মানবকল্যাণে ঐক্যের আহ্বান: রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রালের নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে সমাজসেবা ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে আরও সুসংগঠিত ও গতিশীল করতে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রালের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় রাজশাহী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের কনফারেন্স রুমে ক্লাবের পঞ্চম ইনস্টলেশন সেরিমনি অনুষ্ঠিত হয়।

বর্ণাঢ্য ও উৎসবমুখর এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ক্লাবটি তার পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ করে এবং রোটারি ২০২৫-২৬ বছরের প্রতিপাদ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয় ‘ঐক্যবদ্ধ’ থিম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, রোটারি একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংগঠন, যার শক্তি হলো ঐক্য ও সেবার মানসিকতা। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবিক উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রাল যেভাবে ধারাবাহিকভাবে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি নতুন কমিটির মাধ্যমে এই কার্যক্রম আরও বিস্তৃত ও কার্যকর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান শিউলি হাসানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন প্রেসিডেন্ট রোটারিয়ান মো. মিজানুর রহমান। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বলেন, ঐক্য ও সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই নতুন কমিটির প্রধান অগ্রাধিকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সহায়তার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ আরও জোরদার করা হবে। তিনি সকল সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ’ থিম শুধু একটি স্লোগান নয়, এটি একটি দর্শন। এই দর্শনের মাধ্যমে ক্লাবের সদস্যদের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মানবিক উন্নয়নে সম্মিলিত উদ্যোগ জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, সামাজিক বিভাজন ও বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে ঐক্যের শক্তিই পারে মানবকল্যাণমূলক কাজকে টেকসই করতে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী‌ সেন্ট্রালের পরিচালক রোটারিয়ান প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রোটারি ইন্টারন্যাশনাল জোন-৫ এর ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর রোটারিয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন, রোটারিয়ান মো. ফখরুল ইসলাম, রোটারিয়ান মো. ওয়াসিকুর রহমান, লায়ন ড. কাজী কামাল আহমেদ, রাজশাহী টিটিসির প্রিন্সিপাল মো. নাজমুল হক, রোটারি পাবলিক ইমেজের পরিচালক ড. মো. গোলাম মাওলা এবং রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন।

অনুষ্ঠানে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান মো. শরিফুল হক ও বিগত বছরের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান আতিকুর রহমান ক্লাবের গত চার বছরের অর্জন ও চলমান কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি জানান, রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা সহায়তা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচি এবং দুর্যোগকালীন সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রাল নেতৃবৃন্দ জানান, নতুন রোটারি বছরে ‘ঐক্যবদ্ধ’ থিমের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরে সেবা পৌঁছে দেওয়াই তাদের মূল প্রত্যয়। সম্মিলিত উদ্যোগ ও মানবিক চেতনার মধ্য দিয়ে রাজশাহীসহ বৃহত্তর অঞ্চলে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গঠনে তারা কাজ করে যাবেন।

ইনস্টলেশন সেরিমনির অংশ হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে দু’জন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আল আরাফা ক্লিনিকে চাকরির অফার লেটার প্রদান করা হয়, যা উপস্থিত অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং ব্যাপক প্রশংসা পায়।

অনুষ্ঠানে সামাজিক সম্প্রীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য লায়ন ড. এম এ মান্নানকে “রোটারি ক্লাব প্রেসিডেন্ট লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করা হয়। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. শাওকাত হোসেনকে “ক্লাব এনভায়রনমেন্টাল অ্যাওয়ার্ড” দেওয়া হয়। সম্মাননা পেয়ে এমএ মান্নান বলেন, এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতে সমাজ ও পরিবেশের জন্য আরও কাজ করতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ক্লাবে নতুন তিন সদস্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে প্রত্যাশা আইডিয়াল একাডেমির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মালিহা মাহজাবিন সামাহকে পুরস্কৃত করা হয়। এতে শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়।