নানা আয়োজনে রাজশাহীতে নারী মৎস্যচাষীদের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: রাজশাহীর তানোরে "অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি" প্রতিপাদ্য নিয়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ সোমবার ১৮ আগস্ট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব লিয়াকত সালমান, এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব মোহাঃ বাবুল হোসেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এফএইচ এর দেড় শতাধিক নারী মৎস্যচাষী, মৎস্যজীবী, খামারী এবং উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে র‍্যালী শেষে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা শেষে নারীর আত্নকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহযোগিতার জন্য এফএইচ এসোসিয়েশন কে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

মূলত ২০২২ সাল হতে আন্তর্জাতিক সেচ্ছাসেবী সংস্থা "ফুড ফর দ্যা হাংরির" সহযোগিতায় তানোর-গোদাগাড়ী উপজেলায় সরাসরি নারীর অংশ গ্রহণে মাছ চাষ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

প্রকল্প কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল কাশেম জানান, মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ মাছ চাষে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দৈনিক গড় চাহিদার বিপরীতে জনপ্রতি ৬৮ গ্রাম মাছ খাচ্ছে। কিন্তু গরীব, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও আদিবাসী শ্রেণির মানুষজন চাহিদা অনুযায়ী মাছ খেতে পারছে না। তাই মাছ চাষে নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে পুষ্টি চাহিদা পুরণ ও বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে এফএইচ ২০২২ সাল হতে তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় ৩৬ টি গ্রুপে প্রায় ৮০০ শতাধিক নারী উদ্দ্যোক্তাদের মাছ চাষ কার্যক্রমে সহযোগিতা করে আসছে। এ বিষয়ে সংস্থার টেকনিক্যাল অফিসার আবুল কাশেম বলেন, আমরা নারীদের আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং প্রথমবার মাছ চাষের উপকরণ দিয়েছি। তারা এখন পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন এবং প্রায় ৫ টনের মতো মাছ খেয়েছেন। এছাড়াও তারা পুকুর পাড়ে এবং বসতবাড়ির অব্যবহারিত জমিতে শাক সবজি উৎপাদন করছেন।

তিনি আরো বলেন, বছর ব্যাপী যেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী মাছ হতে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে; এজন্য শুটকি, সিদল ও চ্যাপা তৈরি এবং লবন দিয়ে মাছ সংরক্ষনের উপর ২০০ শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নারী উদ্দ্যোক্তারা মাছ হতে বিভিন্ন ধরনের মৎস্যজাত পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করছেন।

প্রকল্প কর্মকর্তা আরো বলেন, রাজশাহী বরেন্দ্রভূমি হওয়ায় মাছ চাষে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। তাই আমরা পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে স্বল্প স্থানে জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষ শুরু করেছি।

প্রকল্প কর্মকর্তা আরো বলেন, মাছ চাষে নারীদের অনেক সমস্যাও আছে যেমন: পুকুরের লীজ মূল্য বেশি, গভীর রাতে মাছ ধরা, ভোরে মাছের আড়ৎ এবং মন প্রতি ৮-১০ কেজি মাছ ধলন হিসেবে গ্রহন, দূর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সামাজিক কিছু সমস্যাও রয়েছে। তবে এসব সমস্যা পাশ কাটিয়ে আমাদের নারী উদ্দ্যোক্তারা তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে।

প্রকল্পের এরিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ মাসুদ রানা বলেন, আমাদের এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যেসব দাতা সংস্থা অনুদান দিতো তারা ধিরে ধিরে অর্থায়ন বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই এখন আমাদের স্থানীয় ফান্ডিং ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ।