃতিকে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি। গাছের কাছে থাকলে মন ভালো থাকে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুল হক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ূন কবির, গ্রীন ভয়েস বাকৃবি শাখার প্রধান সমন্বয়ক ও জেনেটিক্স অ্যান্ড প্লান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক আলমগীর কবির। এছাড়াও সংগঠনের সদস্য, বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাকৃবি শাখার গ্রীন ভয়েস সভাপতি ইফরান ইউসুফ শিহাব জানান, ‘মেঘের আড়ালে গা ভাসাই’ অনুষ্ঠানটি শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং প্রকৃতিকে ভালোবাসা ও রক্ষার আহ্বান জানাতেই এই আয়োজন। আমরা চাই, মানুষ যেন গাছ রোপণের প্রতি আগ্রহী হয় এবং পরিবেশকে নতুন করে অনুভব করে। সারা বিশ্বে প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ বেড়েই চলেছে। এগুলো খাদ্যচক্রের মাধ্যমে উদ্ভিদ ও প্রাণীর কোষে জমা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে তা মানুষের দেহেও প্রবেশ করছে। এতে ক্যান্সারসহ নানা জটিল শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক নিঃসন্দেহে মানবজাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বাকৃবি ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, “গ্রীন ভয়েসের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে মানুষ গাছ লাগাতে উৎসাহিত হবে এবং দেশের বনভূমি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করতে আগ্রহী।”